জুমবাংলা ডেস্ক : স্বাধীনতা ও প্রতিষ্ঠার ৫২ বছরে মোট ১১৩টি উচ্চফলনশীল (উফশী) আধুনিক ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি); যার ১০৫টি ইনব্রিড ও ৮টি হাইব্রিড জাত। এর মধ্যে লবণাক্ততা-সহনশীল ১০টি, রোপা আমন মৌসুমে খরাসহনশীল ৪টি, জলামগ্নতা-সহনশীল ৫টি, পুষ্টিসমৃদ্ধ ৬টি ও রপ্তানিযোগ্য জাত ৪টি। অপেক্ষাকৃত নতুন ও বিগত ১৪ বছরে (২০০৯ থেকে ২০২৩) উদ্ভাবিত ধানের জাত ৬০টি।
সম্প্রতি জাতীয় বীজ বোর্ড এ প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত ৪টি নতুন উফশী ধানের জাত অনুমোদন দিয়েছে। আউশ, আমন ও বোরো ধানের এসব জাতের মধ্যে আছে জিঙ্কসমৃদ্ধ ধানের জাত, অল্প জিআই সম্পন্ন জাত, সরু ও সুগন্ধি ধানের জাত, ডায়াবেটিক চালের জাত, হাইব্রিড জাত; বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও ঠান্ডা সহিষ্ণু ধানের জাত; জলমগ্নতা ও জলাবদ্ধতা সহিষ্ণু এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ ধানের জাত।
দেশের সব শ্রেণির মানুষের পছন্দ-অপছন্দ বিবেচনায় নিয়ে সব অঞ্চল ও আবহাওয়ার উপযোগী এসব জাত উদ্ভাবন করেছে ব্রি। জাতীয় বীজ বোর্ডের ১০৮তম সভায় আমনের নতুন জাত ব্রি ধান১০৩, বোরো মৌসুমের বাসমতী টাইপ সুগন্ধি জাত ব্রি ধান১০৪ ও ব্রি হাইব্রিড ধান৮ অনুমোদন করা হয়। সর্বশেষ ২ মার্চ অনুষ্ঠিত জাতীয় বীজ বোর্ডের ১০৯তম সভায় অনুমোদন করা হয় বোরো মৌসুমে চাষের উপযোগী কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) সম্পন্ন জাত ব্রি ধান১০৫ (ডায়াবেটিক ধান) ও রোপা আউশ মৌসুমের অলবণাক্ততা জোয়ার-ভাটা অঞ্চলের উপযোগী নতুন উচ্চফলনশীল ধানের জাত ব্রি ধান১০৬।
নতুন উদ্ভাবিত ব্রি ধান১০৩ : এটি আমন মৌসুমের জাত। ব্রি ধান২৯-এর সঙ্গে FL378 নামে একটি সারির সংকরায়ণ এবং পরবর্তীতে অ্যান্থার কালচার পদ্ধতি (জীবপ্রযুক্তি) ব্যবহার করে এ জাতটি উদ্ভাবন করা হয়। এ জাতটির পূর্ণবয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১২৫ সেমি। দানা লম্বা ও চিকন। ১ হাজার পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২৩.৭ গ্রাম। ধানে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৪%। এ জাতটির গড় জীবৎকাল ১৩২ দিন। গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ৬.২ টন। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে জাতটি প্রতি হেক্টরে ৮.০ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম।
লম্বা ও চিকন চালের সুগন্ধি জাত ব্রি ধান১০৪ : এ জাতে আধুনিক উফশী ধানের সব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। পূর্ণবয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ৯২ সেমি। জাতটির গড় জীবৎকাল ১৪৭ দিন। ১ হাজার পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ২১.৫ গ্রাম। এ জাতের ধান বাসমতী টাইপের তীব্র সুগন্ধিযুক্ত। এ ধানের দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৯.২ ভাগ। এ ছাড়া প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৮.