অন্যরকম খবর ডেস্ক : প্রায় ১৫০ বছরেরও আগের ইতিহাস। সে সময় সেরা সুন্দরীর তকমা পেয়েছিলেন গোঁফওয়ালা পুরুষালী চেহারার এক রাজকুমারী। তার সৌন্দর্যে ওই সময়ের পুরুষরা এমনই পাগল ছিলেন যে, প্রেম কিংবা বিয়ের প্রস্তাবে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ১৩ জন পুরুষ মনের দুঃখে আত্মহত্যা করেন।
কে সেই রাজকুমারী? নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে! তবে শুনুন, গোঁফ থাকা পুরুষালী চেহারার ওই রাজকুমারীর নাম জাহারা খানম তেজেস ইস সুলতানা। তবে তিনি ইতিহাসে পরিচিত ‘প্রিন্সেস কাজার’ নামে।
ইরানে ১৮৮৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন কাজার। পারস্যের কাজার রাজবংশের রাজা নাসিরউদ্দিন শাহ কাজার এবং তার স্ত্রী তাজ উদ-দৌলার দ্বিতীয় কন্যা তিনি। ওই সময় কাজার বাবা নাসিরউদ্দিনকে কাজার রাজবংশের সবচেয়ে যোগ্য এবং সফল শাসক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ হিসেবে ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে, সে সময় পারস্যের উন্নতির কারণে ইউরোপীয়রা সেখানে আনাগোনা বাড়িয়ে দিয়েছিল দ্বিগুণ।
এর ফলে পারস্য দ্রুত পেতে শুরু করে আধুনিকতার ছোঁয়া। কিন্তু সে আধুনিকতা থেকেও একধাপ এগিয়ে ছিলেন প্রিন্সেস কাজার। ওই সময়ে নারীদের অনেক কিছুতেই বাধা ছিল। কিন্তু সব বাধা পেরিয়ে পড়াশোনা, ছবি আঁকা, পিয়ানো বাজানো শিখেছিলেন কাজার। মাতৃভাষা ফারসি ছাড়াও তিনি জানতেন ফ্রেঞ্চ ও আরবি ভাষা।
এই সময়ে ‘প্রিন্সেস কাজার’ তেমন জনপ্রিয় নন। তবে হঠাৎই তিনি মানুষের মনে আগ্রহ তৈরি করেন ২০১৭ সালে। প্রায় ৭ বছর আগে হঠাৎই নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হয় ‘প্রিন্সেস কাজারের’ একটি ছবি। গোঁফওয়ালা এমন রাজকুমারীকে দেখে কৌতূহলী হয়ে উঠেন নেটিজেনরা।
আমেরিকান সংবাদমাধ্যম পিনটেরেস্ট ও মিডিয়ামের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নিয়মের বাধা ভেঙে একাধিক বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের জন্য কাজার সে সময় জনপ্রিয় ছিলেন। আর এ কারণেই তার প্রেমে পাগল ছিলেন পারসীয় পুরুষরা।
শৈশব থেকেই অসংখ্য প্রেমের প্রস্তাব পেতে শুরু করেন কাজার। তবে সবাইকেই তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। এ প্রত্যাখান অনেক পুরুষ মেনে নিলেও কেউ কেউ আবার তা মেনে নিতে পারেননি। যে কারণে স্থানীয় জনশ্রুতি রয়েছে, কাজার থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ১৩ জন পুরুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন।
মাত্র ১০ বছর বয়সে প্রায় সমবয়সি দাস্ত মোহাম্মদ খানকে বিয়ে করেন কাজার। ২১ ভাইবোনদের মধ্যে দ্বিতীয় কাজার ওই সময়ই নারীবাদী ও জাতীয়তাবাদী ছিলেন। ইতিহাস থেকে জানা যায়, তিনিই একমাত্র রানি যিনি প্রথম হিজাব ছেড়ে মেয়েদের আধুনিক শিক্ষা ও চাকরির কথা বলেন। এ কারণে পারস্যের সংবিধানেও আনেন পরিবর্তন।
এমন গুণী রাজকুমারীর প্রেমে তাই সব ছেলে পাগল হয়েছিলেন। তবে তাই বলে গোঁফওয়ালা পুরুষালী চেহারার প্রেমে কেউ পড়ে? এ সময়ে নেটদুনিয়ায় কাজারের ছবি দেখে এমন প্রশ্নই উঁকি দিয়েছে নেটিজেনদের মনে।
এমন প্রশ্নের সোজা উত্তর মেলে ইতিহাসবিদ ড. স্টাসি জেম শেউইলারের কাছে। তিনি বলেন, তখন সৌন্দর্য বলতে মেধা ও যোগ্যতাই বেশি প্রাধান্য পেত।
চন্দ্রাভিযানের জন্য নাসা থেকে স্নাতক শেষ করলেন প্রথম যে আরব নারী
এছাড়া ইরানি ইতিহাসবিদ ড. আফসানেহ নাজমাবাদির কাছ থেকে জানা যায়, ঊনবিংশ শতাব্দীর পারস্যের শৌখিন নারীরা সৌন্দর্যচর্চার অংশ হিসেবে হালকা গোঁফ রাখতে পছন্দ করতেন। তাই ওই সময় ‘বেশি সুন্দরীর’ খেতাব পান গোঁফওয়ালা পুরুষালী চেহারার ‘প্রিন্সেস কাজার’।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।