জুমবাংলা ডেস্ক : ২০২৪ সালে বিশ্বের অনেক মুসলিম ব্যক্তিত্ব, ইসলামী চিন্তাবিদ, রাজনীতিবিদ ও দাঈর ইন্তেকাল হয়েছে। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন-
নিউ জার্সির ইমাম শায়খ হাসান শরিফ
গত ৪ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সির নিউ ইয়র্ক শহরের মুহাম্মদ মসজিদের ইমাম শায়খ হাসান শরিফ নিহত হয়েছেন। ওই সময় নিউ জার্সি রাজ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তিনি মসজিদের সামনে গুলিবিদ্ধ হন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান। পরে ইস্যুটি নিয়ে মুসলিম কমিউনিটিতে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয় ইমামের ঘাতককে খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির দাবি জানায় ইসলামী সংগঠনগুলো।
ইয়েমেনের ইসলামী ব্যক্তিত্ব ড. আবদুল মজিদ
গত ২২ এপ্রিল ইয়েমেনের বিখ্যাত ইসলামী দাঈ ও রাজনীতিবিদ ড. আবদুল মজিদ বিন আজিজ আল-জানজাদি ইন্তেকাল করেছেন। তিনি তুরস্কের ইস্তাম্বুলের একটি হাসপাতালে মারা যান। ১৯৪২ সালে ইয়েমেনের আইবিবি গভর্নরেটের শাআর অঞ্চলে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
আদন অঞ্চলে তিনি দরসে নেজামি পদ্ধতিতে প্রাথমিক পড়াশোনা করেন। এরপর মিসরের আইনে শামস বিশ্ববিদ্যালয়ে হিসাববিজ্ঞানে দুই বছর পড়ে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী শরিয়াহ নিয়ে পড়েন। ১৯৬৮ সালে ইয়েমেন রাষ্ট্র গঠনের পর তিনি প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ আল-সাল্লালের নির্দেশনা ও তথ্যবিষয়ক উপমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭৮ সালে তিনি সৌদি আরব গিয়ে পুনরায় শরিয়াহ নিয়ে পড়াশোনা করেন।
তখন তিনি সায়েন্টিফিক সাইন ইন কোরআন অ্যান্ড সুন্নাহ নামক একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। আশির দশকে তিনি আফগানিস্তানের জিহাদে অংশ নেন এবং তরুণদেরও অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত আল-ইসলাম রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম তিনি। এরপর তিনি আল-ঈমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
ইরাকের নির্বাসিত ইসলামী চিন্তাবিদ মুহাম্মদ আহমদ আল-রাশেদ
গত ২৭ আগস্ট বিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও সাংবাদিক আবদুল মুনয়িম সালেহ আল-আলী আল-ইজ্জি ইন্তেকাল করেছেন। যিনি মুহাম্মদ আহমদ আল-রাশেদ নামে পরিচিত। তিনি ছিলেন মুসলিম ব্রাদারহুডের অন্যতম চিন্তাবিদ।
১৯৩৪ সালে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকে সাহিত্যপ্রেমী ছিলেন। ফিলিস্তিন ইস্যুতে তিনি ছিলেন খুবই আপসহীন। বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন পাস করে তিনি আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছিলেন। এরপর দাওয়াত ও লেখালেখির কাজে নিমগ্ন হন। ১৯৭১ সালে দেশত্যাগে বাধ্য হয়ে কুয়েত যান। সেখানে বিখ্যাত আ‘মুজতামা পত্রিকা সম্পাদনা করেন। সেখানে থেকে পরে আমিরাত, ইন্দোনেশিয়া, ইউরোপ, মালয়েশিয়ায় থাকেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন শায়খ আবদুল করিম শাইখালি, শায়খ তাকি উদ্দিন আল-হিলালি, শায়খ মুহাম্মদ আল-কাজালফি কুরদি, শায়খ আমজাদ আল-জাহাবি, শায়খ মুহাম্মদ বিন হামাদ আল-আশাফি।
সিরিয়ান দাঈ ও রাজনীতিবিদ শায়খ ইসাম আল-আত্তার
গত ৫ মে সিরিয়ার ইসলামী রাজনীতিবিদ ও প্রখ্যাত দাঈ শায়খ ইসাম আল-আত্তার ইন্তেকালে করেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল ৯৭ বছর। তিনি জার্মানির স্পা রাজ্যের আচেন শহরে মারা যান। তিনি ছিলেন মুসলিম ব্রাদারহুডের সাবেক কন্ট্রোলার জেনারেল।
