বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : ২০২৪ শেষ হতে চললো। বছরজুড়ে বাংলাদেশের স্মার্টফোনের বাজার ছিল বেশ সরগরম। নানা ফিচারে সাজানো নিত্য নতুন সব ফোন নিয়ে হাজির হয়েছে বিভিন্ন ব্র্যান্ড। সবগুলো না হলেও গ্রাহকদের মন জয় করতে পেরেছে এমন ফোনের সংখ্যা নেহাত কম নয়। ফ্ল্যাগশিপ থেকে শুরু করে বাজেট- সব ক্যাটাগরিতেই ভিন্ন ভিন্ন মডেলের স্মার্টফোন নিয়ে এসেছে পরিচিত, স্বল্প-পরিচিত ও অপরিচিত ব্র্যান্ডগুলো। এর মধ্যে অবশ্যই আছে সুপরিচিত ব্র্যান্ড শাওমি-ও।
২০২৪ সালে শাওমি তাদের রেডমি ব্র্যান্ডের বেশ কয়েকটি ফোন এনেছে বাংলাদেশে, যার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রেডমি ১৩সি, রেডমি নোট ১৩, রেডমি এ৩ ও রেডমি ১৩ মডেলগুলো। এছাড়া ফ্ল্যাগশিপ ক্যাটাগরিতে শাওমি ১৪ আলট্রা স্মার্টফোনটিও তাঁরা উন্মুক্ত করেছে বাংলাদেশী গ্রাহকদের জন্য। আজকের আলোচনায় আমরা ২০২৪ সালে বাংলাদেশের বাজারে শাওমি স্মার্টফোনের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া মডেলটি সম্পর্কে জানবো।
চলতি বছর দেশের বাজারে শাওমি’র সর্বাধিক বিক্রিত স্মার্টফোন কোনটি?
২০২৪ সালে দেশের বাজারে আসা শাওমি’র সকল স্মার্টফোনের মধ্যে সর্বাধিক বিক্রিত ফোনটি হচ্ছে রেডমি ১৩সি। গত বছরের ১০ নভেম্বর উন্মোচনের পর ফোনটি বাংলাদেশের বাজারে আসে চলতি বছরের জানুয়ারি’তে।
তবে শুধু দেশের বাজারেই নয়, শাওমি’র এই মডেলটি জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বের সেরা ১০ ফোনের তালিকাতেও। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (কোয়ার্টারে) বিশ্বের সেরা ১০টি ফোনের একটি ছিল শাওমির রেডমি ১৩সি।
রেডমি ১৩সি ফোনটির সাফল্য নিয়ে শাওমি বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার জিয়াউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘সকল ব্যবহারকারীর কাছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে শাওমি। শাওমি ফ্যানদের কথা মাথায় রেখে উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ও সাশ্রয়ী মূল্যের সংমিশ্রণে আমরা বাজারে শাওমি রেডমি ১৩সি নিয়ে আসি। যা গ্রাহকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া তৈরি করেছিল। বিশ্বজুড়ে ভক্তদের আস্থা ও সমর্থনের প্রতিফলন এটি।’
চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক কী কী ফিচার দিয়ে সাজানো এই বাজেট স্মার্টফোনটি।
ডিজাইন
বাজেট ফোন হলেও রেডমি ১৩সি’র ‘লুক এন্ড ফিল’ অনেকটা ফ্ল্যাগশিপ ফোনের মতোই। মসৃণ, আকর্ষণীয় ডিজাইনের ফোনটি ৮.০৯ মিলিমিটার পুরু, উচ্চতায় ১৬৮ মিলিমিটার ও প্রস্থে ৭৮ মিলিমিটার। ফলে খুব সহজেই ফোনটি হাতে ও পকেটে পুরে রাখা যায়। মিডনাইট ব্ল্যাক, নেভি ব্লু, গ্ল্যাসিয়ার হোয়াইট ও ক্লোভার গ্রিন- এই ৪টি রঙে পাওয়া যাচ্ছে ১৩সি মডেলটি। ফোনটির ওজন ১৯২ গ্রাম।
ডিসপ্লে
৬.৭৪-ইঞ্চির ডট ড্রপ এইচডি ডিসপ্লেতে আছে ১৬০০ * ৭২০ পিক্সেল রেজোলিউশন (২৬০ পিক্সেল পার ইঞ্চি), ৯০ হার্জ রিফ্রেশ রেট এবং ১৫০০: ১ কনট্রাস্ট রেশিও। এছাড়া কর্নিয়া গরিলা গ্লাস স্ক্রিনের ফোনটি’তে ব্রাইটনেস উপভোগ করা যাবে ৪৫০ নিটস (সাধারণ মোডে) ও ৬০০ নিটস (হাই ব্রাইটনেস মোডে)। সাথে আছে রিডিং মোডের সাপোর্টও।
