জুমবাংলা ডেস্ক : কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপ একটি পর্যটন এলাকা। এখানে জমি কেনা-বেচা, হোটেল-রিসোর্ট কিংবা যে কোনো ধরনের ব্যবসা করতে গেলে প্রয়োজন হয় সেখানকার ১৩ পরিবারের সুদৃষ্টি। ১৩ পরিবারের যেকোনো একটির সুদৃষ্টি থাকলেই দ্বীপটিতে যেকোনো বৈধ-অবৈধ ব্যবসা করা যায়। বলতে গেলে ৫০ বছর ধরে সেন্টমার্টিন দ্বীপ শাসন করে আসছেন ওই ১৩ পরিবার। এসব অভিযোগ করেছেন সেখানকার ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা।
জানা গেছে, সেন্টমার্টিন দ্বীপের হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসার বেশির ভাগেরই মালিক ওই ১৩ পরিবারের সদস্যরা। তাদের একচেটিয়া ব্যবসার কারণে জিম্মি পর্যটকরা। পর্যটকদের কাছ থেকে যেমন ইচ্ছা তেমনভাবে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। পর্যটকরা কারও কাছে প্রতিকারও চাইতে পারছেন না।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, সেন্টমার্টিনের উন্নয়নে আমরা কাজ করছি। তবে কিছু সমস্যা রয়ে যাচ্ছে। দ্বীপে অবৈধভাবে কেউ যেন হোটেল-রিসোর্টসহ অন্যান্য স্থপনা নির্মাণ করতে না পারে সেদিকে আমাদের দৃষ্টি থাকে।
১৩ পরিবারের বিষয়ে তিনি বলেন, পরিবারগুলোর কর্তাব্যক্তিরা এখন আর কেউ বেঁচে নেই। তাদের স্বজনরা আছেন। তারা তাদের জায়গা-জমি কেনা-বেচা করেন।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সেন্টমার্টিনে পর্যকটদের নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাদের জিম্মি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পর্যটকরা কোনো সমস্যায় পড়লে তাৎক্ষণিক পুলিশকে অবহিত করার অনুরোধ জানান তিনি।
ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রতিদিন কয়েক হাজার পর্যটক আসা-যাওয়া করেন। এখানে যোগাযোগ, চিকিৎসা, শিক্ষা, নিরাপত্তাসহ অনেক সমস্যা রয়েছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হচ্ছে জাহাজভাড়া। তার সঙ্গে রয়েছে ঘাটে চাঁদাবাজি। বর্তমানে টেকনাফের দমদমিয়া থেকে জাহাজভাড়া যাওয়া-আসা জন প্রতি ১২০০ টাকা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গুনতে হয় তিন হাজার টাকা। এছাড়া ঘাটের ইজারাও বেশি আদায় করা হচ্ছে। সেন্টমার্টিন থেকে ছেড়াদ্বীপে যাওয়ার ভাড়াও বেশি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্পিডবোটচালক বলেন, এখানে স্থানীয় নেতাদের প্রতি মাসে চাঁদা দিতে হয়। ওই ১৩ পরিবারের কেউ না কেউ চাঁদা তোলেন। তারা নিজেদের শ্রমিক লীগের নেতাকর্মী দাবি করেন। চাঁদার কারণে পর্যটকদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নিতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ওই ১৩ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে প্রভাবশালীদের ইন্ধন রয়েছে। এখানে জায়গা কেনা-বেচা বা ব্যবসা করতে হলে তাদের অনুমতি নিতে হয়।
তাদের মধ্যে এক ব্যবসায়ী জানান, বছর-তিনেক আগে সেন্টমার্টিন বাজারের পাশে ২০ শতাংশের একটি জমি পছন্দ করেন। জমিটির মালিক টেকনাফের এক ব্যবসায়ীর। কিন্তু দাম-দর করার বিষয়ে গেলে জমির মালিক টালবাহানা করতেন। পরে স্থানীয়রা পরামর্শ দেন হাসেনা বারোর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। মূলত ওই পরিবরের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর জমিটি কেনা যায়। পরে জানা যায়, হাসেনা বারোর পরিবারটি প্রভাবশালী পরিবারগুলোর একটি।
আরেক ব্যবসায়ী জানান, ওই ১৩ পরিবারের বিষয়ে প্রশাসনও অবহিত আছে। জায়গা কেনাবেচার সঙ্গে তারা জড়িত। তাদের একটি পরিবারের মাধ্যমে ১০ বছর আগে সেন্টমার্টিনে একটি জায়গা কিনেছিলেন তিনি।
ওই ১৩ পরিবার হলো- দুইব্রা বারো, শেয়ানদারা বারো, তইজ্রাহাতু বারো, আহমেইদ্রা বারো, গুলাবারো, লোকমালা বারো, সারো বারো, হাসেনা বারো, ছইন্না বারো, লাঠিম মিয়া, জুলহাইস্রা বারো, আবদুল হক বারো ও ইসহাক বারোর পরিবার।
ইসহাক বারো পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য আবদুর রশীদ বলেন, ‘সেন্টমার্টিনে মূলত এই ১৩ পরিবারের সদস্যরাই ব্যবসা করেন। বাইরে থেকে আশা ব্যবসায়ীরা তাদের ম্যানেজ করে এখানে যেকোনো ধরনের বৈধ-বৈধ হোটেল, রিসোর্ট তৈরি করছে।’
স্থানীয়রা আরও জানান, কয়েক মাস আগে অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু বড় বড় অবৈধ স্থাপনা না ভেঙে ছোট ছোট টংঘর, বেড়ার ঘর উচ্ছেদ করেছেন। যা লোক দেখানো অভিযান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।