বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : এক বছরে বিশ্বে ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের নন-ফানজিবল টোকেন (এনএফটি) চুরি হয়েছে। ২০২১ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত সময়ে এই চুরি সংঘটিত হয়েছে।
গবেষণার তথ্যানুযায়ী, প্রতিটি সাইবার হামলার মাধ্যমে আক্রমণকারীরা গড়ে ৩ লাখ ডলার আয় করেছে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইলিপটিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আক্রমণকারীরা বিভিন্ন উপায়ে মূল্যবান এনএফটি চুরি করেছে। নন-ফানজিবল টোকেন বা এনএফটি হচ্ছে এক ধরনের ক্রিপ্টোসম্পদ, যেটি যেকোনও ধরনের বিশেষ ডিজিটাল পণ্যের মালিকানা প্রকাশ করে। প্রায়ই এটি বিশেষ ভার্চুয়াল শিল্পকর্ম হয়ে থাকে। ইলিপটিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালের নভেম্বরে ৪ লাখ ৯০ হাজার ডলারে ক্রিপ্টোপাংক বিক্রি করে আক্রমণকারীরা। এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মূল্যের এনএফটি।
অন্যদিকে আক্রমণের একক ভুক্তভোগী হিসেবে ২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর ১৬টি ব্লু চিপ এনএফটি চুরি হয়, যেগুলোর মোট মূল্য ছিল ২১ লাখ ডলারের কাছাকাছি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্রমাগত আক্রমণের অংশ হিসেবে তিন মাসের ব্যবধানে ক্লোনএক্সের দুটি এনএফটি দু’বার চুরি হয়েছে। দুটি ভিন্ন আক্রমণে এটি হলেও প্রতিবারই আক্রমণকারীরা ৫০ হাজার ডলার করে আয় করেছে।
সাইবার হামলার মধ্যে অন্যতম একটি ধরন হলো ফিশিং স্ক্যাম। এটি ব্যবহারকারীদের ফাঁদে ফেলার মাধ্যমে অনিচ্ছাকৃতভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেটে নিজেদের ক্রিডেনশিয়াল হস্তান্তর করে দেয়। এ তথ্যের মাধ্যমে একজন আক্রমণকারী অপরিবর্তনযোগ্য লেনদেন করতে সক্ষম হয়।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করেও এনএফটি চুরি করা সম্ভব হয়। ইয়ুগা ল্যাবের বোরড এইপ ইয়াট ক্লাব থেকে ৩০ লাখ ডলার মূল্যের এনএফটি চুরিতে ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা হয়েছিল। কখনো কখনো ডোমেইন স্কোয়াটিং বা ছদ্মবেশ ধারণের মাধ্যমেও হামলা পরিচালিত হয়।
বিভিন্ন প্রযুক্তি জায়ান্টের সার্চ ইঞ্জিনে বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য স্ক্যামাররা অর্থ দেয় বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ যারা ছদ্মবেশে এনএফটি প্লাটফর্মের সন্ধান করে তাদের সার্চ রেজাল্টের ওপরে ফিশিং লিংক থাকে। তবে অন্যান্য স্ক্যাম বা আক্রমণের ধরনগুলো এনএফটি খাতে আরও বিচিত্র।
ট্রোজান হর্স এনএফটি সাধারণত স্মার্ট কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে ফাঁদ তৈরি করে। ব্যবহারকারী একবার সেটি অনুমোদন দিলে তা সহজেই অ্যাকাউন্টের তথ্য হাতিয়ে নিতে পারবে। এনএফটি সোয়াপ বা পরিবর্তনে স্ক্যামের ক্ষেত্রে একই নাম, ছবি ব্যবহার করে দামি এনএফটির মতো ডিজিটাল সম্পদ তৈরি করা হয়। কিন্তু এর ভেতর কোনো কিছু থাকে না। কেউ এটিতে ক্লিক করার পর ভেতরে খালি দেখতে পায়।
অন্যদিকে মাইক্রোব্লগিং প্লাটফর্ম টুইটারে প্রথম টুইট, কার্টুন বানর থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভিডিও ক্লিপস গত বছর নন-ফানজিবল টোকেন বা এনএফটি হিসেবে বিক্রি হয়েছে।
মার্কেট ট্র্যাকার ড্যাপরাডারের উপাত্তে দেখা গেছে, ২০২১ সালে এ ডিজিটাল অ্যাসেট বিক্রি আড়াই হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। এর আগের বছর এনএফটি বিক্রি হয়েছিল যেখানে ৯ কোটি ৪৯ লাখ ডলার, ২০২১ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ১৬০ কোটি ডলার এনএফটি বিক্রি হয়েছে। গত বছর কোকা-কোলা ও গুচির মতো বিশ্বের শীর্ষ ব্র্যান্ডও এনএফটি বিক্রি শুরু করেছে।
টুইটারের পর শতাধিক দেশে এনএফটি ফিচার চালুর উদ্যোগ নিয়েছিল মেটা মালিকানাধীন ইনস্টাগ্রাম। গত মে মাসে পরীক্ষামূলকভাবে চালুর পর বর্তমানে আফ্রিকা, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, মধ্যপ্রাচ্য ও আমেরিকার শতাধিক দেশে এ ফিচার উন্মুক্ত হচ্ছে। শুরুতে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অল্প কিছু নির্মাতার জন্য এনএফটি সুবিধা চালু হয়েছিল।
ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীরা এখন থেকে তাদের ফিড ও মেসেজে এনএফটি ব্যবহার করতে পারবে। এছাড়া তাদের স্টোরিজে অগমেন্টেড রিয়ালিটি (এআর) স্টিকার্স ব্যবহার করতে পারবে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, রয়টার্স
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।