প্রসেসর
স্থিতিশীল ও নির্ভরযোগ্য পারফর্মেন্সের জন্য রেডমি ১৩সি’তে আছে মিডিয়াটেকের হেলিও জি৮৫ অক্টা-কোর প্রসেসর, যেটি ২ গিগাহার্জ পর্যন্ত সিপিইউ স্পিড সাপোর্ট করে। প্রসেসরটি ১২ ন্যানোমিটার প্রযুক্তিতে তৈরি। হাই-এন্ড, ফ্ল্যাগশিপ ফোনের মতো না হলেও বাজেট ক্যাটাগরির ফোনের জন্য হেলিও জি৮৫ চিপসেটটির মাল্টিটাস্কিং ও গতির এক চমৎকার সমন্বয় প্রদান করতে সক্ষম। ফলে রেডমি ১৩সি ফোনটি’তে গেমিং, মুভি দেখা ও ভিডিও প্লেব্যাকের মতো কাজগুলো অনায়াসে করা যাবে বলেই দাবি শাওমি’র।
র্যাম ও স্টোরেজ
র্যাম-স্টোরেজ যুগলবন্দীর তিনটি ভিন্ন ভিন্ন অপশন রয়েছে এই ফোনটিতে। বিল্ট-ইন র্যাম ও স্টোরেজের সর্বোচ্চ সীমা হচ্ছে যথাক্রমে ৮জিবি ও ২৫৬জিবি। তবে ব্যবহারকারী চাইলে নিজের খরচে স্টোরেজ ক্যাপাসিটি ১টিবি পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারবেন।
বিল্ট-ইন র্যাম-স্টোরেজ ক্যাপাসিটির শুরু হচ্ছে ৪জিবি ও ১২৮জিবি দিয়ে। এছাড়া ৬জিবি র্যাম ও ১২৮জিবি স্টোরেজের একটি অপশনও রয়েছে ব্যবহারকারীদের জন্য।
ক্যামেরা
রেডমি ১৩সি ফোনটিতে রয়েছে এআই সক্ষমতার ট্রিপল ক্যামেরা, অর্থাৎ তিনটি ক্যামেরা রয়েছে এতে। ব্যাক-সাইডে অর্থাৎ ফোনটির পেছনে রয়েছে ৫০ মেগাপিক্সেলের মূল ক্যামেরা- যেটি দিয়ে ফুল এইচডি (হাই ডেফিনিশন) মানের অর্থাৎ ১০৮০ পিক্সেলের ভিডিও ধারণ করা সম্ভব যেখানে ৩০ এফপিএস (ফ্রেস পার সেকেন্ড)-এর সাপোর্ট পাওয়া যাবে। মূল ক্যামেরার পাশাপাশি পেছন দিকে ২ মেগাপিক্সেলের একটি সহায়ক ক্যামেরাও রয়েছে এতে।
ডিভাইসটির সামনের দিকে অর্থাৎ ফ্রন্টে আছে ৮ মেগাপিক্সেলের একটি সেলফি ক্যামেরা। এটি দিয়েও ৩০ এফপিএস-এ ফুল এইচডি (হাই ডেফিনিশন) মানের ভিডিও রেকর্ড করা সম্ভব। সেলফি ক্যামেরাতে রয়েছে একটি সফট-লাইট রিং, ফলে লো-লাইট কন্ডিশনেও ছবি তোলা ও ভিডিও করা যাবে অনায়াসে।
এছাড়া ফিল্ম ক্যামেরা, এইচডিআর মোড, নাইট মোড, পোর্ট্রেট মোড ও টাইম-ল্যাপস ফিচারগুলো ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে এই ফোনটির ক্যামেরা সিস্টেমে।
ব্যাটারি ও চার্জিং অপশন
৫০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার আওয়ার সক্ষমতার ব্যাটারি রয়েছে শাওমি’র এই বাজেট ফোনে। সাথে রয়েছে ১৮ ওয়াট পাওয়ার ডেলিভারির ইউসএসবি টাইপ-সি ফাস্ট চার্জিং সুবিধা। ফলে বেশ ভালো ব্যাটারি ব্যাকআপের পাশাপাশি ফোনটি দ্রুত চার্জ করতে পারবেন ব্যবহারকারী। তাই আউটডোর ব্যবহারের জন্য বেশ উপযোগী একটি ফোন এটি।
নেটওয়ার্ক এন্ড কানেকটিভিটি
ডুয়াল সিম ও মাইক্রোএসডি কার্ডের পাশাপাশি ৪জি মোবাইল কানেকটিভিটি উপভোগ করতে পারবেন ব্যবহারকারীরা। এছাড়া ওয়্যারলেস কানেকটিভিটি’র জন্য এতে পাচ্ছেন ৫ গিগাহার্জ ও ২.৪ গিগাহার্জ ব্যান্ডের ওয়াই-ফাই সাপোর্ট। আরও আছে ব্লুটুথ ৫.৩, এফএম রেডিও অ্যাক্সেস ও ৩.৫এমএম হেডফোন জ্যাক।
অপারেটিং সিস্টেম
ডিভাইসটি অ্যান্ড্রয়েড ১৩ ভিত্তিক শাওমির এমআইইউআই ১৪ থাকছে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে। অ্যান্ড্রয়েড ১৩-এর সকল সুবিধা অ্যাক্সেস করার পাশাপাশি শাওমির নেটিভ সফটওয়্যার সাপোর্টও উপভোগ করতে পারবেন ব্যবহারকারীরা।
অন্যান্য ফিচারসমূহ
