চীনা গবেষকরা প্রাণঘাতী অগ্ন্যাশয় ক্যানসার দ্রুত শনাক্ত করতে পারে এমন একটি নতুন জিনগত বিশ্লেষণ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের দাবি করেছেন। চীনা বিজ্ঞান একাডেমির গুয়াংজু ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিসিন অ্যান্ড হেলথের অধ্যাপক লিন দা এবং সাংহাই জেনারেল হাসপাতালের ল্যাবরেটরি অ্যানিম্যাল সেন্টারের পরিচালক ইয়াং ইউছিনের নেতৃত্বে তৈরি ‘ইউনি-সি’ নামের সিঙ্গেল-সেল ‘মাল্টিওমিকস’ প্রযুক্তি মাত্র ১৮ ঘণ্টায় সম্পূর্ণ ডিএনএ বিশ্লেষণ করতে সক্ষম। নেচার কমিউনিকেশনস-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্রে জানানো হয়, এটি প্রচলিত বায়োপসির সমান নির্ভুল ফল দেয় এবং ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে।
প্রযুক্তিটি একসঙ্গে তিন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ জিনগত তথ্য বিশ্লেষণ করতে পারে—বৃহৎ পরিসরের কাঠামোগত পরিবর্তন, ক্ষুদ্র মিউটেশন এবং ৩-ডি ক্রোমাটিনের গঠন।
গবেষকদের দাবি, এর মাধ্যমে অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারসহ অন্যান্য ক্যানসারের স্ক্রিনিং, পর্যবেক্ষণ ও রোগীর জন্য ব্যক্তিকেন্দ্রিক ইমিউনোথেরাপি তৈরি সহজ হবে।
রক্তে পাওয়া অত্যন্ত বিরল সার্কুলেটিং টিউমার সেল (সিটিসি) ব্যবহার করে গবেষণাটি সম্পন্ন হয়। সিটিসি হলো বিরল ‘বীজ’ যা টিউমার থেকে রক্তপ্রবাহে ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রাথমিক টিউমারের সম্পূর্ণ জিনোমিক প্রোফাইল বহন করে।
তবে এদের সংখ্যা খুবই কম—প্রতি মিলিলিটার (০.০৩ আউন্স) রক্তে হয়তো কয়েকটি মাত্র কোষ—যার কারণে এতদিন পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ প্রায় অসম্ভব ছিল।
প্রচলিত সিটিসি পরীক্ষা অসম্পূর্ণ তথ্য দেয়, নতুবা অনির্ভরযোগ্য ফলাফল তৈরি করে। ইউনি-সি এই সমস্যার সমাধান করছে এক কোমল ও কার্যকর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, যা মাত্র ১৮ ঘণ্টায় পুরো ডিএনএ বিশ্লেষণ শেষ করে এবং ত্রুটির পরিমাণ অনেক কমিয়ে আনে।
অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের মাউস মডেল থেকে মাত্র সাতটি সিটিসি ব্যবহার করেই দলটি টিউমার টিস্যুতে পাওয়া ক্ষুদ্র আকারের প্রায় ৯০ শতাংশ মিউটেশন এবং তিন-চতুর্থাংশ গঠনগত পরিবর্তন শনাক্ত করতে পেরেছে—যা আক্রমণাত্মক বায়োপসির সমপর্যায়ের নির্ভুলতা।
এটি ইঙ্গিত দেয় যে ভবিষ্যতে হয়তো রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই রিয়েল-টাইমে টিউমারের বিবর্তন ট্র্যাক করা সম্ভব হবে, আর রোগীদের বারবার বায়োপসি করতে হবে না।
লিন গবেষণাপত্রে বলেন, ‘রক্তের নমুনা থেকেই অ-আক্রমণাত্মকভাবে পর্যবেক্ষণ সম্ভব হওয়ায় … এই টুল চিকিৎসার প্রতিক্রিয়া ও পুনরাবৃত্তি রিয়েল-টাইমে ট্র্যাক করার বড় সম্ভাবনা তৈরি করে।’ ইউনি-সি কেবল ক্যানসার খুঁজে পায় না—এটি চিকিৎসা পদ্ধতিতেও সাহায্য করে।
ইউনি-সি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা ১০টি কাস্টম-মেড অ্যান্টিজেন তৈরি করেছেন। প্রাণী পরীক্ষায় দেখা গেছে, এর মধ্যে ৫টি অ্যান্টিজেন শরীরের প্রতিরোধী কোষ সক্রিয় করেছে।
সাধারণ ওষুধ ক্লোরোকুইনের সঙ্গে মিলিয়ে ব্যবহার করলে টিউমারের আকার প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এই অগ্রগতি প্রতিটি রোগীর জন্য ক্যানসার মোকাবিলায় ‘গণ-ভ্যাকসিন’ তৈরির সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
চীনা একাডেমি অব সায়েন্সেস এক প্রতিবেদনে মন্তব্য করেছে, ‘ইউনি-সি বিরল টিউমার কোষের বিবর্তন ট্র্যাকিং, চিকিৎসার লক্ষ্য খুঁজে বের করা এবং গণ-চিকিৎসায় প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে। এটি সিঙ্গেল-সেল মাল্টিওমিক্সের নির্ভুল ক্যানসার চিকিৎসায় রূপান্তরমূলক প্রয়োগ ত্বরান্বিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
এছাড়া প্রযুক্তিটি ক্যানসারের এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এক্সট্রাক্রোমোসোমাল সার্কুলার ডিএনএ (ecDNA)-এর পূর্ণাঙ্গ গঠনও উন্মোচন করেছে, যা টিউমারের দ্রুত বৃদ্ধি ও ওষুধ প্রতিরোধের সঙ্গে জড়িত।
গবেষকদের মতে, অল্প কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও ‘ইউনি-সি’ ভবিষ্যতে অন্যান্য ক্যানসার শনাক্ত, একসঙ্গে ডিএনএ-আরএনএ বিশ্লেষণ এবং বৃহৎ পরিসরে কোষ প্রক্রিয়াকরণের সক্ষমতা অর্জন করবে।
অধ্যাপক লিন দা বলেন, ‘এই প্রযুক্তি মৌলিক গবেষণা ও চিকিৎসা প্রয়োগের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করছে। এটি কোষ বিভাজনের ধাপ নির্ধারণ, রোগ সৃষ্টিকারী জিন শনাক্ত, কাস্টম অ্যান্টিজেন পূর্বাভাস এবং ক্যানসারের প্রাথমিক চিকিৎসায় সহায়তা করবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।