জুমবাংলা ডেস্ক : কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের বাঁশজানি সীমান্তের একটি মসজিদ। এটি হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ ও ভারতের মানুষের সম্প্রীতির সেতুবন্ধ। এই জামে মসজিদ যেন দুই দেশের মানুষকে একটি সমাজে আবদ্ধ রেখেছে। কিন্তু ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হিংসুটে মনোভাবের কারণে বারবার বাধার মুখে পড়ছে মসজিদটির সংস্কারকাজ।
জানা গেছে, স্থানীয় মুসল্লিরা তাদের জমানো টাকায় মসজিদটি পাকা করতে চাইলে বিএসএফ দফায় দফায় বাধা দেয়। এজন্য দুই বছর ধরে মসজিদের সংস্কারকাজ বন্ধ রয়েছে।
৯ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় ছোট গাড়লঝড়া ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা মসজিদের পাশে শূন্য রেখায় একটি ইউক্যালিপটাস গাছে বাংলাদেশের দিকে মুখ করে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছিল। পরে বিজিবির জোরালো প্রতিবাদে ১২ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে বিএসএফ তা অপসারণ করে। সীমান্তে আন্তর্জাতিক মেইন পিলার নং-৯৭৮ এর সাবপিলার ৯-এর পাশে মসজিদটি অবস্থিত। এর উত্তরে পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার জেলার সাহেবগঞ্জ থানার ঝাকুয়াটারী গ্রাম এবং দক্ষিণে ভুরুঙ্গামারীর বাঁশজানি গ্রাম। মসজিদটি শূন্য রেখার কাছে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে নির্মিত। এর নাম ঝাকুয়াটারী সীমান্ত জামে মসজিদ। এটির বয়স প্রায় দুইশ বছর।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৪৭-এর আগে এখানে একটিই গ্রাম ছিল। দেশ ভাগের সময় গ্রামটির উত্তর অংশ চলে যায় ভারতে এবং দক্ষিণ অংশ বাংলাদেশে। ভারতীয় অংশের নাম হয় ঝাকুয়াটারী আর বাংলাদেশের অংশের নাম হয় বাঁশজানি গ্রাম। ভারতের অংশটি কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে পড়ে যায়। মূলত সেই সময় গ্রামটি আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার দিয়ে ভাগ হলেও ভাগ হয়নি তাদের সমাজ। প্রতিবেশীর মতোই তাদের বসবাস। মসজিদের মুয়াজ্জিন বাঁশজানি গ্রামের কয়েস আলী বলেন, আজানের ধ্বনিতে দুই বাংলার মুসল্লিরা ছুটে আসেন মসজিদে। নামাজ শেষে একে অপরের খোঁজখবর নেন। কেউ কেউ কোলাকুলিও করেন। একই গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঐতিহ্যবাহী সীমান্ত মসজিদটি দেখতে বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরাও আসেন। ঝাকুয়াটারী গ্রামের মুসল্লি আহাম্মদ আলী বলেন, মসজিদটি বহু পুরোনো হলেও অবকাঠামোগত কোনো উন্নয়ন হয়নি।
মসজিদের ইমাম বাঁশজানি গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, জুমার নামাজের দিন সীমান্তের এই মসজিদটি আরও বেশি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। বাংলাদেশ ও ভারতের মুসল্লিরা পাতিল ও বালতি ভরে নিয়ে আসেন তবারক। নামাজ শেষে তা বিতরণ করেন।
ভারতের গাড়লঝড়া জুনিয়র হাইস্কুলের ছাত্র আমির হোসেন বলে, আমরা অবসরে দুই দেশের শিশুরা মিলেমিশে খেলাধুলা করি। কোনোদিন আমাদের মধ্যে কোনো বিবাদ হয়নি। একে অপরের আনন্দ-বেদনা ভাগাভাগি করে নিই।
ঝাকুয়াটারী গ্রামের আহমেদ আলী বলেন, গ্রামের মাঝ বরাবর একটি কাঁচা সড়ক আছে। এই সড়কের অর্ধেক বাংলাদেশের, বাকিটা ভারতের। মেরামতের সময় উভয় দেশের নাগরিকরা যৌথভাবে কাজ করি।
মসজিদের সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, নতুন করে মসজিদের পাকা স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এতে বিএসএফ দফায় দফায় বাধা দেয়। এ ব্যাপারে সরকারের সুদৃষ্টি ও হস্তক্ষেপ কামনা করি।
মসজিদটি দেখতে আসা বিশিষ্ট নাট্য নির্মাতা ও সমাজকর্মী শাহজাহান সোহাগ এবং সমাজকর্মী আবুল হোসেন মেম্বার একই রকম তথ্য দিয়ে বলেন, মসজিদটিতে দুই দেশের মানুষের সঙ্গে নামাজ পড়ে খুবই ভালো লেগেছে। তাদের সহাবস্থান দেখে অনেক কিছু শেখার আছে। তবে মসজিদের জীর্ণ অবস্থা তাদের মর্মাহত করেছে। তারা ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি মেরামতের দাবি জানান।
ভুরুঙ্গামারীর পাথরডুবি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস ছবুর বলেন, এই সীমান্তে উভয় বাংলায় বসবাসকারীরা একে অপরের আত্মীয়। দেশ বিভাগের সময় তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে ভাগ হলেও আত্মীয়তার বন্ধন ভাগ হয়নি। শুধু মসজিদে একসঙ্গে নামাজ পড়া শুধু নয়, পারিবারিক অনুষ্ঠানেও তারা একে অপরকে দাওয়াত করেন। কেউ মারা গেলে একসঙ্গে জানাজায় অংশ নেন।
সূত্র ও ছবি : যুগান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।