জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের ঘোষণায় জনগণ ও অর্থনীতিবিদদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে বাজেটের আকার, রাজস্ব আয় ও ঘাটতির মাত্রা। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের মোট ব্যয়ের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এই বিশাল বাজেট নির্ধারণের পেছনে রয়েছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক বাস্তবতা এবং সরকারের কৌশলগত লক্ষ্য।
Table of Contents
২০২৫ ২৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার: রাজস্ব, ঘাটতি ও খরচের বিশ্লেষণ
এবারের বাজেটে ব্যয়ের দিক থেকে লক্ষ্য করা যাচ্ছে একটি সংযত দৃষ্টিভঙ্গি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। সে তুলনায় এ বছর বাজেট কমানো হয়েছে ৭ হাজার কোটি টাকা। বাজেটের আকার জিডিপির ১২.৭ শতাংশ, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় অপেক্ষাকৃত সীমিত পরিসরের ইঙ্গিত দেয়। এটি রাষ্ট্রের আর্থিক ভারসাম্য রক্ষার কৌশলের একটি অংশ হিসেবে দেখা যেতে পারে।
বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে আসবে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত খাত থেকে আসবে ১৯ হাজার কোটি এবং কর ছাড়া আয় থেকে ৪৬ হাজার কোটি টাকা অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩.৬ শতাংশ। অর্থাৎ গত অর্থবছরের ৪.৬ শতাংশ ঘাটতির তুলনায় এবার এটি কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। এই ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ ঋণ ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ও অন্যান্য ব্যয় কাঠামো
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) এর বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমানো হয়েছে। এটি রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয়ের ক্ষেত্রে বাস্তবতার ভিত্তিতে বাজেট সীমিত রাখার প্রতিচ্ছবি।
পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা, যেখানে বেতন-ভাতা, ভর্তুকি, প্রণোদনা ও ঋণ পরিশোধে ব্যয়ের বড় একটি অংশ বরাদ্দ রয়েছে। সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ১০ থেকে ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা প্রদানও এই বাজেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
কর ব্যবস্থা ও করমুক্ত সীমা
কর ব্যবস্থায় এবার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা গেছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের কর কমে দাঁড়িয়েছে ২০ শতাংশ, যা বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক হতে পারে। মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার কমিয়ে ২৭.৫ শতাংশ করা হয়েছে এবং পুঁজিবাজারে ব্রোকারেজ হাউজের সিকিউরিটিজ লেনদেন কর শূন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
ব্যক্তিগত আয়কর কাঠামো অপরিবর্তিত থাকলেও ‘জুলাই যোদ্ধা’দের জন্য করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধি করে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি, প্রবৃদ্ধি এবং মূল্য পরিবর্তনের প্রভাব
বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫.৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ৬.৫ শতাংশ, যা বাস্তববাদী ও বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৩.৯৭ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৯.১৭ শতাংশে পৌঁছেছিল।
এবার বেশ কিছু পণ্য ও সেবার দাম বাড়বে যেমন কনভেনশন হল, নির্মাণ সামগ্রী, সিগারেট, মোবাইল ফোন, এলইডি লাইট, ফুড সাপ্লিমেন্ট ইত্যাদি। অন্যদিকে কিছু দ্রব্যের দাম কমবে যেমন এলপিজি সিলিন্ডার, দেশি স্যানিটারি ন্যাপকিন, তরল দুধ, হাসপাতালের বেড, ওষুধের কাঁচামাল ইত্যাদি।
বাজেটের এই অংশটি বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করেছে এই প্রতিবেদনে।
সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে এবার। এই খাতে ৯৫ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা মোট বাজেটের ১২.১৮ শতাংশ। এটি বিগত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নির্দেশ করে।
আরও পড়ুন: অর্থনীতি ও উন্নয়ন বিভাগে আরও বিশ্লেষণ।
এই বাজেট প্রস্তাব একটি অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার প্রয়াস, যার মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি এবং সামাজিক নিরাপত্তার উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করছে।
FAQs
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার কত?
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা।
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কত ধরা হয়েছে?
এই বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে, যার মধ্যে এনবিআর ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করবে।
বাজেট ঘাটতির পরিমাণ কত?
প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩.৬ শতাংশ।
কোন কোন পণ্যের দাম বাড়ছে?
এবারের বাজেটে মোবাইল ফোন, সিগারেট, এলইডি লাইট, বিদেশি মাংস, স্যালমন ফিসসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম বাড়ছে।
করমুক্ত আয়সীমা কী অপরিবর্তিত রয়েছে?
হ্যাঁ, ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়সীমা অপরিবর্তিত রয়েছে, তবে ‘জুলাই যোদ্ধা’দের জন্য নতুন সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের হঠাৎ অবসর : কিংবদন্তির বিদায়ঘণ্টা
এডিপির আকার কত নির্ধারণ করা হয়েছে?
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।