জুমবাংলা ডেস্ক : লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে বিদেশ যেতে ইচ্ছুকদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার প্রলোভনে দেড় শতাধিক ব্যক্তির থেকে প্রায় ১ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে মানবকল্যাণ সংস্থা (এমকেএস) নামের একটি এনজিও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। গত ১৫ দিনে এসব টাকা তোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভুগীরা। প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০-৫০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত মানবকল্যাণ সংস্থার (এমকেএস) সরকারি রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। রেজিস্ট্রেশন নম্বর এ-১১৫৭০ (৭৮৫)। প্রশিক্ষণ ও মানবকল্যাণ কেন্দ্র নাম দিয়ে রামগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের শেখপুরা বাজারের দক্ষিণে একটি নির্জন মার্কেটে তাঁদের কার্যালয় রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গতকাল সোমবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সংস্থাটির শেখপুরা প্রকল্প কার্যালয়ের সামনে ভুক্তভুগীরা ভিড় করছিলেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৫ দিন আগে ৪-৫ জন পুরুষ ও এক মহিলা এসে তাঁদের সন্তানদের বিদেশ যেতে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার কথা বলেন। এর জন্য প্রথমে তাঁদের সংস্থায় সপ্তাহে ২০০ টাকা জমার একটি সঞ্চয়পত্র খুলতে বলেন।
সঞ্চয়পত্র খোলার পর যাঁরা তাঁদের থেকে ঋণ নিতে ইচ্ছুক তাঁদের প্রতি লাখের জন্য ১০ হাজার করে টাকা জমা দিতে বলেন। এতে বিশ্বাস করে ও লোভে পড়ে ১০০-১৫০ জন ব্যক্তি ১০ থেকে ৫০ হাজার করে টাকা জমা দেন। গতকাল সোমবার তাঁদের ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। টাকা জমা দেওয়া ব্যক্তিরা সোমবার সংস্থাটির কার্যালয়ে গিয়ে দেখতে পান তালা দেওয়া। কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ।
এমকেএস সংস্থায় টাকা জমা দেওয়া ব্যক্তিরা হলেন কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কাওয়ালিডাঙ্গা ডেঙ্গুর বাড়ির ফাতেমা বেগম (২০ হাজার), ফাতেমা বেগম (৩০ হাজার), মোহন আলম (১৫ হাজার), পশ্চিমবিঘা গোদার বাড়ির জান্নাতুল ফেরদৌস (৪০ হাজার), একই বাড়ির শিল্পী আক্তার (২০ হাজার), পূর্ব বিঘা জগি বাড়ির আমেনা বেগম (২০ হাজার), শামছুর নাহার (২০ হাজার), পূর্ব বিঘা খন্দকার বাড়ির মমিন হোসেন (২৯ হাজার), সাথি আক্তারের (১২ হাজার), জলিল মিয়া (৩০ হাজার), ফাতেমা আক্তার (১৫ হাজার), পূর্ব শেখপুরা সৈয়দ আলী ব্যাপারী বাড়ির মোরশেদ আলম সোহাগ (১৮ হাজার), নোয়াগাঁও গ্রামের মালেক হাজী বাড়ির মো. আল আমিন (৪০ হাজার), সোনাপুর খলিফা বাড়ির জামাল হোসেন (৮ হাজার), পাশের ফরিদগঞ্জ উপজেলার শাফা গ্রামের জয়নাল আবদিন (১৭ হাজার), খলিলুর রহমান (২০ হাজার), তাসলিমা আক্তার (২০ হাজার), মিন্টু মিয়া (৩০ হাজার), রাজিব হোসেন (৩০ হাজার) টাকাসহ দেড় শতাধিক গ্রাহক।
ভুক্তভুগীরা বলেন, ‘গত ১৫ দিন আগ থেকে আমাদের সবাইকে আজ সোমবার ঋণ দেবে বলে খবর দেওয়া হয়। আমরা অফিসে এসে দেখি অফিসের মেইন গেটে তালা মারা। সংস্থার কর্মকর্তা আতিক স্যার, আছমা ম্যাডামসহ সকলের মোবাইল বন্ধ। আমরা অল্প সুদে এখান থেকে ঋণ পাওয়ার আশায় অন্য সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে টাকা দিয়েছি। এখন আমরা সর্বস্ব হারিয়েছি। আমরা এখন কী করব জানি না, চোখে অন্ধকার দেখছি।’
স্থানীয় ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বলেন, ‘এ বাড়িটি একই এলাকার মৃত আবদুল কাদের মিয়ার। তাঁর স্ত্রী ও ছোট একটি মেয়ে ছাড়া পরিবারের আর কেউ নেই। কীভাবে বাড়িটি ওই এনজিও সংস্থা ভাড়া নিয়েছেন আমরা তা জানি না। তবে গত ১৫-২০ দিন আগে লক্ষ্মীপুর থেকে কয়েকজন লোক এসে মালামাল রেখে যান এখানে। তাঁরা পরে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চুক্তি করবেন বলে জানালেও এখন তাঁদের সবার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে।’
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান রামগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ময়নাল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসলেও এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত করতে পারিনি। তবে সঞ্চয়পত্রে দেওয়া কর্মকর্তাদের নাম ও মোবাইল নম্বর নিয়ে ঘটনা উদ্ঘাটনে চেষ্টা করব।’
এ বিষয়ে রামগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন জানান, ‘এনজিও সংস্থার ব্যাপারে আমাদের কোনো তদারকি নেই। এ ছাড়া এনজিও ব্যুরো ঢাকার মাধ্যমে ঋণদান বা এনজিও সংস্থাগুলো অনুমোদন পায়।’
রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. শারমিন ইসলাম জানান, ‘এদের লাইসেন্স নম্বরটি ভুয়া হতে পারে। গোপনে অফিস স্থাপন করে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে অনেক টাকা হাতিয়ে নেওয়ার খবর বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি। প্রতারকদের শনাক্ত করা না গেলে বা সাধারণ মানুষ সচেতন না হলে এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে জনগণ।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।