আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপদেশ ভানুয়াতু। সেখানে চালু হয়েছে ‘মি. প্রিন্স’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কার্যক্রম। আর তাতে যুক্ত হতে পারলেই কাড়ি কাড়ি টাকা। এমন স্বপ্ন দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে দেশটিতে নিয়ে যাওয়া হয় ১০৭ বাংলাদেশিকে। কিন্তু যাওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরেই ক্রীতদাসের জীবন কাটাতে হচ্ছে তাঁদের। অনেকে পালিয়ে বাঁচলেও বাকিরা পারছেন না বের হতে।
একটি সংঘবদ্ধ পাচারচক্রের কবলে পড়াদের একজন মোস্তাফিজুর শাহীন। তাঁর গল্পটাই এক প্রতিবেদনে বলেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। শনিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে পাচার চক্রের একজন হিসেবে সুমনের নাম বলা হয়।
দালালেরা বলেছিলেন, ভানুয়াতু পৌঁছা মাত্রই এসব লোকদের বিজনেস কার্ড দেওয়া হবে। এই কার্ড পেলে তাঁদের ভাগ্য বদলে যাবে। ভানুয়াতু পৌঁছার পর তাঁরা বুঝতে পারেন, এসব ভুয়া। তাঁদের নিয়ে কাজ করানো হয়, কিন্তু কোনো অর্থ দেওয়া হয় না। ভালো খাবার দেওয়া তো দূরের কথা, কোনো বেলা খাবারই পেতেন না। নির্যাতনের শিকার হতেন।
সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে এমনটাই জানিয়েছেন সেখান থেকে পালিয়ে আসা মোস্তাফিজুর শাহীন। বাংলাদেশে ব্যবসা করতেন ৫০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি। তাঁর ব্যবসা ভালোই চলছিল। এরপরও বিদেশে গিয়ে ব্যবসায়িক পার্টনার হতে চেয়েছিলেন। সুমন নামের দালাল তাঁকে প্রলোভন দেখান। ‘মি. প্রিন্স’নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সংবাদ ভানুয়াতুর একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, সেটিও দেখানো হয় শাহীনকে।
এটি ২০১৭-১৮ সালের ঘটনা। বুটিক ব্যবসার পার্টনার হতে চেয়েছিলেন মোস্তাফিজুর শাহীন। এ জন্য দালালদের কয়েক লাখ টাকা দেন। এরপর বিদেশে গিয়ে দেখেন পুরোটাই ভাওতা। ভানুয়াতুর রাজধানী পোর্ট ভিলাতে নামার পরই কেড়ে নেওয়া হয় পাসপোর্ট। এক জায়গায় বন্দী করা হয়, যেতে দেওয়া হয়নি কোথাও।
শাহীনকে সমুদ্র উপকূলের একটি বাংলোতে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। বেশিরভাগ সময় শুধু বাঁধাকপি আর ভাত দেওয়া হতো। সেখানে তিনি স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারতেন না। শুধুমাত্র কোনো উৎসব আয়োজনে ভালো খাবার পেতেন।
২০২২ সালে সুমন, তাঁর স্ত্রী এবং দুই সহযোগীকে মানবপাচার, অর্থপাচার, হত্যার হুমকি, হামলা, লোকজনকে বন্দী করে কাজে বাধ্য করা এবং কর্মসংস্থান আইন লঙ্ঘনের জন্য দোষী সাব্যস্ত করেন ভানুয়াতুর পাবলিক প্রসিকিউটর।
ভানুয়াতুর চিফ জাস্টিস ভিনচেন্ট লুনাবেক বলেন, কীভাবে অসহায় লোকজনের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে, তা জানিয়েছে সুমন। তাঁদের গাছে ঝুলিয়েও পেটানো হতো। কখনো রাখা হতো ফ্রিজারে।
২০২২ সালের জুন মাসে সুমন, তাঁর স্ত্রী এবং অন্য দুই সহযোগীকে পাচার, দাসত্ব, অর্থপাচার, হামলা, হত্যার হুমকির জন্য সাজা দেওয়া হয়। সুমন এখনো ভানুয়াতুর কারাগারে রয়েছেন। তাকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাঁর স্ত্রী এবং দুই সহযোগীকেও ৭ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এই চার অপরাধীকে পাচার হওয়া ১০৭ বাংলাদেশি ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিতে মোট ১০ লাখের বেশি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সম্পূর্ণ অর্থ প্রদান করা হয়নি। বিচারের পর থেকে শাহিন ছাড়া বাকিরা সবাই বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন। শাহিনের জীবনের কষ্ট এখনো শেষ হয়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।