জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনশুমারি-২০২২ এর রিপোর্ট অনুযায়ী ১৮ হাজার ১৫৪ বর্গ কিলোমিটারের রাজশাহী বিভাগের জনসংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৩ লাখ ৫৩ হাজার ১১৬ জন। এ বিশাল জনসংখ্যার জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) মোট শয্যা সংখ্যা রয়েছে মাত্র ৫০টি। সেখানেও রয়েছে নানা সংকট। নেই আন্তর্জাতিক মান কিংবা ডাব্লিউএইচও-এর নির্দেশনার প্রতিফলন। এতে চিকিৎসা সেবায় অতি গুরুত্বপূর্ণ আইসিইউ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মুর্মূষ রোগীরা। ঢলে পড়ছেন নিশ্চিত মৃত্যুর কোলে।
রাজশাহী বিভাগ ৮টি জেলা নিয়ে গঠিত। রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও জয়পুরহাট। বিভাগে একটি সিটি করপোরেশনসহ মোট ৩৯টি সংসদীয় আসন রয়েছে। রয়েছে ৬৭টি উপজেলা, ৬২টি পৌরসভাসহ ৫৬৫টি ইউনিয়ন পরিষদ। একটি সংসদীয় আসন থেকে প্রতিদিন একজন করে রোগীকেও আইসিইউ সেবা দেওয়ার সক্ষমতা নেই স্বাস্থ্য বিভাগের!
স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগের মাত্র দুটি জেলায় আইসিইউ সুবিধা আছে। রাজশাহী-বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ সুবিধা আছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ৪০ শয্যা ও বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে রয়েছে ১০ শয্যার আইসিইউ। অন্য বিভাগের রোগীরা সেবা নিতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসছেন এ দুই জেলায়। সেখানেও দীর্ঘ সারি পেরিয়ে আইসিইউ পর্যন্ত পৌঁছাতে হতে হয় মহাভাগ্যবান। অনেকের অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় মৃত্যু দিয়েই!
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইসিইউ অর্থাৎ নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট বা নিবিড় থেরাপি ইউনিট বা নিবিড় চিকিৎসা ইউনিট (আইটিইউ) বা ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) নামেও পরিচিত। জরুরি স্বাস্থ্যসেবায় এটি বিশেষ বিভাগ। মুমূর্ষ রোগীদের জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে এই সেবাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগ সাধারণ সেবা দিতেই হিমশিম খাচ্ছে। প্রতিটি হাসপাতালে সাধারণ সেবার জন্যই ডাক্তার, নার্স, যন্ত্রপাতিসহ নানা সংকট রয়েছে। সেখানে আইসিইউ পরিচালনা করার মতো কার্যত সক্ষমতা তাদের নেই।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, আইসিইউ’র জন্য বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, জয়পুরহাট, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা জেলার বাসিন্দারা শত শত কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে রামেক ও শজিমেক হাসপাতালে ছুটে আসেন। কিন্তু সেখানেও নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয়। থাকতে হয় সুপারিশ করার মতো মানুষ। অনেক সময় পড়ে দীর্ঘ সিরিয়াল। আইসিইতে থাকা রোগীর মৃত্যু কিংবা সুস্থ হয়ে বেড ফাঁকা হওয়ার অপেক্ষার প্রতিটি মুর্হূত অমানবিক একেকটি উপাখ্যান। যেখানে চিকিৎসক, নার্স, রোগীর স্বজনসহ সেবা সংশ্লিষ্টরা থাকেন দর্শকের ভূমিকায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইসিইউতে চিকিৎসা নেয়া রোগীদের একটি বড় অংশই মৃত্যুবরণ করেন। কেননা তারা সঠিক সময়ে আইসিইউ সেবা পান না। সবকিছু পেরিয়ে আইসিইউ’র গেট পর্যন্ত পৌঁছাতেই অনেক দেরি হয়ে যায়। যারা আইসিইউ থেকে সেবা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন তারা মহাসৌভাগ্যবান-এতে কোনো সন্দেহ নেই। মহামারি পরিস্থিতিতে আইসিইউ সংকটের কারণে একেকজন মানুষের ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর চিত্র গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষ করে করোনাকালীন পরিস্থিতিতে যে দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়েছে তা অমানবিক সত্য হলেও আইসিইউ সংখ্যায় বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন না আসায় ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ।
যা বলছেন হাসপাতাল প্রধানরা:
জয়পুরহাটে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল থাকলেও নেই আইসিইউ সুবিধা। হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরদার রাশেদ মোবারক জানান, হাসপাতালে ১০ শয্যাবিশিষ্ট আইসিইউ রয়েছে। তবে জনবলের অভাবে সেটি উদ্বোধন করা হয়নি। কয়েকবার সরকারকে জনবলের জন্য চিঠি দিয়েও কাজ হয়নি।
সিরাজগঞ্জেও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল এবং শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে। কিন্তু কোনোটিতেই চালু নেই আইসিইউ। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) মো. ফরিদুল ইসলাম জানান, আইসিইউ স্থাপনের জন্য তাদের একটি ভবন সম্প্রসারণের কাজ চলছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সম্প্রসারিত ভবনে ১০ শয্যার আইসিইউ করার কথা রয়েছে।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, তাদেরও ১০ শয্যার আইসিইউ থাকলেও জনবল সংকট ও কিছু মেশিনারি না থাকার কারণে চালু করা যাচ্ছে না।
নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে ভারপ্রাপ্ত আরএমও ডা. সৌরভ আলী সম্রাট জানান, তাদের আইসিইউ নেই। তবে নির্মাণাধীন ২৫০ শয্যা হাসপাতালে আইসিইউ করার কথা রয়েছে।
২৫০ শয্যা নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত আরএমও) ডা. আবু আনছার আলী জানান, করোনাকালীন ২০২১ সালে ২টি বিশেষায়িত শয্যার আইসিইউ চালুর অনুমোদন দিয়েছিলো স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু দুটি আইসিইউ’র বেড ছাড়া প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের কিছুই সরবরাহ করা হয়নি। বারবার তাগাদা দিয়েও সাড়া মেলেনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন ডা. এসএম মাহমুদুর রশিদ জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে আইসিইউ ব্যবস্থা চালুর জন্য অবকাঠামো নির্মাণ হয়েছে। কিন্তু যন্ত্রপাতি ও জনবল সংকটের কারণে চালু করা যায়নি।
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ বেড রয়েছে বলে জানান শজিমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ। তিনি বলেন, আরো আইসিইউ বেড প্রয়োজন হাসপাতালের জন্য।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকরকে বিশ্বাস জানান, হাসপাতালে ৪০টি আইসিইউ বেড রয়েছে। কোনো সময় বেড ফাঁকা থাকে না।
রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আনোয়ারুল কবীর বলেন, আমাদের হাতে যা আছে তা দিয়েই আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সেবা দেওয়ার। আশা করছি, অদূর ভবিষ্যতে এ সংকট কেটে যাবে।
এ বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফরের মুঠোফোনে কল করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। এ কারণে বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।