লাইফস্টাইল ডেস্ক : সোনার ওজন পরিমাপের ক্ষেত্রে “ভরি” একটি প্রচলিত একক, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। তবে অনেকেই জানেন না, এক ভরি সোনা আসলে কত গ্রাম হয়ে থাকে।
এক ভরি সোনা কত গ্রাম?
আন্তর্জাতিক মান অনুসারে, এক ভরি সোনা সমান ১১.৬৬৪ গ্রাম। এটি বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে স্বীকৃত একটি নির্ধারিত পরিমাপ।
সোনার ওজন পরিমাপে অন্যান্য একক :
- ১ গ্রাম = ০.০৮৫৭৩ ভরি
- ১ আনা = ১.৪৫৮ গ্রাম
- ১ রতি = ০.১২২ গ্রাম
স্বর্ণ: এক চিরন্তন মূল্যবান ধাতু
স্বর্ণ পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান ধাতুগুলোর মধ্যে একটি। এটি শুধু অলংকার তৈরিতে ব্যবহৃত হয় না, বরং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবেও পরিচিত। স্বর্ণের ইতিহাস হাজার হাজার বছরের পুরনো, এবং এটি আজও মানুষের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
এক ভরিতে কত গ্রাম স্বর্ণ হয়?
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে স্বর্ণের ওজন পরিমাপের জন্য ‘ভরি’ (ভারি) এককটি ব্যবহৃত হয়। আন্তর্জাতিকভাবে সাধারণত ‘গ্রাম’ বা ‘ট্রয় আউন্স’ ব্যবহৃত হয়।
✅ ১ ভরি = ১১.৬৬ গ্রাম স্বর্ণ
এছাড়া, ১ গ্রাম স্বর্ণ ০.০৮৫৭ ভরি হয়। অর্থাৎ, যদি কেউ ৫ ভরি স্বর্ণ কিনতে চান, তাহলে সেটি হবে ৫ × ১১.৬৬ = ৫৮.৩৩ গ্রাম।
স্বর্ণের মূল্য কীভাবে পরিবর্তিত হয়?
স্বর্ণের মূল্য প্রতিদিন পরিবর্তিত হয় এবং এটি আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল। নিচের কিছু প্রধান কারণ স্বর্ণের মূল্যের ওঠানামার জন্য দায়ী:
- আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা ও যোগান: যখন স্বর্ণের চাহিদা বেশি থাকে এবং সরবরাহ কম থাকে, তখন স্বর্ণের দাম বেড়ে যায়।
- মুদ্রাস্ফীতি: যখন মুদ্রার মূল্য কমে যায়, তখন বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণের দিকে ঝোঁকে, ফলে স্বর্ণের দাম বাড়ে।
- মার্কিন ডলারের মূল্য: স্বর্ণের দাম সাধারণত মার্কিন ডলারের বিপরীতে নির্ধারিত হয়। ডলারের মান কমে গেলে স্বর্ণের দাম বাড়ে এবং উল্টোটা হলে কমে।
- বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা: যখন কোনো দেশে অর্থনৈতিক সংকট বা যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন মানুষ স্বর্ণের দিকে বিনিয়োগ করে, ফলে স্বর্ণের দাম বেড়ে যায়।
- কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বর্ণ ক্রয়: অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বর্ণ ক্রয় করে তাদের রিজার্ভ শক্তিশালী করার জন্য। যখন তারা বেশি স্বর্ণ কেনে, তখন এর মূল্য বেড়ে যায়।
স্বর্ণ কেনার আগে কী কী জানা উচিত?
