আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন ঘটনাবলীতে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত গত এক দশক ধরে প্রায় একই নীতি পোষণ করে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি বিভিন্ন ইস্যুতে এই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটেছে। আরববিশ্বে স্বৈরসরকারগুলোর বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত সৌদি আরবের নীতি অনুসরণ করে চলেছে। বিশেষ করে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ওই দুই দেশ একজোট হয় এবং আমিরাত সৌদি আরবের প্রধান মিত্রে পরিণত হয়। খবর পার্সটুডে’র।
কিন্তু গত দুই বছরের ঘটনাবলীতে দেখা গেছে ইয়েমেনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সৌদি আরব সংযুক্ত আরব ও আমিরাতের মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য বিরাজ করছে। আমিরাত দক্ষিণ ইয়েমেন থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করে নেয়ায় এটাকে কেন্দ্র করে ২০১৯ সালে প্রথম মতপার্থক্য শুরু হয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্স সম্প্রতি আবুধাবি ও রিয়াদের মধ্যকার তীব্র মতপার্থক্যের কথা উল্লেখ করে এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে লিখেছে, ইয়েমেন থেকে আমিরাতের সেনা প্রত্যাহারকে কেন্দ্র করে প্রথম সৌদি আরবের সঙ্গে আমিরাতের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। কেননা ইয়েমেনের বিরুদ্ধে ব্যয়বহুল এই যুদ্ধে রিয়াদকে একা ফেলে রেখে আমিরাত ওই যুদ্ধ থেকে নিজেদেরকে গুটিয়ে নেয়। আমিরাত সরকার কেবলমাত্র তাদের সমর্থিত দক্ষিণাঞ্চলীয় অন্তর্বর্তী পরিষদের প্রতি সমর্থন দিতে থাকে যা কিনা সৌদি সমর্থিত বাহিনীকে সংকটে ফেলে দেয় এবং এটা রিয়াদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।
সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি আরেকটি কারণ হচ্ছে কাতার ইস্যু। কেননা সৌদি সরকার আমিরাত, বাহরাইন ও মিসরের সঙ্গে কোন শলাপরামর্শ না করেই কাতারের সঙ্গে উত্তেজনা সৃষ্টি কোরে হঠাৎ এই দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল। আরব রাজনৈতিক বিশ্লেষক আব্দুল বারি আতাওয়ান এ ব্যাপারে এক নিবন্ধে লিখেছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত মনে করে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরবের কাছ থেকে তারা ধোঁকা খেয়েছে। যেহেতু আমিরাত দক্ষিণ ইয়েমেন থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করার কারণে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান অসন্তুষ্ট ছিলেন সে কারণেই কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে তিনি আমিরাতের বিরুদ্ধে এক ধরনের প্রতিশোধ নিলেন।
সৌদি ও আমিরাতের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টির তৃতীয় কারণ হচ্ছে দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করাকে কেন্দ্র করে। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে আমিরাত হচ্ছে প্রথম আরব দেশ যে কিনা গত বছরের সেপ্টেম্বরে দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছে। আবুধাবির এই পদক্ষেপের পর রিয়াদও তেলআবিবের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেবে বলে আমিরাত সরকার ভেবেছিল। এমনকি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পাম্পেও এবং ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। কিন্তু ওই সাক্ষাতে তেল আবিবের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে তিনি কোনো কথা না বলায় আবুধাবি যারপরনাই প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয় রিয়াদ এর উপর।
সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের মধ্যকার সম্পর্ক অবনতির যথেষ্ট কারণ হচ্ছে তেল উত্তোলনকারী দেশগুলোর জোট ওপেকের নীতিমালা বাস্তবায়ন নিয়ে। আমিরাত কোন শর্ত ছাড়াই তেল উত্তোলন বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছে যদিও রিয়াদ তার বিরোধিতা করেছে। সৌদি আরবের জ্বালানিমন্ত্রী শাহজাদা আব্দুল আজিজ বিন সালমান সম্প্রতি ব্লুমবার্গ টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেছেন ওই দাবির কারণে আবুধাবি ওপেকে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।
যাইহোক দিন যতই গড়াচ্ছে বিভিন্ন ইস্যুতে ততই সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে। আগামীতে পরিস্থিতি কোন দিকে যাই সেটাই এখন দেখার বিষয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।