জুমবাংলা ডেস্ক : পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্নাতক পর্যায়ে গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ পরীক্ষা পদ্ধতি থেকে সরে এসে নিজস্ব ভর্তি প্রক্রিয়ায় আগ্রহ দেখিয়েছে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়। চলতি বছর সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘একক ভর্তি পরীক্ষা’ পদ্ধতি বাস্তবায়ন হয়নি।
২২টি সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরীক্ষা পরিচালনায় নেতৃত্বের সংকট দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে উপাচার্যদের মধ্যে মতবিরোধও স্পষ্ট। কে সভা ডাকবে? কোথায় সভা হবেÑ পরীক্ষার আয়োজন নিয়ে কোনো আলোচনায় বসতে পারেননি উপাচার্যরা। এ ছাড়াও এই গুচ্ছ থেকে সরে যাওয়ারও চেষ্টা করছে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। ২২ গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জেনেছি।’
গুচ্ছের পরীক্ষা প্রস্তুতির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য (ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘এটি (পরীক্ষার আয়োজন করা) কমিশনের দায়িত্ব নয়। বিশ্ববিদ্যালয়েরই দায়িত্ব ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার। আমরা (ইউজিসি) শুধু সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে থাকি। পরীক্ষা আয়োজনের জন্য ইতোমধ্যে কমিশন নোটিশ করেছে। এখন জাতীয় নির্বাচনের পর এর অগ্রগতি দেখব।’
এ বছর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এ ‘একক ভর্তি পরীক্ষা’ নেওয়ার চেষ্টা করে ইউজিসি। গত অক্টোবর মাসে এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ খসড়া করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। তবে তা আর চূড়ান্ত রূপ পায়নি। ফলে ভেস্তে গেছে দীর্ঘদিনের আলোচিত এ পদ্ধতি।
মন্ত্রণালয় ইউজিসির মতের অনৈক্য : শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ২৭ নভেম্বর এ সক্রান্ত চিঠিতে ইউজিসিকে জানিয়ে দেয়, ‘জাতীয় সংসদ না থাকা অবস্থায় অর্থাৎ সংসদ বিলুপ্ত থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা বিবেচনায় অধ্যাদেশ জারি করে থাকেন। বর্তমানে দেশে কোনো জরুরি অবস্থা বিদ্যমান নেই বিধায় এক্ষেত্রে অধ্যাদেশ প্রণয়নের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ক্ষুব্ধ হয়, ইউজিসি কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া নির্ধারণের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ না করে সরাসরি অধ্যাদেশের খসড়া পাঠিয়েছে।
‘বিশ্ববিদ্যালয় এর কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ’Ñএর চেয়ারম্যান হিসেবে ইউজিসির চেয়ারম্যানেরই দায়িত্ব পালনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে খসড়া অধ্যাদেশে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের আপত্তি হচ্ছে- ‘যিনি ইতোমধ্যে একটি বিধিবদ্ধ সংস্থার প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত। এ পরিপ্রেক্ষিতে তার আরেকটি কর্তৃপক্ষের প্রধানের দায়িত্ব পালন করা সমীচীন হবে না।’ এই চিঠির পর ইউজিসি একক ভর্তিপরীক্ষা পদ্ধতি থেকে সরে গিয়ে আগের পদ্ধতিতে ভর্তি নেওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
গত ২১ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এ স্নাতক পর্যায়ে গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বরাত দিয়ে নতুন চিঠি ইস্যু করে। চিঠিতে বলা হয়- ‘পূর্বের ন্যায় যেসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষা সম্পাদনে সম্মত আছে তাদের অন্তর্ভুক্ত করে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির কার্যক্রম সম্পন্ন করা যেতে পারে।’
উপাচার্যরা গুচ্ছ নিয়ে দোলাচলে : গুচ্ছে থাকা ২২টি সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে চার-পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় এর উপাচার্যদের সঙ্গে কথা বললে জানান, মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গুচ্ছভর্তির বাধ্যকতা দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে আগের গুচ্ছ থাকা কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে সরে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করছে।
একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য বলেন, রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চ্যান্সেলরের ইচ্ছা অনুযায়ী বিগত সময়ে যেসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছভর্তি পরীক্ষায় যুক্ত ছিল, তাদের অংশগ্রহণে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছপদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় থাকার আদেশ ছিল। অথচ মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে দুর্বল ভাষা (‘সম্মত আছে’ ‘যেতে পারে’) প্রয়োগ করা হয়েছে। অর্থাৎ সরকারের বাঁধন আঁটোসাঁটো দেখালেও আসলে মোটেই শক্ত নয়। এখন যারা সম্মত হবেন না, তারা গুচ্ছ থেকে বের হতে পারবেন।
চট্টগ্রাম বিভাগের একটি বিশ্ববিদ্যালয় এর উপাচার্য এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এতদিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা গ্রহণের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল। এই বিশ্ববিদ্যালয় এর সাবেক উপাচার্যের মৃত্যুর পর কে এই বৃহৎ পরীক্ষা গ্রহণের নেতৃত্ব দেবেন? নতুন সেশনে ভর্তির আয়োজন নিয়ে কে বৈঠক ডাকবেন কিছুই এখনো জানি না। কেউ কিছু বলতে পারছেন না। কোনো আলোচনা নেই।
দায়িত্ব নিয়ে টানাটানি : একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় এর উপাচার্য এই ২২ গুচ্ছের নেতৃত্ব দিতে চান। অথচ ওই উপাচার্য কোনো দিন বিশ্ববিদ্যালয় এর ডিন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেননি। তা হলে এই পরীক্ষা কীভাবে সামলাবেন।
আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয় এর এক উপাচার্য দায়িত্ব নিতে চান। তিনি আগে একটি বিশ্ববিদ্যালয় এ ডিনের দায়িত্ব পালনকালে পরীক্ষা আয়োজন করতে গিয়ে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে প্রশ্নবিদ্ধ ছিলেন। গুচ্ছের সারাদেশের লাখ-লাখ শিক্ষার্থীর পরীক্ষার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব তাকে কীভাবে দেওয়া হবে। এমনকি এই উপাচার্যের ব্যক্তিগত ব্যবহার নিয়েও আপত্তি আছে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এর উপাচার্যের। ওই ব্যক্তির উদ্দেশে তারা বলেন, তিনি নিজের সিদ্ধান্ত সবাইকে চাপিয়ে দিতে চাইবেন। সিনিয়রদের সম্মান দিয়ে কথাও বলতে জানেন না। তারা বলেন, ভালো খবর হচ্ছে নতুন আরও তিনটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ২২ গুচ্ছের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, চূড়ান্ত হয়নি।
২২টি গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় এবং চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য বিশাল সুখবর, পাবেন ৮ হাজার টাকা সহায়তা
উল্লেখ্য, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য সার্বিক ভর্তি প্রক্রিয়া সহজ করতে ২০২০-২০২১ সেশন থেকে শু্ছভর্তি পরীক্ষা। স্বায়ত্তশাসিত ও বিশেষায়িত ছাড়া প্রথমবার ২০ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শুরু হলেও পরের বছর থেকে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে শুরু হয় এ ভর্তি প্রক্রিয়া।
সূত্র : আমাদের সময়
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।