ঢাকার নবাবি রত্নভাণ্ডারের অন্যতম অমূল্য হীরা দরিয়া-ই-নূর, যা ‘কোহিনূরের সহোদর’ নামে পরিচিত, ১১৭ বছর পর প্রকাশ্যে আসতে যাচ্ছে।
প্রায় ছয়-সাত বছর আগে দেশের কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে সাড়া ফেলে বলা হয়, দেশের সবচেয়ে মূল্যবান হীরা দরিয়া-ই-নূর দীর্ঘদিন ধরে ভল্ট থেকে গায়েব। বিষয়টি নিয়ে সতর্ক হয় সরকার।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটি বৈঠক ডেকে হীরার অবস্থান খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয়। বিভিন্ন সময় হীরাটি ব্যাংক থেকে ব্যাংকে স্থানান্তরিত হলেও বর্তমানে দরিয়া-ই-নূর সোনালী ব্যাংকের ভল্টে রয়েছে।
তবে হীরার হেফাজতে থাকা সোনালী ব্যাংক বা ভূমি সংস্কার বোর্ডের কর্মকর্তারাও কখনো সরাসরি হীরা দেখেননি। হীরার সঙ্গে আরও শতাধিক রত্নালঙ্কার থাকায় ভল্ট তিন দশক ধরে আনুষ্ঠানিকভাবে খোলা হয়নি। এতদিন পরে ভল্ট খোলার দায়িত্ব কাদের, তা নিয়েও জটিলতা ছিল। ফলে, নবাব পরিবারের প্রাচীন মালিকানা ও জাদুঘর কর্তৃপক্ষের অনুনয়-আপত্তি সত্ত্বেও হীরা নিরাপদে সোনালী ব্যাংকের অন্ধকার ভল্টে সংরক্ষিত রয়েছে।
১৯০৮ সালে ভল্টে রাখা এই হীরার অবস্থান ১৯৪৭ সালের দেশভাগ এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর অজানা ছিল। সরকারের নির্দেশে ভল্ট খোলার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত আলী খান জানান, ভল্ট এখনও সিলগালা অবস্থায় রয়েছে। যদিও বহু বছর আগে একটি পরিদর্শক দল এসেছে, তারা ভল্ট খোলেনি, কেবল ভল্ট রাখার কক্ষের দরজা খুলেছিল।
১১৭ বছর পর প্রকাশ্যে আসছে বাংলাদেশি দামি হীরা দরিয়া-ই-নূর
বিখ্যাত দরিয়া-ই-নূরের মূল বৈশিষ্ট্য হলো বিশুদ্ধতা এবং ঐতিহাসিক মূল্য। এর সঙ্গে অতিরিক্ত মুক্তা ও হীরা যুক্ত থাকত। ব্রিটিশ আমলে লাহোর দরবারে প্রদর্শিত হওয়ার সময়ও হীরার এই বিশেষত্ব উল্লেখ করা হয়েছে।
দরিয়া-ই-নূর ২৬ ক্যারেটের একটি টেবিলাকৃতির হীরা, যা কোহিনূরের নিকট আত্মীয়। এটি লাহোর থেকে পাঞ্জাবের শেষ বালক রাজা দিলীপ সিংয়ের মাধ্যমে একরকম প্রতারণার মাধ্যমে রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে পাঠানো হয়েছিল। বড় হীরেটি রানির পছন্দে বেশি ধরায় দরিয়া-ই-নূর ভারতে ফেরত আসে। ব্রিটিশরা হীরার কাটিং নিয়ে খুঁতখুঁতে হওয়ায় এর ওজন প্রায় অর্ধেকে নামানো হয়। ১৮৫২ সালে ভারত ফেরার পর নবাব পরিবারের খাজা আলিমুল্লাহ ৭৫ হাজার টাকায় নিলামে হীরাটি ক্রয় করেন।
পরে এটি বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংকে পৌঁছে। হীরাটি নবাবদের হাতে বাজুবন্ধ বা পাগড়ির অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
কথিত আছে, অপয়াখ্যাত কোহিনুরের মতো দরিয়া-ই-নূরও পাঞ্জাবের মহারাজা রণজিৎ সিংয়ের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। রণজিৎ সিং এই হীরাটিকে বাজুবন্ধে মিশিয়ে পরতেন, যা মিনা করা সোনার উপর স্থাপিত হীরার খণ্ডে সাজানো ছিল। নবাবদের হাতে আসার পর দরিয়া-ই-নূর কখনো বাজুবন্ধ, কখনো পাগড়িতে ব্যবহৃত হতো।
ঋণগ্রস্ত নবাব সলিমুল্লাহ ১৯০৮ সালে দরিয়া-ই-নূর সহ নবাব এস্টেট বন্ধক রাখেন, যা ভারতের ইম্পেরিয়াল ব্যাংক থেকে শুরু করে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশে সোনালী ব্যাংকের ভল্টে পৌঁছায়।
বর্তমানে দরিয়া-ই-নূর সোনালী ব্যাংকের ভল্টে রয়েছে। জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী জানান, বিভিন্ন সময় হীরাটি ব্যাংক থেকে ব্যাংকে স্থানান্তরিত হলেও এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা বজায় ছিল।
ভল্ট খোলার তারিখ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি, তবে দেশের সবচেয়ে মূল্যবান দামী এই হীরার পুনরায় প্রদর্শন প্রতীক্ষিত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।