সিলেট আমাদের প্রাণের নগরী। পর্যটন নগরী, আধ্যাত্মিক নগরী- ইত্যাদি আরও অনেক নামেই আমরা ভালবাসা প্রকাশ করি। গৌরব বা অহঙ্কারও। তবে ইদানিং এই শহরের নাগরিক জীবন রীতিমতো মুখ থুবড়ে পড়ার মতো অবস্থা। বিশেষ করে নগরীর ফুটপাত থেকে রাজপথ দখল করে হকারদের রাজত্ব আর ব্যাটারিচালিত রিকশা রাজত্ব।
সিলেটের নাগরিক জীবনকে রীতিমতো অসহনীয় করে তোলা এ দুই সমস্যার মুলোৎপাটনে মাঠে নেমেছেন প্রশাসনের নবনিযুক্ত দুই শীর্ষ কর্মকর্তা। একজন জেলা প্রশাসক মো. সারোয়ার আলম, অপরজন সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. আব্দুল কুদ্দুছ চৌধুরী পিপিএম।
জেলা প্রশাসক সারোয়ার আলম সিলেটে আসছেন, জেনে বেশ সাড়া ফেলেছিল গণমাধ্যমে। বিশেষ করে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকা অবস্থায় তিনি যে কঠোর ভূমিকা নিয়েছিলেন তার সেই সুনামের কারণেই নড়েচড়ে বসেছিলেন সিলেটের মানুষ। ভাবটা এমন যে, এবার হয়তো সিলেটে কিছু একটা হতে যাচ্ছে।
হচ্ছেও তাই। তিনি সিলেটের জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন এমন এক সময়, যখন সাদাপাথর লুটকাণ্ডে সারাদেশে চলছিল তোলপাড়। তার আগের জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ দায়িত্বে থাকা অবস্থায় সাদাপাথর থেকে লক্ষ লক্ষ ঘনফুট পাথ লুটপাট হয়ে যায়।
অথচ সিলেটের গণমাধ্যম সবসময়ই সরব ছিল। পাথর লুট বা চুরির সাথে জড়িতদের নামসহ সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল। জড়িত ছিল প্রশাসনেরও অনেকে।
কিন্তু তিনি গণমাধ্যম বা সিলেটের রাজনীতিবিদ ও সচেতন মহলের দাবি-দাওয়া পাত্তা না দিয়ে নিজের মতোই ছিলেন। তাছাড়া তিনি স্থানীয় প্রভাবশালী বিভিন্ন রাজনীতিবিদের সঙ্গে বিরোধেও জড়িয়ে পড়েছিলেন যা তখন অপেন সিক্রেট।
এ অবস্থায় সাদাপাথর লুটের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তাকে ওএসডি করা হয়। জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয় মো. সারোয়ার আলমকে।
তিনি এসেই প্রত্যাশা মতো কাজ শুরু করেন। লুটপাটকৃত পাথর উদ্ধারের চলমান কর্মসূচিকে আরও বেগবান করেন। পাশাপাশি দ্রুত প্রতিস্থাপনের কাজও চলতে থাকে। আশাবাদী হয়ে উঠেন সিলেট অঞ্চলের মানুষ।
এরপরই সারোয়ার আলম নজর দেন সিলেট মহানগরীর নাগরিক সমস্যা ফুটপাত মুক্ত করা ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দিকে। তিনি রাজনীতিবিদ ও নগরীর বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় করেন। সবার মতামতের ভিত্তিতে ফুটপাত মুক্ত ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে মাঠে নামেন। তবে তার আগে হকারদের পূণর্বাসনে লালদিঘীরপাড় অস্থায়ী হকার্স মার্কেটকে প্রস্তুতের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। কাজটি করছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। পাশাপাশি হকারদের জানিয়ে দেন, প্রস্তুতকৃত ওই মাঠে তাদের যেতেই হবে। অন্যতায় তাদের রাজপথ বা ফুটপাত-কোথাও বসতে দেওয়া হবেনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তার এমন ঘোষণার পর আতঙ্কে আছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তাদের অনেকেই সেখানে যেতে মানসিকভাবে প্রস্তুত। আর এখনো লালদিঘীরপারের প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে সিলেটের পুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব নিয়ে কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার পরপর নগরবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন আব্দুল কুদ্দুছ পিপিএম। তিনি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে একাধিকবার মতবিনিময় করে প্রধান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছেন। নগরবাসী জানিয়েছেন, যানজট আর ফুটপাত দখল মুক্ত করাই প্রধান সমস্যা।
তিনিও মাঠে নামেন। প্রথমে হেলমেট ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দিয়ে নগরীর প্রায় সব পয়েন্টে ফুলেল শুভেচ্ছা কর্মসূচি পালন করেছেন। মানে যেসব মোটরসাইকেল চালক হেলমেট ব্যবহার করছেন তাদের হাতে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
তার আগে পরিবহন মালিক শ্রমিকদের তিনি আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন, ২১ সেপ্টেম্বরের পর নগরীতে কোনো অবৈধ যানবাহন চলবেনা। ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে নগরবাসীর ক্ষোভ ছিল অনেক পুরানো।
তার ঘোষণা মতো ২২ সেপ্টেম্বর থেকে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযানে নামে পুলিশ। টানা তিনদিন অভিযান চালিয়ে ২৬১টি অবৈধ যানবাহন আটক ও ৮০টির মতো যানবাহনের বিরুদ্ধে কাগজপত্র না থাকায় মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
এরপর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে নাগারিক জীবনে। কিছুটা যানজট মুক্ত সিলেট মহানগরী। তবে নগরবাসীর দাবি, এই অভিযান চালিয়ে যেতে হবে এবং নগরীকে ব্যাটারিচালিত রিকশা মুক্ত করতে হবে।
নগরীর ফুটপাত হকার্সমুক্ত করতে পারলে আর ব্যাটারিচালিত রিকশা শতভাগ উচ্ছেদ করতে পারলে সত্যিই বদলে যাবে সিলেট মহানগরী।
সুত্র : সিলেট ভিউ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।