ফিফা দ্য বেস্টের লড়াইয়ে লিওনেল মেসির কাছে হেরে শিরোপা খুইয়েছেন ফ্রান্সের অধিনায়ক কিলিয়ান এমবাপ্পে। ফিফা এককভাবে বর্ষসেরা পুরস্কার দেয়ার পর এটি ছিল মেসির দ্বিতীয় ট্রফি। আর ব্যালন ডি’অর ও ফিফা দ্য বেস্ট মিলিয়ে এটি সপ্তম বর্ষসেরা পুরস্কার।
এবার আবারো মুখোমুখি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন কাতার বিশ্বকাপের দুই ফাইনালিস্ট ও একই ক্লাব সতীর্থ মেসি ও এমবাপ্পে। লড়াইটা হবে ফুটবলারদের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ মর্যাদার পুরস্কার ব্যালন ডি’অর নিয়ে। যে ট্রফিটি পাওয়া যে কোনও খেলোয়াড়ের জন্যই সম্মানজনক। যদিও এ ট্রফিটি মেসি সাত বার শোকেসবদ্ধ করেছেন। তাই তার কাছে এর গুরুত্ব কম মনে হতে পারে। তবে এমবাপ্পের জন্য এটি বিশেষ কিছু। বিশেষ করে দ্য বেস্টের শিরোপা হারের পর এটা তো তার চাই চাই।
তবে এমবাপ্পে চাইলেই তো হবে না। মৌসুম জুড়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করতে হবে, সেই বিশ্বের অন্যান্য প্রতিযোগীকেও টপকাতে হবে। সম্প্রতি চলতি মৌসুমের ব্যালন ডি’অর জয়ের পাওয়ার র্যাঙ্কিং প্রকাশ করেছে জনপ্রিয় ফুটবল বিষয়ক ওয়েবসাইট গোলডটকম।
যেখানে দেখা যাচ্ছে শীর্ষ পাঁচের লড়াইয়ে চলছে তুমুল প্রতিযোগীতা। শীর্ষ তিনে রয়েছে মেসি, এমবাপ্পে ও হালান্ড। আগেরবারের র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ তিনে কোনো পরিবর্তন আসেনি। বরং শীর্ষ পাঁচে এসেছে পরিবর্তন। আসের র্যাঙ্কিংয়ে পাঁচে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের ব্রাজিলিয়ান সেনসেশন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র এবার ঢুকে গেছেন শীর্ষ চারে।
অন্যদিকে চারে থাকা নাপোলির ভিক্টর ওসেমিন চলে গেছেন ৬ নম্বরে। তাকে ঠেলে শীর্ষ পাঁচে ঢুকেছেন আগের র্যাঙ্কিংয়ে ১৩তম স্থানে থাকা করিম বেনজেমা।
চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে সেরা ফুটবলারের হাতে তুলে দেয়া হবে ২০২৩ সালের ব্যালন ডি’অরের ট্রফিটি। যেটি ৬৭তম ব্যালন ডি’অর ট্রফি। মৌসুমের এখনো ২ মাস বাকি। এখনই আলোচনায় কার হাতে উঠবে ব্যালন ডি’অর।
ব্যালন ডি’অরের এবারের ট্রফিটি নিজের করে নিতে হালান্ডের হাতে বড় সুযোগই রয়েছে। কেননা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে ইতোমধ্যে পিএসজি বাদ পড়ে গিয়েছে। আর তার দল ম্যানসিটি সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। তাই দুর্দান্ত ফর্ম দিয়ে যদি দলকে প্রথমবারের মতো শিরোপা পাইয়ে দিতে পারেন তাহলে সন্দেহ ছাড়াই বলা যায় তার হাতে যাবে এবার ব্যালনের শিরোপা।
তবে তার জন্য অবশ্যই টক্কর দিতে হবে বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক মেসিকে। কেননা চলতি মৌসুমে মেসি ও এমবাপ্পে দুজনই দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন। তাই তো এতদিন এক ও দুই নাম্বারে ছিলেন তারা। মাঝে ফর্ম খারাপ করায় এমবাপ্পে আসনচ্যুত হলেও নিজের আসন ঠিকই ধরে রাখেন মেসি।
২০২২ সালের ব্যালন ডি’অরের সময়ে বেশ কিছু পরিবর্তন আনে ফ্রান্স ম্যাগাজিন কর্তৃপক্ষ। যেখানে ক্যালেন্ডার বছরের পরিবর্তে একটি ফুটবল মৌসুমকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের পরিবর্তে জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত সময়কে ব্যালন ডি’অরের জন্য বিবেচনা করা হবে বলে জানায়। যার কারণে কাতার বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স অন্তর্ভুক্ত হয়নি ২০২২ ব্যালন ডি’অরের তালিকায়।
চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ব্যালন ডি’অরের পাওয়ার র্যাঙ্কিংয়ে মেসি ৩৬ গোল ও ২৩টি অ্যাসিস্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছেন। তার ব্যালন ডি’অর জয়ে যে বিষয়টি এগিয়ে রাখছে তা হলো ফুটবল বিশ্বকাপ। পুরো বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচ থেকে করেছেন ৭ গোল সেই সঙ্গে করিয়েছেন ৩ গোল। আর ফাইনালের ম্যাচ সেরাসহ বিশ্ব আসরে পেয়েছেন সর্বোচ্চ ৫ বার ম্যাচ সেরার পুরস্কার। যা তাকে অষ্টম ব্যালন ডি’অরের জয়ের পথে অনেকটা এগিয়ে রাখছে। এছাড়াও তার ঝুলিতে রয়েছে চলতি মৌসুমে ট্রফি দেস চ্যাম্পিয়ন শিরোপা।
দ্বিতীয় স্থানে থাকা ম্যানসিটির আর্লিং হালান্ডও আছেন চলতি মৌসুমে দুর্দান্ত ফর্মে। তিনি এখন পর্যন্ত ৪৮ গোলের পাশাপাশি করেছেন ৬ অ্যাসিস্ট। তবে তার দুঃখ বিশ্বকাপ মঞ্চে তার দেশ নরওয়ের সুযোগ না পাওয়া। তাই তো হালান্ড চলে এসেছেন তালিকার দ্বিতীয় স্থানে। যেখানে আগে ছিলেন এমবাপ্পে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জিতলে ব্যালনের ট্রফি তার হাতে যাবে এটা বলা যায় একবাক্যে।
তৃতীয় স্থানে থাকা কিলিয়ান এমবাপ্পে চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ৪৩ গোল ও ১২টি অ্যাসিস্ট করেছেন। ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনাল খেললেও শিরোপা ঘরে তুলতে না ব্যর্থ তিনি। তবে ফাইনালে হ্যাটট্রিকসহ পুরো টুর্নামেন্টে ৭ ম্যাচ থেকে ৮ গোল করার পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন ২ গোল। আর ম্যাচ সেরা হয়েছেন ৪টিতে।
চতুর্থ স্থানে রয়েছে রিয়াল মাদ্রিদের ব্রাজিলিয়ান তরুণ সেনসেশন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ২২ গোল ও ২০ অ্যাসিস্ট করেছেন। জিতেছেন ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ ও উয়েফা সুপার কাপের শিরোপা। তার দল রিয়াল মাদ্রিদ পৌঁছে গেছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে। যেখানে প্রতিপক্ষ ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটি।
পঞ্চম স্থানে জায়গা করে নিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের তারকা করিম বেনজেমা। তিনি একলাফে ১৩ থেকে পাঁচে এসে ঢুকেছেন। চলতি মৌসুমে করেছে ২৬টি গোল। কপাল খারাপ থাকায় খেলতে পারেননি কাতার বিশ্বকাপ। পরে অবশ্য জাতীয় দল থেকেই অবসরে চলে যান। ইতোমধ্যে চলতি বছরে রিয়ালের হয়ে জিতেছেন ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ ও উয়েফা সুপার কাপের শিরোপা।
এই পাঁচজন ছাড়াও শীর্ষ ২০ এ রয়েছেন যারা
ভিক্টর ওসিমেন (নাপোলি), কাভিচা কোয়ারাটশেলিয়া (নাপোলি), কেভিন ডি ব্রুইনা (ম্যানচেস্টার সিটি), মার্কাস রাশফোর্ড (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), রবার্ট লেভানদোভস্কি (বার্সেলোনা), কাসেমিরো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), ব্রুনো ফার্নান্দেজ (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), বুকায়ো সাকা (আর্সেনাল), নিকোলো বোরেল্লা (ইন্টার মিলান), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জামাল মুসিয়ালা (বায়ার্ন মিউনিখ), জুড বেলিংহাম (বরুশিয়া ডর্টমুন্ড), মাইক মেইগনান (এসি মিলান), মার্টিন ওডেগার্ড (আর্সেনাল) ও জ্যাক গ্রিলিশ (ম্যানচেস্টার সিটি)।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।