আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আধুনিক সেচব্যবস্থার অভাবে দেশে বোরো মৌসুমে এক কেজি ধান উৎপাদনে খরচ হয় প্রায় তিন হাজার লিটার পানি। এতে বেড়েছে কৃষকের উৎপাদন খরচ। আর সামগ্রিকভাবে প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে ভোক্তা পর্যন্ত। অথচ একই পরিমাণ ধান উৎপাদনে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে খরচ হচ্ছে এক হাজার ৮০০ লিটার পানি। এমন তথ্য জানিয়েছে সরকারের কৃষি বিভাগ।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের রংপুর (ক্ষুদ্রসেচ) সার্কেলের তথ্য মতে, রংপুর বিভাগের সাত জেলায় ২৪ হাজার ৪৯৬ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ভূ-পরিস্থ পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন ও সেচদক্ষতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় এ সুবিধা দেওয়া হয়। এতে ৪৬ হাজার ৫৩৩ জন উপকারভোগী কৃষক উপকৃত হয়েছেন ।
সেচ প্রকৌশলীরা জানান, বোরো মৌসুমে দেশের কৃষকেরা এক কেজি ধান উৎপাদন করতে খরচ করে ৩ হাজার লিটার পানি। এতে প্রতি বছর বোরো মৌসুমে ডিজেল চালিত পাম্পের জন্য সাত লাখ চার হাজার ৬৫২ মেট্রিকটন ডিজেল প্রয়োজন হয়। আর বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয় ৩ হাজার ৯০ মেগাওয়াট। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কৃষকেরা এক কেজি ধান উৎপাদনে খরচ করে এক হাজার ৮০০ লিটার পানি।
আধুনিক পদ্ধতিতে পানির ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে অপচয় কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এতে করে কৃষকদের উৎপাদন খরচ আরও কমে আসবে।
বিএডিসি (ক্ষুদ্রসেচ) সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী,দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁ ও পঞ্চগড় জেলায় এক হাজার ২৮০টি সেচযন্ত্রের মধ্যে চালু রয়েছে এক হাজার ৭৯টি। এরমধ্যে রংপুর জেলায় ৪৮২টি সেচযন্ত্রের মধ্যে চালু রয়েছে ৪৪০টি, কুড়িগ্রাম জেলায় ২৪১টির মধ্যে চালু রয়েছে ১৭৫টি, লালমনিহাট জেলায় ১৯২টির মধ্যে চালু রয়েছে ১৪৯টি, নীলফামারী জেলায় ১০৫টির মধ্যে চালু রয়েছে ৯০টি, দিনাজপুর জেলায় ২২৯টির মধ্যে চালু রয়েছে ১৯৮টি, ঠাকুরগাঁ জেলায় ১৫টির মধ্যে চালু রয়েছে ১২টি এবং পঞ্চগড় জেলায় ১৬টির মধ্যে ১৫টি সেচপাম্প চালু রয়েছে।
এসব সেচযন্ত্র থেকে চলতি বোরো মৌসুমে ৪৬ হাজার ৫৩ জন কৃষকের ২৪ হাজার ৪৯৬ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে রংপুর জেলায় ১৭ হাজার ৫১০ কৃষকের ১২ হাজার ৪৬১ হেক্টর জমি, কুড়িগ্রাম জেলার ৯ হাজার ৪৮৯ জন কৃষকের ৩ হাজার ৫০৯ হেক্টর জমি, লালমনিরহাট জেলার ১০ হাজার ২৯২ জন কৃষকের ৩ হাজার ৩০৩ হেক্টর জমি, দিনাজপুর জেলার ৭ হাজার ৮৭০ জন কৃষকের ৪ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমি, ঠাকুরগাঁ জেলার ৩৭৭ জন কৃষকের ১০১ হেক্টর জমি ও পঞ্চগড় জেলার ৫১৫ জন কৃষকের ১৬২ হেক্টর জমি সেচ সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
বিএডিসির রংপুর (ক্ষুদ্রসেচ) সার্কেলের কর্মকর্তারা জানান, ২০২২ সালে রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলায় দুইশত কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে। এতে করে ৯০ হাজার কৃষক সেচ সুবিধার আওতায় এসেছে। এরমধ্যে রংপুর জেলায় খাল খনন করা হয়েছে ৮৩ দশমিক ৫৬ কিলোমিটার, নীলফামারী জেলায় খাল খনন করা হয়েছে ২৬ দশমিক ২৬ কিলোমিটার, লালমনিরহাট জেলায় খাল খনন করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার ও কুড়িগ্রাম জেলায় খাল খনন করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ৮০ কিলোমিটার।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন রংপুর (ক্ষুদ্র সেচ) সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এস এম শহীদুল আলম জানান, ভূ-পরিস্থ পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন ও সেচদক্ষতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পটি ২০১৭ সালে শুরু হয়ে ২০২২ সালে শেষ হয়। বর্তমানে রংপুর অঞ্চলের ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন ও সেচদক্ষতা বৃদ্ধিকরণ শীর্ষক একটি প্রকল্পের প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করি প্রকল্পটি দ্রুত অনুমোদন হবে। এতে এ অঞ্চলে সেচ উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরও অগ্রগতি হবে। এর সুফল পাবেন কৃষকেরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।