বিনোদন ডেস্ক : সিনেমার নতুন ধারাদেবদাস ভারতের মানুষের কাছে পরিচিত নাম। শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সৃষ্ট চরিত্রটিকে চেনে না এমন মানুষ ভূ-ভারতে বিরল। বই না পড়লেও দেবদাস ও তার প্রেম সম্পর্কে জানে। সেই পরিচিত প্রেমিক ও প্রেমকে নতুন করে নিয়ে এসেছিলেন সঞ্জয় লীলা বানসালি। মুক্তি পাওয়ার আগেই সিনেমা নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছিল। সে সময়ে এটি ছিল সর্বোচ্চ বাজেটের সিনেমা। বানসালি প্রথমেই নজর দিয়েছিলেন নান্দনিকতার দিকে।
‘দেবদাস’ আজও পরিচিত একটি রোমান্টিক সিনেমা হিসেবে। কিন্তু এর বাইরে বেশকিছু বিষয় জড়িত। সিনেমাটি প্রিমিয়ার হয়েছিল কান চলচ্চিত্র উৎসবে। সেখানে শাহরুখ খান ও ঐশ্বরিয়া রাই হেঁটেছিলেন রেড কার্পেটে। সেদিন তাদের আগমনটাও ছিল বিশেষ। ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে দুজন যখন রেড কার্পেটে আসেন উপস্থিত সবার চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছিল। বলিউডের সিনেমার দিকে পশ্চিমের নজর ফের এনেছিল ‘দেবদাস’। নব্বইয়ের দশকে বলিউডের সিনেমার শুটিংয়ের একটা বড় অংশ হতো বিদেশে। এমনকি সিনেমায়ও হলিউডের একটা ভাব আনার চেষ্টা করতেন পরিচালকরা। সেখানে বানসালি একটি শুদ্ধ ভারতীয় প্রেমের সিনেমা তৈরির কথা ভেবেছিলেন। আর সে সিনেমার প্রডাকশন ডিজাইনে ব্যয় করেছিলেন সময় ও অর্থ।
সেট নির্মাণে সিনেমার বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী আনা হয়েছিল।। তারা বিশেষভাবে পার্বতীর কাচের প্রাসাদ তৈরি করেন। চন্দ্রমুখীর বাড়ির জন্য বিশেষভাবে একটি হ্রদ তৈরি করা হয়। এখানে বেশকিছু রূপক বিষয় রাখা হয়েছিল। পার্বতীর দ্বিতীয় বাড়িটিতে লাল রঙ দিয়ে ক্লস্ট্রোফোবিয়ার একটি রূপ রাখার চেষ্টা করা হয়। প্রতিটি গানে আলাদা রঙের ব্যবহার গানের ভাবের সঙ্গে মিল রেখে করা হয়েছিল। পোশাকের রঙও বিশেষভাবে মাথায় রেখে করা হয় যেন তা দর্শকের মনে প্রভাব ফেলে। শেষ দৃশ্যে লাল পাড় সাদা শাড়ি পরে ঐশ্বরিয়ার দৌড়ে যাওয়া এখনো বহু দর্শকের চোখে ভাসে।
দেবদাসকে অনেকে ভারতের নিজস্ব রোমিও-জুলিয়েট বলেন অনেকে। এ নিয়ে বহু সময়ে নাটক, টেলিফিল্ম ও সিনেমা হয়েছে। ভারতের সিনেমার ইতিহাসে বিমল রায় পরিচালিত দেবদাস অন্যতম বিখ্যাত সিনেমা। নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন দিলীপ কুমার। এক অবসেসড প্রেমিক আর তার প্রেমের এ গল্প ভারতের মানুষ আপন করে নিয়েছিল। তাহলে সে গল্পে বানসালির অবদান কী? সত্যি বলতে দুই রকম অবদান রয়েছে।
প্রথমত, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই দেবদাস বানসালির নিজস্ব সংস্করণ। সিনেমার গল্পের উপস্থাপনাটা বানসালির। দ্বিতীয়ত, বলিউডে যে সময় হলিউডি ধারার সিনেমার দিকে মন চলে যাচ্ছে, তিনি সে সময় ভারতের বাইরে, ভারতের প্রেম কাহিনী বলতে চেয়েছেন। যদিও সিনেমাটি অস্কার মনোনয়ন পায়নি, কিন্তু ভারতের বাইরে প্রশংসিত হয়। বাফটায় মনোনয়ন পেয়েছিল দেবদাস।
টাইম ম্যাগাজিনের সমালোচক রিচার্ড করলিস বলেছিলেন, দেবদাস এ শতাব্দীর সেরা ১০ সিনেমার মধ্যে একটি। সিনেমা হিসেবে দেবদাস কতটা ভালো তা নিয়ে অবশ্য সমালোচকদের নানা মত রয়েছে, কিন্তু এ সিনেমায় শাহরুখ খান, মাধুরী দীক্ষিত ও ঐশ্বরিয়ার পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হয়েছে সবাই। পাশাপাশি এ সিনেমার মধ্য দিয়েই পরিচালক হিসেবে তারকা খ্যাতি পেয়েছিলেন বানসালি। ভারতীয় সিনেমায় প্রতিনিয়ত নতুন কিছু যোগ করার তার যাত্রা হয়েছিল এখান থেকেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।