জুমবাংলা ডেস্ক : দূরত্ব মাত্র ২০ কিলোমিটার। এ স্বল্প পথের দূরত্বে কাঁচামরিচের কেজিতে ব্যবধান রয়েছে ২১০ থেকে ২৩০ টাকার। কৃষক ১৩০ টাকায় পাইকারি দরে কাঁচামরিচ বিক্রি করলেও কয়েক ফড়িয়া ও আড়তদার হয়ে খুচরা বাজারে সেই মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ থেকে ৩৬০ টাকায়। এ চিত্র দেশের উত্তরাঞ্চলের পাবনা জেলার ঈশ্বরদীর। যদিও পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, ভারত থেকে আমদানি কম এবং অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে পাইকারি মোকামে মরিচের সরবরাহ কমেছে। সে জন্য দাম বেড়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈশ্বরদী উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চল কামালপুর, চরকুড়ুলিয়া ও লক্ষ্মীকুণ্ডার বিস্তীর্ণ এলাকায় কাঁচামরিচ আবাদ হয়। শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের এসব গ্রামের কৃষক মরিচের কেজি বিক্রি করেন কমবেশি ১৩০ টাকা দরে। সেখান থেকে ফড়িয়া ও আড়ত হয়ে ঈশ্বরদী বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ থেকে ৩৬০ টাকায়। তবে উৎপাদন এলাকা ঈশ্বরদীতে মরিচের কেজি ৩৬০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল ঢাকার খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে। সেই হিসাবে ঢাকার সঙ্গে দরের পার্থক্য দেখা গেছে ১১০ থেকে ১৪০ টাকার। যদিও তিন-চার দিন আগে ঢাকার বাজারে মরিচের কেজি ৩৬০ টাকা ছুঁয়েছিল। তবে দুই দিন ধরে দাম কমতে শুরু করেছে।
ঈশ্বরদীর ব্যবসায়ী মজিবর রহমান বলেন, কয়েক দিন ধরে চুয়াডাঙ্গা থেকে ভেড়ামারা হয়ে ভারতীয় কাঁচামরিচ ঈশ্বরদীতে আসছে না। আমরা চুয়াডাঙ্গায় যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, সীমান্তে ‘কিছু একটা ঝামেলা’ হয়েছে। এ কারণে ভারতীয় কাঁচামরিচ এ পথে না এসে অন্য এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে। সেই মরিচ ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে।
মরিচের দামে উত্থান-পতন নিয়ে কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা মিলন মিয়া বলেন, কাঁচামরিচ মজুত রাখার মতো পণ্য নয়। এর দাম নির্ভর করে জোগানের ওপর। বৃষ্টিতে অনেক এলাকায় মরিচ গাছ মরে গেছে। এ জন্য দর বাড়ছে। তবে ভারত থেকে আসার কারণে দাম কমছে।
পাবনায় সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাঁচামরিচের দাম বৃদ্ধিতে ফড়িয়া ও আড়তদারদের কারসাজি রয়েছে। বর্ষায় মরিচের গাছ নষ্ট হওয়া ও উৎপাদন কমে যাওয়ার অজুহাতে মাঠ পর্যায়ে দাম নাগালের মধ্যে থাকলেও, ভোক্তা পর্যায়ে বাজার অস্থিতিশীল করা হচ্ছে বলে ঈশ্বরদীর কয়েক আড়তদার ও খুচরা ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন।
চরকুড়ুলিয়া গ্রামের কৃষক আকুব্বর আলী বলেন, বর্ষায় জমিতে পানি জমে থাকায় মরিচের গাছ পচে যায়। ফলে উৎপাদন কমে। বর্তমানে মরিচ তুলে পাইকারদের কাছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। একই গ্রামের কৃষক তরিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাছ থেকে কাঁচামরিচ কিনে নিয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করা অন্যায়।
ঈশ্বরদী বাজারের আড়তদার মজিবর রহমান বলেন, মাঠ থেকে কিনে কিছু লাভ রেখে আমরা খুচরা দোকানিদের কাছে বিক্রি করি। দোকানিরা যে দামে বিক্রি করেন, ভোক্তাদের সে দামে কিনতে হয়। এ ক্ষেত্রে কয়েক হাত বদল হয়ে ভোক্তা পর্যায়ে মরিচের দাম বাড়ে।
ঈশ্বরদীতে ১০-১২ দিন আগেও বাজারে খুচরা পর্যায়ে কাঁচামরিচের কেজি ছিল ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। ধীরে ধীরে বেড়ে কেজি ৪০০ টাকা হয়েছে। তবে গতকাল কিছুটা কমে ৩৬০ টাকায় নেমেছে।
সাঁড়াগোপালপুর গ্রামের মরিচ ক্রেতা রফিকুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, দোকানিরা যখন যেমন ইচ্ছামতো দাম হাঁকান। বাজারে ও আড়তে বাজার মনিরটিং না থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
খুচরা মরিচ বিক্রেতা আমিন উদ্দিন বলেন, পাইকারি মোকাম থেকে কিনতে হচ্ছে ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকা কেজি দরে। আমরা বিক্রি করছি ৩৬০ থেকে ৩৮০ টাকা দরে।
ঈশ্বরদীর ব্যবসায়ীরা জানান, ঈশ্বরদীতে মেহেরপুর, চুয়াডাঙা এলাকা থেকে কাঁচামরিচ আসছে। কিন্তু মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গার সবজি বাজারেও মরিচের আমদানি কম। এ কারণে গত তিন দিনের ব্যবধানে অস্বাভাবিক বেড়েছে দাম। অনেক ক্রেতা কাঁচামরিচ কম কিনছেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার বলেন, বৃষ্টিতে কিছু মরিচের ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারপরও ঈশ্বরদীতে এ বছর ১৩৬ হেক্টর জমিতে মরিচ উৎপাদন হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবির কুমার দাশ বলেন, বেশি দামে মরিচসহ যে কোনো পণ্য বিক্রি করার অভিযোগ পেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা ও শাস্তি দেওয়া হবে।
মরিচের বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিদিনই বাজার তদারকি হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন অভিযান ও পদক্ষেপে ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে। মরিচের দামও ভোক্তার নাগালে রাখতে শিগগির বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।