স্বর্ণ কেনার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখা দরকার। ভুল সিদ্ধান্ত নিলে ঠকতে পারেন, তাই নিচের বিষয়গুলো জেনে নেওয়া জরুরি:
- বিশুদ্ধতা যাচাই করুন: স্বর্ণ সাধারণত ২৪ ক্যারেট, ২২ ক্যারেট, ২১ ক্যারেট এবং ১৮ ক্যারেট হয়ে থাকে।
- ২৪ ক্যারেট: এটি একদম খাঁটি স্বর্ণ (৯৯.৯% বিশুদ্ধ)। তবে এটি নরম হওয়ায় অলংকার তৈরিতে ব্যবহার করা হয় না।
- ২২ ক্যারেট: এতে ৯১.৬% স্বর্ণ থাকে। অলংকারের জন্য এটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।
- ২১ ও ১৮ ক্যারেট: এগুলোতে যথাক্রমে ৮৭.৫% এবং ৭৫% স্বর্ণ থাকে। অলংকার ও অন্যান্য শিল্পকর্মে ব্যবহার করা হয়।
- হলমার্ক দেখে কিনুন:
- বাংলাদেশে BSTI হলমার্কযুক্ত স্বর্ণ কিনতে হবে। এতে স্বর্ণের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত হয়।
- অন্যান্য দেশে BIS (ভারত), LBMA (লন্ডন) হলমার্ক দেখে কিনুন।
- মূল্য যাচাই করুন:
- স্বর্ণ কেনার আগে প্রতিদিনের বাজারমূল্য জেনে নিন।
- বিভিন্ন দোকানে দাম তুলনা করে নিন।
- মেকিং চার্জ ও ওয়েস্টেজ চার্জ বুঝুন:
- অলংকার তৈরির জন্য স্বর্ণের সাথে কিছু চার্জ যুক্ত করা হয়, যা বিভিন্ন দোকানে আলাদা হতে পারে।
- নগদ টাকা ও রিসিট নিন:
- স্বর্ণ কেনার পরে অবশ্যই ক্রয়ের রসিদ নিন, যাতে ভবিষ্যতে বিক্রি করতে গেলে কোনো সমস্যা না হয়।
স্বর্ণে বিনিয়োগ করার সঠিক উপায়
স্বর্ণ শুধু অলংকার নয়, বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ মাধ্যমও। নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য স্বর্ণ কেনার কিছু কৌশল রয়েছে:
- ফিজিক্যাল গোল্ড (Physical Gold):
- স্বর্ণের বার ও কয়েন কিনুন।
- অলংকার কেনার বদলে বার বা কয়েন বিনিয়োগ করুন, কারণ এতে মেকিং চার্জ কম থাকে।
- গোল্ড ETF (Exchange Traded Fund):
- এটি একটি আধুনিক বিনিয়োগ পদ্ধতি যেখানে স্বর্ণ কিনতে হয় না, বরং শেয়ার মার্কেটের মাধ্যমে স্বর্ণে বিনিয়োগ করা যায়।
- ডিজিটাল গোল্ড:
- বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে (Paytm Gold, PhonePe Gold, Google Pay Gold) ডিজিটাল স্বর্ণ কেনা যায়।
- গোল্ড মিউচুয়াল ফান্ড:
- যারা সরাসরি স্বর্ণ কিনতে চান না, তারা গোল্ড মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন।
- গোল্ড বন্ড (Gold Bonds):
- সরকার অনেক সময় স্বর্ণের বন্ড ইস্যু করে, যেখানে নির্দিষ্ট সময় পর স্বর্ণের সমপরিমাণ টাকা ফেরত পাওয়া যায়।
উপসংহার
স্বর্ণ শুধুমাত্র সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, এটি একটি শক্তিশালী বিনিয়োগ মাধ্যম। এক ভরি স্বর্ণ ১১.৬৬ গ্রাম হয়, এবং স্বর্ণ কেনার সময় অবশ্যই বিশুদ্ধতা ও বাজারমূল্য যাচাই করতে হবে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অলংকারের বদলে স্বর্ণের বার, ডিজিটাল গোল্ড, বা ETF-এ বিনিয়োগ করাই বেশি লাভজনক। তাই সঠিক তথ্য জেনে-বুঝে স্বর্ণ কিনুন এবং দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ পরিকল্পনা করুন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।