জুমবাংলা ডেস্ক : চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে তামান্না আক্তার। পারিবারিক আয়োজনে পরীক্ষার পর অল্প বয়সেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় তাকে। চলে যান স্বামীর সংসারে। ১৫ দিনের সংসারে সমাপ্তি হয় তার জীবনের। আত্মহত্যার মত অপবাদ নিয়ে বিদায় নিতে হয় দুনিয়া থেকে। এদিকে, অতি আদরের মেয়েকে হারিয়ে এখন শোকাহত বাবা-মাসহ স্বজনরা।

এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার দক্ষিণ নলুয়া গ্রামের মৃধা বাড়িতে। ওই বাড়ির জব্বার মৃধার ছেলে মনির হোসেন মৃধার সঙ্গে গত ১৯ আগস্ট বিয়ে হয় পৌর এলাকার শাহজাহান গাজীর মেয়ে তামান্না আক্তারের। সবকিছু ভালই চলছিল। মনির গত দুই সপ্তাহে তামান্নাকে নিয়ে একাধিকবার যাওয়া-আসা করেন শ্বশুরালয়ে। কোন ধরণের অভিযোগ ছিল না তামান্নার বিরুদ্ধে। এমন তথ্যই জানা গেল উভয় পরিবারের কাছ থেকে।
কিভাবে মনির-তামান্নার এত সংক্ষিপ্ত সংসার জীবনের অবসান হলো তা জানতে বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে যাওয়া হয় ঘটনাস্থল মনিরের নলুয়া গ্রামের মৃধা বাড়িতে। বাড়িতে মনিরের পরিবারে দুটি ঘর। যে ঘরে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে বলে দাবি সে ঘরটি তালাবদ্ধ। মনির ও তার বাবা-মা বাড়িতে নেই। আরেক ঘরে গিয়ে পাওয়া যায় মনির হোসেনের বড় বোন শারমিন আক্তারকে।
মনিরের বড় বোন শারমিন জানান, আমার ভাই-ভাবির মধ্যে কোন সমস্যা ছিলো না। ঘটনার দিন গত রোববার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে ভাবি আমার মায়ের সঙ্গে কাজ করেছে। মা তাকে খাইয়ে দিয়েছে। আমি গোসল করতে গিয়েছি। তাকেও গোসল করার জন্য মা ডাকেন কিন্তু সে আমাদের সেমি পাকা ঘরের দিকে যায়। কিছু সময় পরে আমি ওই ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ পাই। পরে একপর্যায়ে জোর করে দরজা খুলে দেখি ভাবি ঝুলন্ত অবস্থায়। আমি চিৎকার দিলে বাড়ির সব লোকজন জড়ো হয়। খবর পেয়ে থানা থেকে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
শারমিন আরও জানান, ঘটনার সময় আমার ভাইকে ঘরে ছিল না। আমার ভাইয়ের সঙ্গে ভাবির কোন কিছু হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। শুনেছি, ভাবির সঙ্গে অন্য কোন ছেলের টিকটক ভিডিও দেখা গেছে। তবে আমার ভাইয়ের স্মার্ট ফোনটি এখন পুলিশের কাছে জব্দ।
তামান্নার বিষয়ে আরও জানতে যাওয়া হয় তার বাবার বাড়িতে। পৌর এলাকার মোবারকদী গ্রামের গফুর গাজী বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায় তামান্নার পরিবারের সকল সদস্যকে। পুরো পরিবার এখনো শোকাহত।
তামান্নার মামা নাজমুল তপাদার জানান, আমার দুই ভাগ্নি ও এক ভাগ্নে। ভাগিনা আসিফ বড়। তামান্না ও তানহা ছোট। বোন জামাতা শাহজাহান একজন কৃষক এবং সহজ সরল। যে কারণে তামান্নাকে বিয়ে দেয়ার পূর্বে মনির হোসেন পরিবারের খোঁজ নিয়েছি। তাদের বিষয়ে সকলেই ভাল বলেছে। ঘটনার পরে বুঝতে পারলাম এই ছেলের সঙ্গে অন্য কোন মেয়ের সম্পর্ক থাকতে পারে। তা নাহলে কি কারণে আমার ভাগ্নি হত্যার শিকার হবে। নিশ্চয় কোন কিছু জানতে পেরেছে এবং কথা কাটাকাটি হয়েছে। তবে তার মৃত্যুর পরে আমরা তার পা মাটিতে লাগানো অবস্থায় দেখতে পেয়েছি। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।
নিহত তামান্নার মা আছমা বেগম জানান, আমার মেয়ের মধ্যে কোন খারাপ কিছু দেখিনি। তাদের কোন সমস্যার কারণেই আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। আমি হত্যাকারীর ফাঁসি চাই।
মেয়ের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না বাবা শাহজাহান। তিনি জানান, ঋণ করে অনেক ধুমধাম করে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। আমার মেয়েও খুবই আনন্দ উৎফুল্ল ছিল। বিয়ের পরেও কোন ধরণের সমস্যার কথা শুনতে পাইনি। গত ১ সেপ্টেম্বর আমার মেয়েকে ঠিক কী কারণে হত্যার পর ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে মনির হোসেন পরিবার নিষ্ঠুর ভাবে ঝুলিয়ে রাখে, তা বলতে পারছি না। তারা এখন আমার মেয়ের অন্য ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক আছে বলে অপবাদ দিচ্ছে। কিন্তু সঠিক তদন্ত করলে আমার মেয়ের বিষয়ে এমন কোন কিছুই পাওয়া যাবে না । আমি এ হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।
তামান্নার সহপাঠি মারিয়া ও জয়ন্তী জানান, শিশু শ্রেণি থেকে আমরা একসঙ্গে পড়ছি। এ বছর আমরা এসএসসি দিয়েছি। তামান্না খুবই ভাল ছিলো। তার শ্বশুরালয় থেকে যেসব অপবাদ দেয়া হচ্ছে এগুলো একেবারেই সঠিক না। এমন কোন কিছু থাকলে আমরা অনন্ত জানতাম।
এ ব্যাপারে মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ওই বাড়িতে যায়। সুরতহাল শেষে তামান্নার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।

 