৯ ভাগ এবং ভাত ঝরঝরে। প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষায় ১০টি অঞ্চলে ব্রি ধান৫০-এর চেয়ে ব্রি ধান১০৪-এর ফলন প্রায় ১১.৩৩% বেশি পাওয়া গেছে। শীর্ষ ছয় স্থানে এটি ব্রি ধান৫০-এর চেয়ে ১৭.৯৪% বেশি ফলন দিয়েছে। এ জাতটি বাসমতী টাইপের ব্রির একমাত্র সুগন্ধি ধানের জাত। এ জাতের হেক্টরে গড় ফলন ৭.২৯ টন। উপযুক্ত পরিবেশে সঠিক ব্যবস্থাপনা করলে জাতটি হেক্টরে ৮.৭১ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। ব্রি ধান১০৪-এ রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত জাতের চেয়ে অনেক কম হয়।
ডায়াবেটিক ধান ব্রি ধান১০৫ : এটি বোরো মৌসুমের একটি কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) সম্পন্ন ডায়াবেটিক ধান। ব্রি ধান১০৫-এর দানা মাঝারি লম্বা ও চিকন। জিআইয়ের মান ৫৫.০। সুতরাং কম জিআই হওয়ার কারণে এটি ডায়াবেটিক চাল হিসেবে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা লাভ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ব্রি ধান১০৫ পাকার পরও এর গাছ সবুজ থাকে। এ জাতের পূর্ণবয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১০১ সেমি। গড় ফলন হেক্টরে ৭.৬ টন। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে অনুকূল পরিবেশে হেক্টরপ্রতি ৮.৫ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। এ জাতের দানার আকার ও আকৃতি মাঝারি, সরু এবং রং সোনালি। এর জীবৎকাল ১৪৮ দিন। এ জাতের ১ হাজার ধানের দানার ওজন ১৯.৪ গ্রাম। ব্রি ধান১০৫-এর অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৭.০% ও প্রোটিন ৭.৩%। রান্না করা ভাত ঝরঝরে ও সুস্বাদু।
জোয়ার-ভাটা অঞ্চলের উপযোগী ব্রি ধান১০৬ : আউশ মৌসুমের অলবণাক্ততা জোয়ার-ভাটা অঞ্চলের উপযোগী উচ্চফলনশীল ধানের জাত। এ জাতের গাছের গোড়ায় ও ধানের দানার মাথায় বেগুনি রং বিদ্যমান। এর গড় উচ্চতা ১২৫ সেমি। গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ৪.৭৯ টন, যা অলবণাক্ততা জোয়ার-ভাটা অঞ্চলের জনপ্রিয় জাত ব্রি ধান২৭-এর চেয়ে শতকরা ১৭.৪ বেশি। তবে উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে ব্রি ধান১০৬-এর ফলন হেক্টরপ্রতি ৫.৪৯ টন পর্যন্ত পাওয়া যায়। নতুন এ জাতটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এটি ঢলে পড়া প্রতিরোধী। ফলে গাছ হেলে পড়ে না। ধানের দানা মাঝারি, মোটা ও সোনালি বর্ণের। এ জাতের গড় জীবৎকাল ১১৭ দিন। ১ হাজার পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ২৪.৫ গ্রাম। ধানের দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৭.২ এবং প্রোটিন ৮.৫%। এ ধানের ভাত ঝরঝরে।
১১ মেট্রিক টন ফলনের জাত ব্রি হাইব্রিড ধান ৮ : বোরো মৌসুমের উচ্চফলনশীল জাত। জাতটির ক্রস নম্বর বিআর২৮২২এইচ। গাছের উচ্চতা ১১০-১১৫ সেমি। প্রতি গোছায় গড় কুশির সংখ্যা ১০-১২টি। দানার পুষ্টতা ৮৮.৬%। জীবৎকাল ১৪৫-১৪৮ দিন। ফলন প্রতি হেক্টরে ১০.৫ থেকে ১১ মেট্রিক টন। বোরো মৌসুমে বীজ উৎপাদনের সক্ষমতা প্রতি হেক্টরে ১.৮ থেকে ২.২ মেট্রিক টন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।