মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা সদরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ। বর্ষা মৌসুমে এখানে বসে দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট। মাঠের ভেতর আর আশপাশজুড়ে সাজানো থাকে নানা আকৃতির ও নকশার নৌকা।
নির্দিষ্ট স্থান ছাড়িয়ে হাটসংলগ্ন ডি.এন. পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠেও চলে বেচাকেনা। ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে সরগরম হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
স্থানীয়দের দাবি, এ হাটের ইতিহাস দুই শতাব্দীরও বেশি পুরনো। যদিও হাটের সঠিক বয়স জানা সম্ভব হয়নি। অনেকে বলেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তারা এই হাটে আসছেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক পীযূষ দত্ত জানান, ধলেশ্বরী ও ইছামতী নদীর তীরে ব্রিটিশ আমলের আঠারো শতকের গোড়ার দিকেই এই হাটের সূচনা। এখনো বর্ষাকালে এই হাটের সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে।
পদ্মা, যমুনা, ধলেশ্বরী, ইছামতী ও কালীগঙ্গাসহ আশপাশের নদীগুলোতে পানির প্রাচুর্য থাকায় এ অঞ্চলে নৌকার চাহিদা বেশি। বিশেষ করে বর্ষায় জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হলে গ্রামীণ সড়ক ডুবে যায়। তখন মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা হয় নৌকা। ফলে বর্ষার শুরুতেই ঘিওরের নৌকার হাট জমে ওঠে, আর পানি বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে বিক্রি।
লিয়াকত মিয়া এ হাট থেকে নৌকা কিনে আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করেন। তিনি বলেন, “প্রতি বুধবার বসা এই হাটে গড়ে এক থেকে দেড়শ নৌকা বিক্রি হয়। আকারভেদে প্রতিটি নৌকার দাম ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে। প্রতি হাটে প্রায় ৬ থেকে ৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়।”
খলসী গ্রামের নৌকা নির্মাতা নিমাই চন্দ্র সূত্রধর বলেন, “আমরা মেহগনি, কড়ই, আম, চাম্বল আর রেইনট্রির কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরি করি। কাঠের দাম বেড়ে গেছে কিন্তু নৌকার দাম তেমন বাড়াতে পারছি না।”
নৌকা বিক্রেতা কানাই চন্দ্র সূত্রধরের ভাষ্যমতে, ১০ হাত লম্বা ও আড়াই হাত চওড়া একটি নৌকা ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। ১১ হাত লম্বা ও ৩ হাত চওড়া নৌকা ৬ হাজার, ১৩ হাত লম্বা নৌকা ৭ হাজার আর ১৫ হাত লম্বা নৌকা বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকায়।
আশাপুর গ্রামের সমেজ উদ্দিন বলেন, “আমাদের গ্রামটা নিচু। অল্প বৃষ্টিতেই রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়। তাই নৌকা ছাড়া উপায় নেই। এ বছর সাড়ে ৫ হাজার টাকায় একটি বড় ডিঙি নৌকা কিনলাম।”
কলেজ শিক্ষক চয়ন শেখ বলেন, “প্রায় দুই শতাব্দীর ঐতিহ্য ধরে রেখেছে ঘিওরের নৌকার হাট। বর্ষা এলে জমে ওঠে এই হাট। নদীবেষ্টিত জনপদের মানুষের ভরসা হয়ে ওঠে কাঠের তৈরি মজবুত নৌকা।”
ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাশিতা তুল ইসলাম জানান, এ উপজেলাটি নদীবেষ্টিত হওয়ায় নৌকার হাট এখানে স্বাভাবিকভাবেই সমৃদ্ধ। এ হাটে দূর-দূরান্তের ক্রেতা-বিক্রেতারা ভিড় করেন। উপজেলা প্রশাসনও এ হাটের উন্নয়নে নজর রাখছে।
সূত্র ও ছবি : রাইজিংবিডি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।