মুন গ্রুপের কর্ণধার মিজানুর রহমান অভিনব কায়দায় রাজধানীর গুলশানে জমি দখল করেছেন। এজন্য তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে সিআইডি পুলিশ। জমির ভুয়া মালিক সাজার পর জাল দলিল করার বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে।
৫৪ নম্বর সড়কের তিন নম্বর প্লটে ১৯ কাঠা তের ছটাক এই জমিটি গুলশান-২ এলাকায় অবস্থিত। স্বাধীনতার আগে ডিআইটির কাছ থেকে লিজ দেন মোঃ ইসা। পরে আব্দুল মালেক নামের এক ব্যক্তি তার কাছ থেকে জমিটি কিনে নেন। কবি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত সৈয়দ আল ফারুক আব্দুল মালেকের কাছ থেকে জমিটি কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
৯০ এর দশকের ঘটনা এটি। পরবর্তী সময়ে বায়না মূল্যের প্রায় পুরোটাই পরিশোধ করেন তিনি। পাওয়ার অব এটর্নি হিসেবে জমির উপর অধিকার পান সৈয়দ আল ফারুক। রাজউক সেই আমমোক্তারনামা দলিল অনুমোদন করেন। এরপর শহীদ আল ফারুক ৬তলা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করেন যার ডিজাইন অনুমোদন দেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
পরবর্তী সময়ে জমিতে নিজের নামে রেজিস্ট্রি করা কাজ শুরু করেন আল ফারুক। অনুসন্ধানের পর ফারুক দেখতে পান ভিন্ন এক ব্যক্তির ভিন্ন এক মামলার নম্বর। তবে এই জমি নিয়ে হাইকোর্টের কোন আদেশ ছিল না। পুলিশ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি কারণ তিনি পুলিশকে ম্যানেজ করে নিতে পারতেন।
ঠিক এই সময় আত্মপ্রকাশ করেন মিজানুর রহমান। প্রথমে আবদুল মালেকের কাছ থেকে নিজের নামে জমি রেজিস্ট্রি করে নেওয়ার চেষ্টা চালান তিনি। তবে আবদুল মালেক এজন্য বিপুল অঙ্কের টাকা দাবি করায় সেই উদ্যোগ ভেস্তে যায়। এরপরই শুরু হয় সেই অভিনব প্রতারণা।
সিরাজুল হক সিরাজ নামের এক ব্যক্তিকে আবদুল মালেক সাজিয়ে তার নামে নতুন একটি পাসপোর্ট তৈরি করেন মিজান। সেই পাসপোর্ট তৈরিতে ব্যবহার করেন জাল জন্মসনদ। এই পাসপোর্টে শুধু সিরাজের ছবি ব্যবহার করা হয়, ঠিক রাখা হয় আবদুল মালেকের সকল তথ্য। জাল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করতে গেলে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে এই পন্থা অবলম্বন করেন মিজান।
পরে জাতীয় পরিচয়পত্রের বদলে পাসপোর্ট ব্যবহার করে সেই ভুয়া আবদুল মালেকের কাছ থেকে জমি ক্রয় দেখিয়ে তৈরি করা হয় জাল দলিল। এবার জমি দখলের পালা। ২০১২ সালের ১৩ ডিসেম্বর রাতে একদল সন্ত্রাসী নিয়ে জমিটি জোর করে দখলে নেন মিজান। সেখানে টানিয়ে দেন আরেক জাল সাইনবোর্ড, যাতে হাইকোর্টের একটি মামলার নম্বর দিয়ে বলা হয় আদালতের আদেশে জমির মালিক মিজান।
ভুক্তভোগী ফারুক পুলিশের শরণাপন্ন হলে পুলিশ জানিয়ে দেয় হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে তারা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে না। আসলে আগেই পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে গুলশান থানার ওসি পর্যন্ত সবাইকে ম্যানেজ করে রেখেছিলেন মিজানুর রহমান।
আল ফারুকের যে ডিজাইন অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল সেখানেই ভবন নির্মাণ করেন তিনি। এভাবে জাল দলিল তৈরি করা এবং জমি দখলের জন্য আদালতে মামলা করেন আল ফারুক। পুলিশ সিরাজুল হককে গ্রেপ্তার করেন ও দুই আসামি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অপকর্মের স্বীকারোক্তি দেন। গত ডিসেম্বরে আদালতে মিজানুর রহমান, সিরাজুল হক সিরাজ, আব্দুল মালেক, শহিদুল হক চৌধুরী জুয়েলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলাটির অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে সিআইডি পুলিশ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।