লাইফস্টাইল ডেস্ক : সাধারণত শুক্রাণুর গুণগত মান কম হলে পুরুষের বন্ধ্যত্ব হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি মিলিলিটারে শুক্রাণুর সংখ্যা ১৫ মিলিয়ন বা দেড় কোটির কম হলেই প্রাকৃতিকভাবে গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি সন্তান নেয়ার পরিকল্পনা করেন এবং একজন পুরুষ হিসেবে আপনার পুরুষত্ববোধটিকে বাড়িয়ে তুলতে চান তাহলে আপনার স্বাস্থ্যকর ডায়েট অনুসরণ করে চলা উচিত। স্বাস্থ্যকর খাবারের মাধ্যমেই আপনি প্রাকৃতিক ভাবেই আপনার শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়িয়ে তুলতে পারেন।
যদি আপনার যৌন জীবনের উন্নতি ঘটাতে চান এবং তাড়াতাড়ি একটা সন্তান লাভ করতে চান খুব বেশি অপেক্ষা না করে চট জলদি একবার খাবারের তালিকাটিতে চোখ বুলিয়ে নেন এবং সেগুলোকে আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে অন্তর্ভূক্ত করুন। এবার তাহলে মম জাঙ্কশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়ায় এমন খাবার সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
১. গোজি বেরি: গোজি বেরি হল শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধিকারী একটি ভারতীয় সুপারফুড। যেটিকে বলা হয় প্রকৃতির আহ্লাদের বস্তু। গোজিতে ভেতরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা শুক্রাণুর সক্রিয়তা এবং প্রজনন ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়।
২. গরুর মাংস: গরুর মাংসে রয়েছে জিংক’র অসাধারণ উৎস। এ মাংসে আবার ফোলিক অ্যাসিড এবং সিলেনিয়ামেরও একটা সমৃদ্ধ উৎস, যা শুক্রাণুর স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে।
৩. ডিম: শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ডিম খুবই গুরুত্বপূর্ণ খাবার গুলোর মধ্যে অন্যতম। ডিমে রয়েছে ভিটামিন ই এবং প্রোটিনে সমৃদ্ধ, যা শুক্রাণুর সক্রিয়তায় সাহায্য করে।
৪. ডার্ক চকলেট: শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য প্রথম এবং সম্ভবত সবচেয়ে সেরা খাদ্যটি হল ডার্ক চকোলেট। চকোলেট প্রস্তুতকারী ক্যাকাও বিনগুলি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ। আবার ডার্ক চকোলেটের মধ্যে থাকে এল আরজিনিন নামক একটি উৎসেচক যা শুক্রাণুর পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে।
৫. টমেটো: টমেটো হল প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী দুর্দান্ত একটি খাদ্য। এর মধ্যে রয়েছে লাইকোপিন, যেটি হল এক প্রকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা বীর্যের গঠন এবং ক্রিয়াকলাপ উন্নত করার জন্য পরিচিত। টমেটো নিয়মিত সেবন করলে তা পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে।
৬. রসুন: রসুন ক্যান্সার প্রতিরোধের পাশাপাশি শুক্রাণু উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। রসুনে যৌন অঙ্গাণুগুলিতে রক্ত অবাধে প্রবাহিত হয় এবং ড্যামাজ হওয়া থেকে সেগুলোকে রক্ষা করে। সিলেনিয়াম, যা অপর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসেচক, রসুনের মধ্যে পাওয়া যায় যা শুক্রাণুর গতিশীলতা উন্নত করতে সহায়তা করে।
৭. গাজর: গাজর সবজি হিসেবে খাওয়া যেতে পারে। এতে রয়েছে বিটা ক্যারোটিনের একটা সমৃদ্ধ উৎস, যেটি হল এক প্রকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ফ্রি র্যাডিক্যালগুলির থেকে শুক্রাণুকে রক্ষা করার মাধ্যমে তার স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ করে। আর এর ফল রূপে এটি শুক্রাণুর গতিশীলতা বৃদ্ধি করে, আর এভাবে সেটিকে ডিম্বাণুতে পৌঁছাতে সাহায্য করে।
৮. পালংশাক: আমাদের শরীরকে সুস্থ্য সবল রাখতে শাক সবজি খাওয়ার কোন বিকল্প নেই। সবুজ শাক বিশেষ করে শুক্রাণু উৎপাদনে সাহায্য করতে পারে। পালংশাক ফোলিক অ্যাসিডে সমৃদ্ধ যা শুক্রাণুর বিকাশের জন্য অপরিহার্য।
৯. শতমূলী বা অ্যাসপারাগাস: শতমূলী বা অ্যাসপারাগাসে ভিটামিন সি রয়েছে। যা শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়াতে এবং ডিম্বাণুর দিকে সাঁতরে যেতে সাহায্য করার মাধ্যমে প্রজননের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে।