রেডমি ১৩সি’তে আরও কিছু উল্লেখযোগ্য ফিচার রয়েছে যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছ এনএফসি বা নিয়ার ফিল্ড কানেকটিভিটি, এআই ফেস আনলক ও সাইড ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর। স্যাটেলাইট নেভিগেশনের জন্য থাকছে জিপিএস, গ্লোনাস, গ্যালিলিও ও বেইদো-এর সাপোর্ট। এছাড়া ভার্চুয়াল প্রক্সিমিটি সেন্সর, অ্যামবিয়েন্ট লাইট সেন্সর, অ্যাক্সিলারোমিটার ও ইলেকট্রোনিক কম্পাসের মতো ফিচারগুলো অ্যাক্সেস করতে পারবেন ব্যবহারকারীরা।
রেডমি ১৩সি’র দাম কত?
বিল্ট-ইন র্যাম-স্টোরেজ এর অপশন অনুযায়ী রেডমি ১৩সি স্মার্টফোনটির দামে ভিন্নতা রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে ফোনটির দাম শুরু ১৩,৯৯৯ টাকা থেকে, যেখানে আপনি পাবেন ৪জিবি র্যাম ও ১২৮জিবি স্টোরেজ। আর ১ হাজার টাকা যোগ করলে অর্থাৎ ১৪,৯৯৯ টাকায় আপনি পেয়ে যাবেন ৬জিবি র্যাম ও ১২৮জিবি স্টোরেজ। সর্বোচ্চ ৮জিবি র্যাম ও ২৫৬জিবি স্টোরেজ পেতে চাইলে খরচ করতে হবে ১৬,৯৯৯ টাকা। উল্লেখ্য, রেডমি ১৩সি ফোনটির দাম সম্পর্কিত তথ্য শাওমি বাংলাদেশের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত (২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা)।
কোথায় পাওয়া যাবে?
বাজেটের মধ্যে দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য শক্তিশালী ফোন যারা খুঁজছেন তাদের জন্য ভালো একটি অপশন হতে পারে শাওমি’র রেডমি ১৩সি ফোনটি। এই ফোনটির সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে শাওমি গত অক্টোবরে দেশের বাজারে নিয়ে আসে এর আপডেটেড সংস্করণ রেডমি ১৪সি।
এ প্রসঙ্গে শাওমি বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার জিয়াউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘শাওমি রেডমি ১৩সি’র সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এই বছর আমরা অত্যাধুনিক ফিচার সমৃদ্ধ শাওমি রেডমি ১৪সি নিয়ে এসেছি। আশা করছি এই স্মার্টফোনটিও গ্রাহকদের মাঝে জনপ্রিয়তা পাবে।’
রেডমি ১৪সি বাজারে আসায় এই মুহূর্তে শাওমি’র অফিশিয়াল স্টোরে রেডমি ১৩সি না-ও পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে অনলাইন-অফলাইন অন্যান্য চ্যানেল থেকে খুঁজে নিতে পারেন রেডমি ১৩সি। আবার আপনি চাইলে শাওমি’র অফিশিয়াল স্টোর, পার্টনার স্টোর ও রিটেইল চ্যানেলে রেডমি ১৪সি ফোনটিও একবার দেখে নিতে পারেন।
শাওমি সম্পর্কে
২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান শাওমি স্মার্টফোন জগতের বেশ পরিচিত নাম। দেশের বাজারেও শাওমি’র ফোনের সুখ্যাতি রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের বাজারে নিজেদের অবস্থান ক্রমাগত সুদৃঢ় করতে সক্ষম হয়েছে শাওমি।
‘হাম্মা হাম্মা’ গানে উদ্দাম ড্যান্স দিয়ে ঝড় তুললেন পাকিস্তানি যুবতী
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক কর্পোরেট ও ব্র্যান্ড পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইন্টারব্র্যান্ড-এর গ্লোবাল বেস্ট ব্র্যান্ড র্যাঙ্কিং-এ চলতি বছর টানা তৃতীয়বারের মতো বিশ্বের সেরা ১০০ ব্র্যান্ডের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে শাওমি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।