বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : সময়টা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের। একের পর এক সুবিধা নিয়ে আসছে এই এআই। মানবজীবন আরও সহজ করে দিচ্ছে। আসলেই কি সহজ করে দিচ্ছে? আসলেই কি সুবিধা দিচ্ছে?
এসব প্রশ্ন বারবার আসছে। বিজ্ঞান আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ, এই তর্ক এক সময় বেশ জনপ্রিয় ছিল। এবার এআই নিয়ে এমনই তর্ক শুরু হয়েছে। আর এই তর্ক আরও উসকে দিচ্ছে ‘ডিপফেক’।
এআইয়ের মাধ্যমে তৈরি ছবি ও ভিডিও দিয়ে অন্যকে বিপদে ফেলছেন অনেকে। এর শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে তারকারা পর্যন্ত। সম্প্রতি দক্ষিণী অভিনেত্রী রাশ্মিকা মান্দানা, বলিউডের কাজল ও আলিয়া ভাটের ভুয়া ভিডিও ভাইরাল হয়। এসব ভিডিও তৈরি হয়েছে ডিপফেক দিয়ে।
কী এই ডিপফেক?
ডিপফেক মূলত এআইয়ের একটি ধরন। ছবি, অডিও ও ভিডিও তৈরিতে ব্যবহার করা হয় এই প্রযুক্তি। এক্সিসটিং সোর্সকে সরিয়ে বা সোয়াইপ করে নতুন কিছু বসাতে পারদর্শী ডিপফেক এআই। অর্থাৎ এর মাধ্যমে আপনার মুখের জায়গায় অনায়াসেই ব্যবহার করা যাবে অন্য কোনো ব্যক্তির মুখ। এছাড়া অন্যদের আপত্তিকর ভিডিওতে বসানো যাবে আপনার মুখ।
কয়েকটি উপায়ে ডিপফেক ভিডিও চেনা যাবে। তবে সবাই তো এসব উপায় জানেন না। এ কারণে পার্থক্যও তৈরি করতে পারেন না। এতে অনেকেই সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন।
এআই দিয়ে বানানো ভিডিও চিনবেন যেভাবেএআই দিয়ে বানানো ভিডিও চিনবেন যেভাবে
সামাজিক মাধ্যমে ডিপফেকের মাধ্যমে এমন হয়রানি এড়াতে বেশ কিছু টিপস দিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
টিপসগুলো হলো—
১. কী শেয়ার দিচ্ছেন: নিয়মিত চেক করুন: সামাজিক মাধ্যমে ছবি ও ভিডিও শেয়ার করার সময় সতর্ক থাকুন। এত বেশি ভিডিও ও ছবি শেয়ার না করাই ভালো। শেয়ার করার পরিমাণ নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখুন। আর শেয়ার করার সময় সর্বোচ্চ প্রাইভেসি দিন। প্রাইভেসি সেটিং ব্যবহার করতে হবে। তাতে সবচেয়ে বেশি নিরাপদ থাকার অপশন ব্যবহার করুন।
২. শক্তিশালী পাসওয়ার্ড: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিরাপদ থাকতে হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার। ডিপফেক থেকে বাঁচতেও প্রতিটি সামাজিক মাধ্যমের আইডির পাসওয়ার্ড শক্তিশালী রাখবেন। এছাড়া নিয়মিত এসব পাসওয়ার্ড বদলানোও উচিত।
৩. অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার: মোবাইলে ম্যালওয়ার হামলা এখন আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এ কারণে নিয়মিত আপনার ডেটা ও অনলাইন অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখার চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে ভালো কোনো অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। তাতে সাইবার অপরাধীরা সহজে তথ্য পাবে না।
৪. আসল ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ওয়াটারমার্ক ব্যবহার: ছবি ও ভিডিওর ক্ষেত্রে আসল ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ওয়াটারমার্ক হতে পারে দারুণ সমাধান। সাধারণত বিভিন্ন তথ্য চুরি ঠেকাতে এই পন্থা ব্যবহার করা হলেও ডিপফেক থেকে বাঁচতে এটি বেশ কার্যকর।
৫. মেটাডেটা ম্যানেজমেন্ট: কোনো ছবি ও তথ্য শেয়ারের সময় মেটাডেটা ম্যানেজমেন্ট খুব জরুরি। শেয়ার দেওয়া তথ্যগুলো আপডেট করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে শেয়ারের তারিখ, লোকেশন ও কপিরাইট ওনারশিপ।
৬. সচেতনতা: ডিপফেকের ব্যাপারে অবগত থাকতে হবে। পাশাপাশি অন্যদেরও সতর্ক করতে হবে। এভাবে সবার মাঝে এই তথ্য ছড়িয়ে দিতে পারলে এমন হয়রানিও কমানো যাবে। তবে তথ্যগুলো ভেরিফায়েড উৎস থেকে নিতে হবে।
৭. অনলাইন অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখুন: হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে যে আইডি রয়েছে, সেগুলো টু–ফ্যাক্টর অথেন্টিফিকেশন সিস্টেমে রাখবেন। এতে কেউ সহজে এই তথ্য পাবে না।
৮. ব্যবসায়িক কার্যক্রম: ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে মাল্টি–স্টেপ অথেন্টিফিকেশন সিস্টেম রাখতে হবে। আর এতে নিয়মিত পরিবর্তন আনতে হবে। করতে হবে আপডেট।
৯. কনটেন্ট সোর্স: সাইবার নিরাপত্তার পাশাপাশি কোন জায়গা থেকে কনটেন্ট নিচ্ছেন, সেটিও জরুরি। ছবি ও ভিডিও পেলেই তা সত্যি বলে ধরে নেবেন না, সেটি কোন সোর্সের, তাও দেখতে হবে। দ্বিধা থাকলে সার্চ দিয়ে আসল জিনিস বের করুন।
১০. ভিডিওতে সতর্কতা: সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও দেওয়ার সময় একই ধরনের ভিডিও না দেওয়া ভালো। মুখ ও ঠোঁটের অভিব্যক্তি বদলাতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।