জুমবাংলা ডেস্ক : ১৯৯২ সালে নিজ উদ্যোগে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন আকবর হোসেন। প্রধান শিক্ষকও ছিলেন তিনি। কিন্তু ২০০১ সালের দিকে এসে তৎকালিন স্কুল কমিটির সভাপতি এই শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করেন। এরপর ২০০৪ সাল থেকে শুরু হয় আইনি লড়াই। অবশেষে আদালতের নির্দেশে দীর্ঘ ২০ বছর পর চাকরি ফিরে পেয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) পঞ্চগড় সদর উপজেলার নয়নীবুরুজ দীঘলগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যোগদান করেন আকবর হোসেন। এ সময় বিদ্যালয়ের সাবেক সহকর্মী, ম্যানেজিং কমিটি, স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীরা আকবর আলীকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন৷ পরে সবার মাঝে মিষ্টি বিতরণ করা হয়।
আকবর হোসেনের বাড়ি উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের কাপরাঙ্গাপাড়া এলাকায়।
জানা গেছে, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার কয়েক বছর পরই রেজিস্ট্রার হয়। সেসময় আকবর হোসেনসহ শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হন। এর কয়েক বছর পরেই চাকরিচ্যুত হন আকবর হোসেন। তারপর থেকেই মামলা, পাল্টা আপিল- এভাবেই চলে গেছে আকবর হোসেনের জীবনের ২০টি বছর।
দীর্ঘ ২০ বছর পরে হলেও ন্যায়বিচার পেয়েছেন বলে উচ্ছ্বসিত আকবর হোসেন।
তিনি বলেন, এই মামলার পেছনে আমার সবকিছু শেষ করে আজ পথে বসেছি। ছেলে দুইটাকে ভালো করে লেখাপড়া করাতে পারিনি, খাবারও দিতে পারিনি। দীর্ঘ ২০ বছর পর আমি ন্যায়বিচার পেয়ে আজকে আমার প্রাণের বিদ্যালয়ে যোগদান করেছি। তৎকালীন সভাপতি হবিবর রহমান, এটিইও আকবর আলী, জিন্নাত আলী ও টিইও রুস্তম আলীর যোগসাজসে আমাকে বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে এক নারীকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলো।
আকবর হোসেনের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, দীঘল গ্রামে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় ১৯৯২ সালে নয়নীবুরুজ দীঘল গ্রাম বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন শিক্ষক আকবর আলী। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়। তার আগেই তাকে ষড়যন্ত্র করে চাকরিচ্যুত করা হয়। ২০০১ সালে শিক্ষক আকবর তার স্ত্রীর করা একটি মামলায় তিন মাস কারাগারে ছিলেন। পরে সমঝোতা হওয়ায় জামিনে মুক্তি পান তিনি। তবে কারাগার থেকে বের হওয়ার পরে বিদ্যালয়ের সভাপতি হবিবর রহমান প্রধান শিক্ষক আকবর হোসেনকে আর বিদ্যালয়ে ঢুকতে দেননি। এভাবে কেটে যায় কয়েক বছর। ২০০৪ সালে আদালতে আদেশাত্মক নিষেধাজ্ঞার মামলা করেন আকবর। পরে মামলায় আদালত আকবরকে স্বপদে বহাল রাখতে ও তার বকেয়া বেতন পরিশোধের নির্দেশ দেন। এদিকে, আকবরকে সরিয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সংশ্লিষ্টরা সভাপতির ভাতিজার বউ আয়েশা সিদ্দিকাকে নিয়োগ প্রদান করেন।
এরপর এই মামলা গড়িয়েছে উচ্চ আদালত পর্যন্ত। বেশ কয়েকবার আকবর হোসেন রায় পেলেও চলে পাল্টা আপিল৷ সবশেষ ২০২২ সালের ১৮মে উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ শুনানি শেষে নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন এবং আয়েশা সিদ্দিকার নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করেন। এরপর অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া আয়েশা সিদ্দিকাকে অব্যহতি দেওয়া হয় বিদ্যালয় থেকে। তবে আকবরকে যোগদান করার বিষয়ে টালবাহানা চালাতেই থাকে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। ফলে ২০২২ সালের শেষের দিকে পঞ্চগড় সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি জারি মামলা করেন আকবর। এরপর আকবর হোসেনকে যোগদান করানোর নির্দেশ অমান্য করায় আদালত গত ২৯ অক্টোবর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে মহাপরিচালক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপর তড়িঘড়ি করে বৃহস্পতিবার পঞ্চগড় সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে আকবর হোসেনকে যোগদান করিয়ে বিদ্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়।
শিক্ষক আকবর হোসেনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান বলেন, আকবর হোসেনের জারি মামলার আইনজীবী ছিলাম আমি। সংশ্লিষ্টরা উচ্চ আদালতের নির্দেশনা না মানায় এই মামলা করা হয়। বিবাদীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হলেও তারা কোনো জবাব না দেওয়ায় আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা কাগজপত্র যাচাই করে তাকে বিদ্যালয়ে যোগদান করান৷
সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোসলেম উদ্দিন শাহ বলেন, আদালতের রায়ের নির্দেশে আমরা আকবর হোসেনকে যোগদান করিয়ে তার বিদ্যালয়ে সংযুক্ত করেছি। আমি নিজেকে গর্ববোধ মনে করি এমন একটি ইতিহাসের স্বাক্ষী হলাম। আকবর আলীর বিল বেতন যেন দ্রুত হয় তার জন্য আমি সকল কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করেছি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম মন্ডল বলেন, দীর্ঘ ২০ বছর চাকরি সংক্রান্ত মামলা চলার পর আদালতের নির্দেশে আমরা আকবর হোসেনকে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার অনুমতি দিয়েছি। তিনি বিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।