১০. মুসুর: রান্না করা মুসুরগুলি হল ফোলিক অ্যাসিডের এক চমৎকার উৎস, যেটি শুক্রাণু উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক। ফোলিক অ্যাসিডের অভাব পুরুষদের মধ্যে ক্রোমোজোমীয় অস্বাভাবিকতাগুলি সৃষ্টি করতে পারে, সুতরাং প্রত্যহ মুসুর সেবন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
১১. আখরোট: আখরোট মূলত ব্রেন ফুড হিসেবে পরিচিত। তবে এ খাদ্য শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ হওয়ায়, আখরোট শুক্রাণুর জীবনীশক্তি উন্নত করে।
১২. ঝিনুক বা অয়েস্টার: ঝিনুক হল জিংকের একটা দুর্দান্ত উৎস যা শুক্রাণুর সক্রিয়তার উন্নতি করতে সাহায্য করে। ঝিনুক গ্লাইকোজেন এবং টরিন সরবরাহ করার মাধ্যমে আপনার প্রজনন প্রক্রিয়াটিকে উদ্দীপ্ত করবে।
১৩. ডালিম: যৌন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ডালিম পরিচিত। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলির সমৃদ্ধ উৎস হওয়ার কারণে শুক্রাণু উৎপাদনের গুণগত মান বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন আপনি ডালিমকে কাঁচা অথবা রস আকারে খেতে পারেন।
১৪. কুমড়ো দানা: কুমড়ো বীজে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইটোস্টেরল এবং অ্যামাইনো অ্যাসিডে পরিপূর্ণ যা পুরুষদের মধ্যে প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কুমড়োর দানা আবার শুক্রাণুর সংখ্যা, গতিশীলতা এবং সার্বিকভাবে পুরুষত্ব বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
১৫. জিংক সমৃদ্ধ খাদ্য: জিংক আছে এমন সকল খাবারই শুক্রাণুকে ড্যামেজ হওয়া থেকে রক্ষা করে। এটি আবার কামশক্তিকেও উদ্দীপ্ত করে তোলে। সব ধরণের মাছেই জিংক এর উৎস রয়েছে। যা গ্রহণে নিজেকে সুস্থ রাখতে পারেন।
১৬. অলিভ অয়েল: অলিভ অয়েল নিয়মিত গ্রহণ করলে তা শুক্রাণুর সংখ্যা এবং তার গুণমানের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে। এটা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কম রাখে, টেস্টিক্যালে অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি করে এবং সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর শুক্রাণু গঠণে সাহায্য করে।
১৭. মেথি: মেথি শুক্রাণুর সংখ্যা এবং কামশক্তি বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। ডাল অথবা যেকোনও সবজিতেই এটি ফোড়ণ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
১৮. অশ্বগন্ধা: প্রাচীন এই মূলটি একটি চমৎকার কামোত্তেজক বস্তু হিসেবে কাজ করে এবং বহুকাল ধরে বিভিন্ন ধরনের রান্নার কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে। বলা হয়, এটা কেবল টেস্টোস্টেরন বাড়ায় না তার সাথে সাথে আবার ইরেকটাইল ডিসফাংশনের চিকিৎসাতেও সাহায্য করে।
১৯. কলা: শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কলা একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য। কেনোনা ফলটিতে ভিটামিন বি, সি এবং ম্যাগনেসিয়ামে সমৃদ্ধ যা শুক্রাণুর গতিশীলতা বৃদ্ধি করে এবং শুক্রাণু উৎপাদনে সাহায্য করে। কলার মধ্যে আবার ব্রোমেলাইন নামক একটা বিরল উৎসেচকও থাকে যা শুক্রাণুর সংখ্যা এবং গতিশীলতা বাড়াতে সহায়তা করে। এগুলো আবার সেক্স হরমোনগুলিকে নিয়ন্ত্রণ এবং আপনার মেজাজকে প্রফুল্ল করে তুলতে পারে।
২০. নানা প্রকার বেরি: ঠিক গোজি বেরির মতোই, রাস্পবেরি, স্ট্রবেরি, ক্র্যানবেরি এবং ব্লুবেরিতে রয়েছে বিভিন্ন শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি পুষ্টি পদার্থগুলি যেমন কোরসেটিন এবং রেস্যাভার্যাট্রল, যা শুক্রাণুর গুণমান এবং উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
একটি সুন্দর জীবন পার করতে এ খাবারগুলোর পাশাপাশি আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে হবে। আপনি যদি আপনার প্রজনন ক্ষমতার মাত্রাটি উন্নত করতে চান তবে আপনার মেনে চলা উচিত এমন কিছু টিপস এখানে রইল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।