জুমবাংলা ডেস্ক : ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের রোডসাইড মার্কেটে ১৩৭টি দোকান আছে। দোকানপ্রতি বিদ্যুৎ বিলের বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করছে দোকান মালিকদের সংগঠন ‘সততা ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড’।
বাণিজ্যিক এলাকায় বিদ্যুৎ বিল ইউনিটপ্রতি ১২ টাকা হলেও এখানে নেওয়া হয় ২২ টাকা। এখানকার দোকানগুলোর কাছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) পাওনা ২০ লাখ ২০ হাজার টাকা। অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রেখে গত ছয় বছরে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন সততা ব্যবসায়ী সমিতির কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তর ও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী দোকান মালিকরা।
দোকানের সার্ভিস চার্জ, বিদ্যুৎ বিলসহ যাবতীয় বিষয়ের দোকানভিত্তিক পর্যালোচনার জন্য ২০১৯ সালে সততা ব্যবসায়ী সমিতির দায়িত্ব দেওয়া হয় মো. করিম হোসেন মনাকে। কিন্তু দায়িত্ব পালন না করে বরং দোকান মালিকদের বোঝা হয়ে ওঠেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে ভাউচার তৈরি করে টাকা তোলা, টয়লেটের স্থানে দোকান তৈরি করে ভাড়া আদায় এবং উন্নয়নের নামে টাকা আদায় করা হলেও কোনো উন্নয়ন কাজ করত না সমিতি। গত ছয় বছরে মনা দোকান থেকে তোলা ১ কোটি ২০ লাখ টাকা মেরে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন দোকান মালিকরা।
ডিএমপি ও পুলিশ সদর দপ্তরে দেওয়া লিখিত অভিযোগে দোকান মালিকরা বলেন, মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক করিম হোসেন মনা, সহসভাপতি আমির হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক হিরু মিয়া ও ক্যাশিয়ার সোহেল দ্বীন মোহাম্মাদ যোগসাজশ করে সমিতির কার্যালয় অবৈধভাবে ব্যবহার করেন। মার্কেটের উন্নয়নের জন্য পাঁচটি দোকান রয়েছে। এসবের ভাড়া দিয়ে মার্কেটের উন্নয়ন কাজ করার কথা। কিন্তু তা না করে ওইসব দোকানের ভাড়া তারা নিজেরাই ভোগ করেন। মার্কেটের টয়লেট সংস্কার করার কথা থাকলেও সেখানে দোকান তৈরি করে সেসবের ভাড়া নিজেরাই ভোগ করেন। মার্কেটের বিদ্যুৎ বিল প্রতি ইউনিটে ১২ টাকা হলেও ২২ টাকা ধার্য করেছে মার্কেট সমিতি। গত ছয় বছরে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন তারা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ডিপিডিসির বিদ্যুৎ বিল পরিশোধই করা হয়নি। মার্কেটের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়েছে ২৪ লাখ টাকা।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মার্কেটের দোকান মালিকরা টাকা আত্মসাতের বিষয়ে জানতে চাইলে বা সমিতির কাছে হিসাব চাইলে তারা হিসাব তো দেয়ইনি, উল্টো তাদের ভয়ভীতি দেখিয়েছেন, হুমকি দিয়েছেন ওই সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনা। তার তিন ছেলে। তাদের প্রত্যেকের আলাদা সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। সেসব বাহিনীর মাধ্যমে মার্কেট নিয়ন্ত্রণ করেন মনা।
অভিযোগের বিষয়ে মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক কবির হোসেন মনা গণমাধ্যম কে বলেন, ‘২০১৯ সাল মার্কেটের দায়িত্ব দেওয়া হয় আমাকে। এর আগে যারা দায়িত্বে ছিল তারা প্রতি ইউনিটে ২৫ টাকা করে বিল নিত। তারা ১৫ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রেখেছে। এখন যে টাকা বকেয়া আছে, তা অল্প অল্প করে দেওয়া হচ্ছে। ব্যবসায়িক বিদ্যুৎ বিল এভাবেই দেওয়া হয়। আর অন্য যেসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট।’
দেখা গেছে, ঢাকা মেডিকেলকেন্দ্রিক মার্কেটটির বেশির ভাগ দোকান ওষুধপত্রের। রোগীর আসবাব ও মোটরসাইকেল পার্টসের দোকানও রয়েছে। দোকান মালিক সমিতি থাকলেও তেমন কোনো সেবা পান না দোকানের মালিকরা। বেশির ভাগ দোকান মালিকের অভিযোগ সমিতির লোকদের নিয়ে। সমিতির লোকজন টাকা নিয়ে বিদ্যুৎ বিল দেন না। বিদ্যুৎ বিলের টাকা বকেয়া রাখেন।
মার্কেটের ১২৪ নম্বর দোকান কুমিল্লা মেডিকেল হলের মালিক সুমন সরকার বলেন, ‘মার্কেটের সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু এখানে মালিক সমিতির কী কাজ আমার জানা নেই। তারা প্রতি মাসে টাকা নেয়। তবে দোকানের প্রয়োজনে কোনো কাজ করে না। বিদ্যুৎ বিল যা আসে তার চেয়ে বেশি টাকা দিতে হয়। তারপরও বকেয়া রাখেন সমিতির লোকজন। যে সমিতির মাধ্যমে আমাদের ক্ষতি হয়, সে সমিতি আমাদের কী কাজে লাগে?
এমন অভিযোগ মার্কেটের প্রায় দোকান মালিকেরই। ৬৯ জন দোকান মালিকের স্বাক্ষর করা একটি লিখিত অভিযোগে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
ডিপিডিসির নিয়ম অনুসারে বিদ্যুৎ বিল জমা দেওয়ার শেষ তারিখের পরও ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়। এরপর যদি বিল বকেয়া থাকে তাহলে বিদ্যুতের লাইন কেটে দেওয়া হয়। কিন্তু ওই মার্কেটের মালিক সমিতি দীর্ঘদিন বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রেখেছে।
মার্কেটের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার বিষয়ে ডিপিডিসির রমনা আঞ্চলিক অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. বসির আহম্মেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ওই মার্কেটের বিদ্যুৎ বিল বাবদ কিছু টাকা বকেয়া আছে। প্রতি মাসেই কিছু কিছু টাকা দেন মালিক সমিতির লোকজন। ব্যবসায়িক স্থান হওয়ায় লাইন কাটা হয়নি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।