লাইফস্টাইল ডেস্ক : ‘আনলাকি থার্টিন’ টার্মটির সঙ্গে কমবেশি আমরা সবাই পরিচিত। বিশ্বজুড়ে, বিশেষত পশ্চিমা বিশ্বে ১৩ সংখ্যাটিকে অশুভ বা অপয়া বলে মনে করা হয়।
১৩ তারিখে কেউ নতুন কাজ শুরু করতে চান না। হাসপাতালের ১৩ নম্বর বেডে কেউ ভর্তি হতে চান না। কেউ আছেন বিমানের ১৩তম সারিতে বসতে ভয় পান। অনেকে এই সংখ্যাটিকে ভূতপ্রেত এবং আত্মার সঙ্গে যুক্ত বলেও বিশ্বাস করেন!
এমনকি জ্ঞান-বিজ্ঞানে আমাদের চেয়ে কয়েকধাপ অগ্রসর হওয়া সত্ত্বেও ইউরোপ, আমেরিকায় ১৩ সংখ্যাটি নিয়ে নানান কুসংস্কার প্রচলিত। সেখানকার বড় বড় প্রায় সব হোটেলে ১৩ নম্বর ঘরটি অনুপস্থিত!
ভ্রমণের সময় সেখানকার হোটেলগুলোতে ঘর নিলে খেয়াল করে দেখবেন, ১৩ নম্বর রুমের কোনও উল্লেখ নেই। অতিথিরাও ১৩ নম্বর কক্ষে থাকতে চান না।
কোথায় হারায় ১৩ নম্বর!
শুধু রুমই নয়, অনেক হোটেল বা অ্যাপার্টমেন্টের ১৩ নম্বর তলাও থাকে না! কিন্তু একটা উঁচু ভবনের মাঝ থেকে তো আর গোটা একটি তলা অদৃশ্য হতে পারে না! তাহলে কোথায় যায় ১৩ নং ফ্লোর!
আসলে ভবনের বা হোটেল মালিকরা ১৩তম তলার নাম পরিবর্তন করে দেন। তারা সেই ফ্লোরটিকে ১৩ তলা বলেন না। এসব ফ্লোরের নাম হয় ১২-এ, ১৪-এ এরকম।
লিফটে ১২তম তলার পর সরাসরি ১৪ তলায় যেতে বোতাম টিপতে হয়।
১৩ নম্বরের এই ভীতির মাত্রা এতটাই বিস্তৃত যে, ফ্রান্সের কোনো হোটেল বা রেস্তোরাঁয় ১৩ নম্বর চেয়ার রাখা হয় না। সেখানকার ব্যবসায়ীরা এই নিয়ম মেনেও চলেন। এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের চণ্ডীগড়ে নাকি ১২ নং সেক্টরের পর সরাসরি ১৪ নম্বর সেক্টর রয়েছে।
কেন এই ভীতি
বিশেষজ্ঞদের মতে, সংখ্যার প্রতি মানুষের এই আচরণকে বলা হয় ট্রিস্কাইডেকাফোবিয়া।অর্থাৎ এক্ষেত্রে মানুষ সংখ্যাকে ভয় পায়। ট্রিস্কাইডেকাফোবিয়ায় ভোগা ব্যক্তিরা ১৩ নম্বরটি দেখলে আতংক বোধ করেন। তাদের উদ্বেগ বাড়তে থাকে, ঘাম হয়, এবং হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। তবে এর নেপথ্যে থাকতে পারে ঐ ব্যক্তির ধর্মীয় বিশ্বাস, ঐতিহাসিক কোনো ঘটনা এবং সাংস্কৃতিক অনুশীলন।
একাধিক ইতিহাসবিদ মনে করেন, ১৩ সংখ্যাটিকে নিয়ে কুসংস্কারের উৎপত্তি প্রাচীন ব্যাবিলনে। সেখানে এই সংখ্যাটি মৃত্যু এবং পরকালের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল।
এ ছাড়াও জানা যায়, প্রাচীনকালে ফাঁসি কাষ্ঠে ওঠার সিঁড়িতে ১৩টি ধাপ থাকত। আবার গণিতের নিয়ম অনুসারে, ১২-কে পূর্ণসংখ্যা ধরে বছরে ১২ মাস, ঘড়িতে ১২ ঘণ্টা এবং ১২টি রাশি রয়েছে। এরপর ১৩ নম্বরটিকে ভারসাম্যহীন সংখ্যা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এ কারণেও এটিকে অশুভ মনে করা হয়।
তবে খ্রিস্টীয় ধারণানুযায়ী, ১৩ নম্বরের এই ভীতি যিশুখ্রিস্টের শেষ নৈশভোজের সঙ্গে জড়িত। ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার আগে যিশু তাঁর বারোজন শিষ্যকে নিয়ে মৃত্যুর আগে নৈশভোজ সারেন, যেখানে তিনি ঘোষণা করেন এই শিষ্যদেরই একজন পরদিন তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে।
বিশ্বাসঘাতক জুডাস ইস্কারিয়ট ছিলেন সে নৈশভোজের ১৩তম অতিথি। প্রতারণা এবং মৃত্যুর সঙ্গে যোগসূত্র থাকায় মানুষের মধ্যে এই ধারণা বিস্তার লাভ করে যে ১৩ দুর্ভাগ্যের সংখ্যা।
তথ্যসূত্র: নিউজ এইটিন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।