খোলা আকাশের নিচে পড়ালেখা করে সুবিধাবঞ্চিত ১০৫ শিশু

জুমবাংলা ডেস্ক : মিরসরাই উপজেলার উপকূলে অবস্থিত গজারিয়া আর ডোমখালী গ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় খোলা আকাশের নিচে ঘাসের চাদরে বসে পড়ালেখা করে ১০৫ জন শিশু। বঙ্গোপসাগরের মিরসরাই উপকূলের অবহেলিত দুটি গ্রাম গজারিয়া আর ডোমখালীর বাসিন্দা তারা। এই দুই গ্রামের বেড়িবাঁধ এলাকার অধিকাংশ শিশু শিক্ষা-স্বাস্থ্য আর চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত ছিল। পিছিয়ে পড়া এসব জনগোষ্ঠীর শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ২০১৩ সালে স্থানীয় শিক্ষিত কয়েক জন যুবক প্রতিষ্ঠা করেন ‘সোনালী স্বপ্ন’ পাঠশালা।

সুবিধাবঞ্চিত মাত্র ১৪ জন শিশুকে নিয়ে বেড়িবাঁধের পরিত্যাক্ত একটি ঘরে শুরু হয় পাঠদান। স্থানীয় কিছু দুর্বৃত্ত সেটিও ভেঙে দেয়। সেই থেকে খোলা আকাশের নিচে চলে তাদের পাঠদান। খোলা আকাশের নিচে শিশুদের পড়ানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বর্ষাকালে বেশ অসুবিধায় পড়তে হয় তাদের। এখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের বেশ প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ থেকে পানির স্রোতে মিরসরাই উপকূলে ভেসে আসে জীবিত-মৃত শত শত মানুষ। বেঁচে যাওয়া মানুষেরা সময়ের ব্যবধানে উপকূলীয় বেড়িবাঁধের দুই পাশে গড়ে তোলে জনবসতি। তাদের সঙ্গে স্থানীয় দরিদ্র লোকজনও সরকারি এই জায়গায় নিজেদের মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করে নেয়। সাগরে মাছ ধরে আর বন থেকে কাঠ সংগ্রহ করে এসব মানুষের অন্ন-বস্ত্রের ব্যবস্থা হলেও শিক্ষার আলোবঞ্চিত ছিল তাদের ঘরে থাকা শিশুরা।

এক যুগ আগে শিক্ষার সুযোগবঞ্চিত অসহায় এসব শিশুর জন্য উন্মুক্ত স্থানে ‘সোনালি স্বপ্ন’ নামের একটি অস্থায়ী বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করা হয়। যার নেতৃত্ব দেন ইকবাল হোসেন নামের এক যুবক। উপকূলের বেড়িবাঁধ এলাকায় নারকেলগাছের ছায়ায় পরিচালিত চালিত বিদ্যালয়টি পরিচিত হয়ে ওঠে ‘গাছতলার বিদ্যালয়’ নামে। ইকবালের সেই বিদ্যালয়ে এখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা শতাধিক। উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের গজারিয়া গ্রামের উপকূলীয় বেড়িবাঁধ এলাকায় অবস্থিত বিদ্যালয়টি।

সম্প্রতি সরেজমিনে বেড়িবাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাঁধের পাশে নারকেলগাছের নিচে ঘাসের ওপর বই নিয়ে পড়তে বসেছে ৫০-৬০ জন শিশু। তাদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে বই হাতে পড়াচ্ছিলেন ইকবাল হোসেন। কথা হয় শিক্ষক ইকবালের সঙ্গে। এমন ব্যতিক্রমী বিদ্যালয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে স্মৃতির ঝাঁপি খুলে দেন তিনি। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মাত্র ১৪ জন শিশু নিয়ে বেড়িবাঁধ এলাকায় অস্থায়ী বিদ্যালয়টির যাত্রা শুরু হয় বলে জানান ইকবাল।

তিনি বলেন, অবকাঠামো না থাকায় গাছতলায় ঘাসের ওপর বসে পড়ালেখা করে শিশুরা। শুক্র ও শনিবার সপ্তাহে দুই দিন ক্লাস নেওয়া হয়। উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে সহায়তা, পোশাক ও শিক্ষাসামগ্রীর ব্যবস্থাও করা হয় তার বিদ্যালয় থেকে। এ কাজে ইকবাল সহায়তা পান স্থানীয় শিক্ষা অনুরাগী ও সচেতন নানা সংগঠন থেকে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যাংক কর্মকর্তা মইনুল হোসেন বলেন, ‘সাহেরখালী বেড়িবাঁধ এলাকায় ইকবাল হোসেনের স্বেচ্ছাশ্রমে পরিচালিত বিদ্যালয়টি এলাকায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ইকবালের অক্লান্ত শ্রমে এলাকার শিশুরা এখন শিক্ষার আলোয় আলোকিত হচ্ছে। নানাভাবে আমরাও তার এই উদ্যোগের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করি। এখন সেখানে স্থায়ীভাবে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা সময়ের দাবি।’

মিরসরাই উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম ফজলুল হক বলেন, সাহেরখালী ইউনিয়নের উপকূলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করব। কোনো সমাজসেবক বা দানবীর যদি জমি কিনে দেন, তাহলে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সুপারিশ করা হবে।

মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন বলেন, ‘উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের গজারিয়া এলাকায় উপকূলীয় অঞ্চলে স্বেচ্ছাশ্রমে পরিচালিত ইকবাল হোসেনের অস্থায়ী বিদ্যালয়টি সম্পর্কে জানি। শিশুদের বিদ্যালয়মুখী করতে তার এ দায়িত্বশীল উদ্যোগ প্রশংসনীয়। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেশ কয়েক বার বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের শীতবস্ত্র ও শিক্ষাসামগ্রী দিয়েছি আমরা। সেখানে স্থায়ীভাবে একটি বিদ্যালয় করতে কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করা হবে।’