বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : একজন আমেরিকান উদ্ভাবক ও চিত্রশিল্পী স্যামুয়েল এফবি মোর্স। প্রথম জীবনে চিত্রশিল্পী হিসেবে সুনাম লাভের পর তিনি ইউরোপীয় টেলিগ্রাফব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে এক-তার বিশিষ্ট টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেন। মোর্স কোডের উন্নয়নে তিনি ভূমিকা রাখেন। তার হাত ধরেই টেলিগ্রাফ ব্যবহারের প্রসার ঘটে।
১৮৩২ সালে জাহাজে করে ইউরোপ থেকে আমেরিকা ফেরার পথে মোর্সের সাথে বস্টন অধিবাসী চার্লস টমাস জ্যাকসনের দেখা হয়। জ্যাকসন তড়িচ্চুম্বকত্ব বিষয়ে অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন। তড়িচ্চুম্বকের উপর কৃত জ্যাকসনের পরীক্ষাগুলো পর্যবেক্ষণ করে মোর্স এক তারবিশিষ্ট টেলিগ্রাফ উদ্ভাবন করেন। মোর্স পেটেন্ট অধিকার দাবি করার জন্য যে টেলিগ্রাফ যন্ত্র পাঠান, সেটি স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউটের আমেরিকান ইতিহাস জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। এসময় তিনি মোর্স কোড আবিষ্কার করেন, যেটি টেলিগ্রাফের প্রাথমিক ভাষা। তথ্যের ছন্দীয় সঞ্চালনে আজও মোর্স কোড ব্যবহৃত হয়।
তবে মোর্স ১০০ গজের অধিক দূরত্বে টেলিগ্রাফিক সংকেত প্রেরণে সমস্যার সম্মুখীন হন। নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক লিওনার্দ গ্যালের সাহায্যে তিনি অতিরিক্ত বর্তনী বা রিলে যুক্ত করে ১০ মাইল বা ১৬ কিলোমিটার দূরত্বেও বার্তা পাঠাতে সক্ষম হন।
মোর্স টেলিগ্রাফ তারের জন্য গবেষণার বিষয়ে অর্থায়নের জন্য ওয়াশিংটন ডিসি গিয়েছিলেন। কিন্তু তখন প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহে ব্যর্থ হন তিনি। ইউরোপ গমন করার পর জানতে পারেন, বিজ্ঞানী কুক ও হুইটস্টোন ইতোমধ্যেই নিজেদের গবেষণার জন্য অর্থ সংগ্রহে সক্ষম হয়েছেন। এরপর মোর্স যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান । সেখানে মেইন অঙ্গরাজ্যের সাংসদ ফ্রান্সিস ওরমান্ড জোনাথন স্মিথের সহায়তায় মোর্স ফেডারেল সরকারের অর্থায়ন লাভ করেন।
স্যামুয়েল এফবি মোর্স ১৭৯১ সালের ২৭ এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের চার্লসটাউন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ধর্মযাজক ও ভূগোলবিদ জেডিডায়ে মোর্স এবং এলিজাবেথ অ্যান ফিনলি ব্রিজের প্রথম সন্তান। তার পিতা ক্যালভিনিস্ট সম্প্রদায়ের অনুসারী ও আমেরিকান ফেডার্যালিস্ট পার্টির সমর্থক ছিলেন। জেডিডা বিশ্বাস করতেন, ক্যালভিনিস্ট সম্প্রদায়ের পক্ষে সংস্কারপন্থী ঐতিহ্য বজায় রাখা সম্ভব হবে। এছাড়াও তিনি যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফেডার্যালিস্ট পার্টির মিত্রতাপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। জেডিডা শক্তিশালী এককেন্দ্রিক সরকারব্যবস্থায় বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি তার সন্তান স্যামুয়েলের অন্তঃকরণে ফেডার্যালিস্ট ভাবধারা ও ক্যালভিনিস্ট মূল্যবোধের শিকড় প্রোথিত করেছিলেন। মোর্সদের প্রথম আমেরিকান পূর্বসূরির নাম-ও ‘স্যামুয়েল মোর্স’, যিনি ১৬৩৫ সালে ম্যাসাচুসেটসের ডেডহ্যাম শহরে থাকতেন।
ম্যাসাচুসেটসের অ্যান্ডওভার শহরের ফিলিপস একাডেমিতে প্রাথমিক শিক্ষালাভের পর ইয়েল কলেজে মোর্স লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে গমন করেন। সেখানে তিনি ধর্মীয় দর্শন, গণিত ও অশ্ববিজ্ঞানের উপর পড়াশোনা করেন। ইয়েলে পড়াকালীন মোর্স বেঞ্জামিন সিলিম্যান ও জেরেমিয়াহ ডে প্রদত্ত বিদ্যুতের উপর ভাষণগুলো নিয়মিত শুনতেন। এছাড়াও তিনি ‘ব্রাদার্স ইন ইউনিটি’ নামে গুপ্তসংগঠনের সদস্য ছিলেন। ১৮১০ সালে তিনি ইয়েল থেকে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৮৭২ সালের ২ এপ্রিল মারা যান এই উদ্ভাবক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।