জুমবাংলা ডেযস্ক : দেশে ম্যাগনেটিক কয়েনের নামে চলছে প্রতারণা বাণিজ্য। কথিত এ কয়েনের খোঁজে নেমে সমাজের ধনাঢ্য ব্যক্তিরা কোটি কোটি টাকা তুলে দিচ্ছেন প্রতারকদের হাতে। প্রায় সাত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রাজধানী থেকে কয়েনচক্রের পাঁচজনকে গ্রেফতারের পর গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, সারা দেশে এমন চক্র আছে অন্তত ২০টি।
দশটি কয়েন। প্রতিটির গায়ে খোদাই করা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নাম। শত বছর আগের মুদ্রা। একেকটির মূল্য ১০০ কোটি থেকে হাজার কোটি টাকা। কারণ এগুলোতে নাকি আছে ইরিডিয়াম নামের ধাতু, যার রয়েছে অলৌকিক ক্ষমতা।
দেশে বছরের পর বছর কথিত এ ম্যাগনেটিক কয়েনের নামে চলছে রমরমা প্রতারণা বাণিজ্য। এসব সোনার হরিণের খোঁজে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, সরকারি আমলা, প্রকৌশলী থেকে শুরু করে সেলিব্রিটিরাও।
ম্যাগনেটিক কয়েনের সন্ধানে নেমে এ প্রতারকদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে এক শিল্পপতি খুইয়েছেন সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের আরেক ব্যবসায়ী তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন পঁচাত্তর লাখ টাকা। এ পাঁচজনকে গ্রেফতারের পর গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পেরেছে সারা দেশে অন্তত ২০টি চক্র সীমানা পিলার এবং কয়েনের শত শত কোটি টাকার আষাঢ়ে গল্প শুনিয়ে কীভাবে প্রতারণার জাল বিস্তার করেছে।
কাউকে টার্গেট থেকে শুরু করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে গ্রেফতার করা ব্যক্তিদের কাছ থেকে একটি স্বচ্ছ ধারণা পেয়েছেন গোয়েন্দারা। কয়েন বা পিলার সন্ধান করছেন এমন ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে একটি দল। এ দলটি কয়েন পক্ষের দালালদের কাছে তাদের নিয়ে যায়। তারা এবার শরণাপন্ন হন কয়েনের মূলহোতার কাছে। আবির্ভাব ঘটে কয়েনের সাজানো মালিকের। মালিকের পক্ষেও একটি দালালচক্র কয়েন কেনার আগ্রহ দেখায়।
টার্গেট ব্যক্তিকে বোঝানো হয় এ বস্তুর উৎস ব্রিটিশ আমলে ভারতীয় উপমহাদেশে বসানো ম্যাগনেটিক বা সীমানা পিলার। পিলারের একেবারে শেষের ধাপে তিনটি হলুদ রঙের বোতল আছে। সেই বোতলের ছিপির ওপর আছে কিছু কয়েন বা মুদ্রা। অলৌকিক ক্ষমতার উৎস মূলত ওই মুদ্রা।
পুলিশ বলছে, এসব কয়েন মূলত তামার তার গলিয়ে তৈরি করা হয়। এগুলোর কোনো ধরনের ক্ষমতাই নেই। বিভিন্ন পরীক্ষায় তা প্রমাণ হয়েছে।
‘জিৎ সবাই হয়, কিন্তু দেব একটাই’, ট্রোলের জবাবে মুখ খুললেন দেব
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার মশিউর রহমার (গুলশান বিভাগ) বলেন, ‘এ ধরনের চক্রের সদস্যরা যাকে টার্গেট করে তাকে তীক্ষ্ণ নজরে রাখে, বিভিন্ন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, যারা যে সবাই অশিক্ষিত তা নয়, অনেক শিক্ষিত ও সচেতন মানুষকেও ভুলিয়ে-ভালিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল। তাদের গ্রেফতার করে অনেক মুদ্রা ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। এ মুদ্রাগুলো আসলে রাজধানীর মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পের কিছু বিহারি চোরাই তামার তার গলিয়ে গলিয়ে নিজেদের মতো করে বানিয়ে রাখে, এগুলোর মূল্য আছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। সেই একটি কয়েনের দাম কখনো লাখ টাকা, কখনো কোটি টাকা হয়ে থাকে। নাইজেরিয়া এবং আফ্রিকার অন্যান্য প্রতারকদের তথ্যমতে বাংলাদেশের এভারেজ মানুষ অত্যন্ত লোভী, অত্যন্ত ইমোশনাল এবং অত্যন্ত অনৈতিক। আমাদের এ অনৈতিকতা এবং আমাদের এ লোভ আর আমাদের আবেগের কারণে আমাদের লোক বারবার প্রতারিত হয়।’
লোভে পড়ে কথিত কয়েন বা সীমানা পিলারের পেছনে ছোটা ব্যক্তিদেরও প্রয়োজনে আইনের আওতায় আনা হবে বলে পুলিশ জানায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।