এমদাদুল হক তুহিন : সম্পূর্ণ ক্যাশলেস লেনদেনের শর্তসাপেক্ষে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের ১৯টি উপখাতে কর অব্যাহতির সুবিধা থাকছে আরও তিন বছর। কর অব্যাহতির তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ব্লকচেইন, রোবটিক্স, সফটওয়্যার-অ্যাজ-এ-সার্ভিস (স্যাস) ও ডেটা সায়েন্স। তবে কর অব্যাহতির সুবিধা থেকে বাদ পড়ছে ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন), সিস্টেম ইন্ট্রিগ্রেশন ও ক্লাউড সার্ভিস।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এমন প্রস্তাবই থাকছে। আর কর অব্যাহতি বহাল থাকায় তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তারা সন্তুষ্ট ও খুশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তারা। পাশাপাশি মোবাইল, ইন্টারনেট ও ল্যাপটপে কর ও ভ্যাট কমানোর দাবিও রয়েছে তাদের।
এ বছরের ৩০ জুন আইসিটি খাতে কর অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ফলে বাজেট সামনে রেখে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তারা কর অব্যাহতির মেয়াদ আরও বাড়ানোর পক্ষে নানা সভা-সমাবেশ ও সেমিনার করে আসছিলেন। সরকারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন সমানতালে। এনবিআর ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক, বিভিন্ন দফতরে চিঠি চালাচালি, প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ— প্রায় সবকিছুরই চেষ্টা চালিয়েছিলেন তারা।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, সম্পূর্ণ ক্যাশলেস লেনদেনের শর্তসাপেক্ষে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের ১৯টি উপখাতে কর অব্যাহতির সুবিধা তিন বছর বাড়ছে। যে ১৯টি উপখাত নতুন বাজেটে কর অব্যাহতির সুবিধা পাচ্ছে সেগুলো হলো— এআই-বেজড সল্যুশন ডেভেলপমেন্ট; ব্লকচেইন-বেজড সল্যুশন ডেভেলপমেন্ট; রোবোটিক্স প্রসেস আউটসোর্সিং; সফটওয়্যার-অ্যাজ-আ-সার্ভিস; সাইবার সিকিউরিটি সার্ভিস; ডিজিটাল ডেটা অ্যানালিটিক্স ও ডেটা সায়েন্স; মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস; সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ও কাস্টমাইজেশন, সফটওয়্যার টেস্ট ল্যাব সার্ভিস; ওয়েব লিস্টিং, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট ও সার্ভিস; জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিস; ডিজিটাল অ্যানিমেশন ডেভেলপমেন্ট; ডিজিটাল গ্রাফিক্স ডিজাইন; ডিজিটাল ডেটা এন্ট্রি ও প্রসেসিং; ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ও ই-পাব্লিকেশন; আইসিটি ফ্রিল্যান্সিং; কল সেন্টার সার্ভিস; এবং ডকুমেন্ট কনভারশন, ইমেজিং ও ডিজিটাল আর্কাইভিং।
কর অব্যাহতির সুবিধা পাওয়া আগের ও নতুন তালিকা বিশ্লেষণ ও উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কর অব্যাহতির তালিকায় একেবারেই নতুন করে যুক্ত হয়েছে এআই, ব্লকচেইন, রোবটিক্স, সফটওয়্যার-অ্যাজ-আ-সার্ভিস ও ডেটা সায়েন্স। কর অব্যাহতির তালিকা থেকে বাদ পড়েছে এনটিটিএন, সিস্টেম ইন্ট্রিগ্রেশন ও ক্লাউড সার্ভিস।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে আইসিটি খাতের ২৭টি উপখাত কর অব্যাহতির সুবিধা পেয়ে আসছে। তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ১৯ খাতে এই সুবিধা থাকছে। বাজেট পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত এনবিআরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ২০১১ সাল থেকে আইটি সেবার ওপর কর অব্যাহতি দিয়ে আসছে এনবিআর। তিন থেকে পাঁচ বছর করে এই কর অব্যাহতির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। ৩০ জুন এই অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
নতুন করে কর অব্যাহতির মেয়াদ না বাড়ানোর পক্ষে আইএমএফের চাপও ছিল এ বছর। তবে আইসিটি খাতের উদ্যোক্তাদের দাবি মেনে আরও তিন বছর বাড়ানো হচ্ছে কর অব্যাহতি। এর আগে সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাতের কর অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হয়েছিল। ওই বছর নতুন করে চার বছরের জন্য তা বাড়ানো হয়, যার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৩০ জুন।
মন্তব্য জানতে চাইলে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি ও বিডিজবস ডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘আমরা সন্তুষ্ট যে আরও তিন বছর আইসিটি খাত কর অব্যাহতির সুবিধা পাচ্ছে। গত দুই মাসে ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ আমরা বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে এই মুহূর্তে কর অব্যাহতি উঠিয়ে নেওয়া ঠিক হবে না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ধন্যবাদ।’
কর অব্যাহতির তালিকায় এআই ও ব্লকচেইনকে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগের প্রশংসা করে বেসিসের সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। কিছু কিছু জায়গায় খাতগুলোকে সরল করা হয়েছে, সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। আমরা আরও বেশি আনন্দিত হয়েছি এই কারণে যে ‘সফটওয়ার অ্যাজ আ সার্ভিস’কে কর অব্যাহতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। কারণ এখন অনেক ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান দেশে ও বিদেশে মাসিক সাবস্ক্রিপশননির্ভর সফটওয়ার সেবা দিয়ে থাকে এসএএএস হিসাবে। এতে অনেক ছোট ব্যবসা কম খরচে আইটি ব্যবহার করতে পারবে।’
এক প্রশ্নের উত্তরে ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই ক্যাশলেস লেনদেনের শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। কারণ আমরা চাই না আইটি কোম্পানির নাম দিয়ে অন্য কেউ কর অব্যাহতির সুযোগ পাক। যারা প্রকৃত সফটওয়ার ব্যবসা করে তারা সবাই ব্যাংক লেনদেন বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমেই লেনদেন করে থাকে।’
বেসিসের আরেক সাবেক সভাপতি শামীম আহসান বলেন, ‘আইসিটি খাতে কর অব্যাহতি বহাল রাখার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা, এনবিআর চেয়ারম্যান ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রীকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাই। বরাবারের মতোই আইসিটি খাতের পাঁশে দাড়ানোর জন্য এই ছয়জনের প্রতি আমাদের বিশেষ কৃতজ্ঞতা। একইভাবে আমরা চাই মোবাইল ও ইন্টারনেটে ভ্যাট ও ট্যাক্স কমিয়ে আনা হোক। ইন্টারনেট, ল্যাপটপ, মোবাইল যেন সাবার হাতে হাতে পোঁছে দিতে পারি সেজন্য এই খাতগুলোতেও ভ্যাট ও কর কমিয়ে আনা হবে বলে প্রত্যাশা করি।’
এ বিষয়ে বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদের বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় এই সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম রাশিদুল হাসান বলেন, ‘সংসদে বাজেট প্রস্তাব উত্থাপনের পর আমরা বুঝতে পারব কর অব্যাহতির সুবিধা কতটুকু বেড়েছে বা এই খাত কী সুবিধা পাচ্ছে। তবে কর অব্যাহতির পাওয়ার বিষয়ে আমরা আশাবাদী। সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা সব ধরনের চেষ্টাই চালিয়েছি। আশা করি, ভালো কিছুই হবে।’ সূত্র : সারাবাংলা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।