সুরের মূর্ছনায় ঢাকা মাতালেন ভারতীয় সুরসম্রাট ও অস্কারজয়ী সংগীত পরিচালক এ আর রহমান। যে ‘হোম অব ক্রিকেট’ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ক্রিকেটযুদ্ধে নেমে পড়েন খেলোয়াড়রা, সেই মাঠে গতকাল উঠল সুরের ঝংকার। একের পর এক ‘মোকাবেলা সুবহানাল্লাহ… ও ও ও লায়লা’, ‘রঙ দে বাসন্তী…’ ‘পিয়া পিয়া… জিয় জিয়’ বিখ্যাত গান গেয়ে মাত করে দেন ভারতীয় এই সংগীত কিংবদন্তি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্টেডিয়ামে উপস্থিত হয়ে উপভোগ করেন এ আর রহমানের গান। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও তাঁর সহধর্মিণী আফরোজা বেগম এবং বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর ও তাঁর সহধর্মিণী সাবরিনা সোবহানও উপস্থিত থেকে কনসার্ট উপভোগ করেন।
অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শুধু একজন মহান মানুষই নন, তিনি ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে এসে আমার খুব ভালো লাগছে যে এমন একজন মানুষের জন্মশতবার্ষিকীতে আমি প্রোগ্রাম করছি। বাংলাদেশে এসে আমি মুগ্ধ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড আয়োজন করে ‘ক্রিকেট সেলিব্রেটস মুজিব ১০০’। মনোমুগ্ধকর জমকালো এ অনুষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক দেশের শীর্ষ শিল্প পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপ। গতকাল অনুষ্ঠান শুরু হয় বিকাল পৌনে ৫টায়। দুই পর্বে বিভক্ত অনুষ্ঠানে দুবার জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।
প্রথম পর্বে পারফর্ম করেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইলস ও ফোকসম্রাজ্ঞী মমতাজ। দ্বিতীয় পর্বের প্রধান আকর্ষণ এ আর রহমান। ভারতীয় সংগীত জাদুকর গতকাল স্টেজে ওঠেন রাত ৯টা ৪০ মিনিটে। তাঁর প্রথম গানটি ছিল ‘জয় হো’! দেশাত্মবোধক গান দিয়ে শুরু করেন। একের পর এক নিজের জনপ্রিয় গানগুলো পরিবেশন করে স্টেডিয়ামভর্তি দর্শককে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখেন।
বিকালে প্রথমে পারফর্ম করেন বাংলাদেশের বিখ্যাত ব্যান্ড মাইলস। ‘চাঁদ তারা সূর্য নও তুমি, নও পাহাড়ি ঝরনা’, ‘নীলা তুমি কি জানো না আমার হৃদয়ের ঠিকানা’, ‘ফিরিয়ে দাও, আমার এ প্রেম তুমি ফিরিয়ে দাও’, ‘ধিকি ধিকি আগুন জ্বলে, বুকের নদী বইয়া জ্বলে…’ মাইলসের গানে মাতোয়ারা হয় পুরো স্টেডিয়াম।
স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী একসঙ্গে মিলিয়ে বাংলাদেশের ফোকসম্রাজ্ঞী মমতাজ গাইলেন ‘জয় মুজিবুর, জয় স্বাধীনতা, বাংলাদেশের জয়! আমরা হারিনি…’। দ্বিতীয় গানটি ছিল বিরহের ‘আমাকে পোড়াইতে তেমার এত আয়োজন’। মমতাজের বিখ্যাত সেই গান ‘আমার ঘুম ভাঙায়া গেল গো মরার কোকিলে’ তো ছিলই। ‘নান্টু ঘটকের কথা শুই না, অল্প বয়সে করলাম বিয়া… পোলা তো নয় সে যে আগুনেরই গোলা’ গানের তালে তালে স্টেডিয়ামভর্তি দর্শককে নাচিয়ে ছেড়েছেন। এছাড়া ‘বন্ধু তুই লোকাল বাস’ গান গেয়ে মঞ্চ মাতান।
অনুষ্ঠানটি শুরু হয়েছিল জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। বৃষ্টির কারণে এ আর রহমান মঞ্চে ওঠেন আড়াই ঘণ্টা দেরিতে। বাংলাদেশের শিল্পীদের সংগীত পরিবেশন শেষে সন্ধ্যায় শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। টানা এক ঘণ্টা বৃষ্টির কারণে স্টেডিয়ামে পানি জমে যায়। অনুষ্ঠান হবে কি না এ শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবে বৃষ্টিতে ভিজেও প্রিয় শিল্পীর গান শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন দর্শক। শেষ পর্যন্ত এ আর রহমান মঞ্চে ওঠার পর যেন দর্শকের সংশয় দূর হয়। ভারতীয় কিংবদন্তির মনোমুগ্ধকর গান শুনেই ঘরে ফেরেন ভক্তরা।
এরপর বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন এ আর রাহমান। বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসার কথা জানিয়ে বলেন ‘জয় বাংলা’।
হাজারো দর্শককে অশ্রুসজল করে দিলেন ‘জয় বাংলা জয় বাংলা জয় বাংলাদেশ’ গেয়ে। রাহমানের সুর করা গানটি লিখেছেন গীতিকবি জুলফিকার রাসেল। এ সময় প্রেসিডেন্ট বক্স থেকে মুগ্ধশ্রোতা হয়ে শোনেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তাকে গানটি ভিডিও করতেও দেখা যায়।
এ গানটির পর পরই ‘আমার সোনার বাংলা… বলো জয় বঙ্গবন্ধু, বলো জয় বাংলা… এক দোস্ত মুজিব হে দিল মে…’ গান এ আর রহমান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।