১৯২৭ সালে তিনি সিরিয়ার দামেশকে জন্মগ্রহণ করেন। বংশপরিক্রমায় তার পরিবার বিখ্যাত উমাইয়া মসজিদে হাদিস ও ফিকাহশাস্ত্র পাঠদানে পরিচিত। আসাদের শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের অন্যতম প্রতীক ছিলেন তিনি। তার স্ত্রী ছিলেন প্রখ্যাত ইসলামী দাঈ ও চিন্তাবিদ আলী তানতাবির মেয়ে বানান তানতাবি। ১৯৮১ সালে তার স্ত্রী সিরিয়া সরকারের হাতে গুপ্তহত্যার শিকার হন। তার বোন ছিলেন সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সংস্কৃতি ও গণমাধ্যমবিষয়ক সহকারী ড. নাজাহ আল-আত্তার। শায়খ ইসাম আল-আত্তার সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও গণ-অভ্যুত্থানের প্রধান সমর্থক ছিলেন। অসংখ্য গ্রন্থ, খুতবা, টিভি সাক্ষাৎকারে তিনি রাজনীতি, সমাজ, দর্শন নিয়ে দিকনির্দেশনামূলক দেন।
তুরস্কের রাজনীতিবিদ ফাতহুল্লাহ গুলেন
গত ২০ অক্টোবর তুরস্কের ইসলামী রাজনীতিবিদ ও সমাজসংস্কারক ফাতহুল্লাহ গুলেন ইন্তেকাল করেন। তিনি ৮৩ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে মারা যান। তিনি ছিলেন সমকালীন বিশ্বের একজন প্রভাবশালী মুসলিম চিন্তাবিদ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তুরস্কের গুলেন আন্দোলনের এ প্রতিষ্ঠাতা ১৯৯৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় স্বেচ্ছানির্বাসিত অবস্থায় বসবাস করেন।
১৯৪১ সালে তুরস্কের আরজুরাম অঞ্চলের কাজাহাসান এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। মায়ের কাছে পবিত্র কোরআন পাঠ করে এবং পিতার কাছে আরবি ও ফার্সি ভাষা শিক্ষা লাভ করেন। পাশাপাশি তিনি সুফিদের খানকায় যাতায়াতন করতেন। বিখ্যাত সমাজসংস্কারক বদিউজ্জামান সাঈদ নুরসির চিন্তাধারায় প্রবল প্রভাবিত ছিলেন তিনি। তিনি প্রায় ৬০টি গ্রন্থ রচনা করেন। তার এসব গ্রন্থ আরবি, ইংরেজি, ফ্রেঞ্চসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রথমদিকে সুসম্পর্ক থাকলেও ২০১৬ সালে সংঘটিত সামরিক অভ্যুত্থানে গুলেন মুভমেন্টের অনেকে জড়িত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। তার প্রতিষ্ঠিত হেজমত সংগঠনের সেবা ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম বিশ্বের অধিকাংশ দেশে রয়েছে। আফ্রিকা ও মধ্য এশিয়ায় সংগঠনটির হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।
আজ থেকে পূর্বাচলে শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা
ভারতের শীর্ষ আলেম আল্লামা কামারুদ্দিন আহমদ
ভারতের শীর্ষ আলেম ও হাজারো আলেমের শিক্ষক আল্লামা কামারুদ্দিন আহমদ গৌরকপুরী ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তিনি গতকাল ২২ ডিসেম্বর সকালে ইন্তেকাল করেন।
আল্লামা কামারুদ্দিন আহমদ ১৯৩৮ সালে উত্তরপ্রদেশের গৌরকপুরের বড়বলগঞ্জ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে তাকমিল (দাওরায়ে হাদিস) সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি দিল্লির মাদরাসায়ে আবদুর রবে প্রায় আট বছর শিক্ষকতা করেন। ১৯৬৬ সাল থেকে অদ্যাবধি তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে শিক্ষকতা করেন। ১৯৭৯ সাল থেকে তিনি মুহাদ্দিস হিসেবে হাদিস পাঠদান করেন। পাশাপাশি দারুল উলুম দেওবন্দের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদেও দায়িত্ব পালন করেন।
তথ্যসূত্র : আলজাজিরা, বিবিসি ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।