জুমবাংলা ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসনের কাছে লেখা মার্কিন কংগ্রেসের ৬ সদস্যের চিঠির সত্যতা চ্যালেঞ্জ করে পাল্টা চিঠি পাঠিয়েছে কংগ্রেস অব বাংলাদেশি আমেরিকান ইনকরপোরেশন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে দেওয়া ২৬৭ প্রবাসী বাংলাদেশীর ওই চিঠিতে কংগ্রেসম্যানের চিঠিটিকে অসত্য বলেও দাবি করা হয়েছে।
গত ২৬ আগস্ট বাইডেন প্রশাসনের কাছে চিঠিটি দেয় আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসাবসরত বাঙালিদের সংগঠন কংগ্রেস অব বাংলাদেশি আমেরিকান ইনকরপোরেশন। সেখানে স্বাক্ষর করেছেন ২৬৭ জন সদস্য।
কংগ্রেসম্যানদের জবাব দেয়া চিঠিতে স্বাক্ষর করা বাংলাদেশি আমেরিকানদের মধ্যে রয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, মার্কিন সরকারি উচ্চপদে কর্মরত বাংলাদেশি এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত তরুণরা।
ওই চিঠিতে বলা হয়, বাইডেন প্রশাসনের কাছে ৬ কংগ্রেস সদস্যের লেখা চিঠিতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে মিথ্যা ও অসম্পূর্ণ তথ্য লেখা হয়েছে। এতে গর্বিত বাংলাদেশি হিসেবে তাদের অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে।
চিঠিতে আরো জানানো হয়, গত এক দশকে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, নারী-পুরুষের সমানাধিকার, নারী উন্নয়ন প্রগতি, ধর্মীয় সহিষ্ণুতাকে বিবেচনা না করে খুবই সংকীর্ণ আর একচোখাভাবে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করা হয়েছে। সংগঠনের সদস্যরা চিঠিতে মনে করিয়ে দেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত সন্ত্রাসী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীসহ বাংলাদেশবিরোধী দলগুলো বিভিন্ন সময় টাকার বিনিময়ে লবিস্ট ফার্ম দিয়ে এসব অপপ্রচার চালিয়ে থাকে।
চিঠিতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ এবং বাংলাদেশী খ্রীষ্টান কমিউনিটি প্রধানের বক্তব্য তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে সকলেই সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের শন্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা এবং অর্জন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাতিসংঘের হয়ে শান্তিরক্ষা করতে গিয়ে বিদ্রোহীদের হাতে নিহত বাংলাদেশীদের আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশে বিচ্ছিন্ন দুয়েকটি ঘটনার জন্য বিশাল অবদান আর আত্মত্যাগ কি অস্বীকার করবে জাতিসংঘ?
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে বলা হয়, বিশ্ব মানবতা রক্ষায় ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ প্রায় ১৪ লাখ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দেয়। এত বিশাল সংখ্যক উদ্বাস্তু পৃথিবীর আর কোন দেশ একসাথে আশ্রয় দেয়নি উল্লেখ করে মানবতা রক্ষায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ও প্রধানমন্ত্রীর অবদান তুলে ধরা হয়। শেখ হাসিনা নিজ দেশের স্বার্থের কথা না ভেবে এত বিশাল সংখ্যক অসহায় উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দিয়ে জাতিসংঘ থেকে ‘মাদার অব ইউমিনিটি’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
গণতন্ত্র নস্যাতের অভিযোগের জবাবে বাংলাদেশি আমেরিকানদের সংগঠন অতীতের গণতন্ত্র ধ্বংসকারী বিএনপি-জামাত-শিবিরের সন্ত্রাস ও একনায়কতান্ত্রিক শাসনের কথা উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ২৪৭ তম স্বাধীনতা দিবস পালন করলেও তাদের গণতন্ত্র,, মানবাধিকার ও ধর্মীয় অধিকার নিয়ে প্রতিনিয়ত নানা সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে । সে তুলনায় ৫২ বছর বয়সী বাংলাদেশের উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে কি না, সেই প্রশ্ন করা হয় মার্কিন প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে লেখা চিঠিতে।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং মানবতা উন্নয়নের চারটি দিক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়:
প্রথমত, টানা ৫ বার দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া বিপদগ্রস্ত বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারই দুর্নীতি দমনে কার্যকর ও সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশের নানা পর্যায়ে দুর্নীতি কমে আসছে । দীর্ঘ সময় অবৈধ সামরিক শাসক ও স্বৈরশাসক শাসকের আমলে দুর্নীতির শিকড় এত গভীরে বিস্তার লাভ করেছিল যে, রাতারাতি তা নির্মুল করা সম্ভব নয়।
দ্বিতীয়ত, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানসহ সামরিক শাসকদের দুঃশাসন ও ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত বাংলাদেশ ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রকৃত গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসে। ইতিহাস থেকে আমরা জানি দীর্ঘদিন সামরিকশাসিত একটি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা কোনো সহজ কাজ নয়। তারপরও বর্তমান সরকার চেষ্টা করছে আন্তর্জাতিক মানের গণতান্ত্রিক ভাবধারায় বাংলাদেশকে উন্নীত করতে।
তৃতীয়ত, রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিরোধী মতকে দমন-নিপীড়ন ও হত্যার রাজনীতি শুরু হয়েছিল বিএনপি-জামাতসমর্থিত ও সামরিক শাসকদের আমল থেকে। সেখান থেকে বাংলাদেশকে আইনের শাসনে ফিরিয়ে এনে সন্ত্রাস-মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদের প্রতি জিরো টলারেন্স নীতি দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সুশাসনের ধারায় ফিরছে ।
চতুর্থত, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং একইসাথে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের মার্কিন বন্ধুদের আঞ্চলিক নিরাপত্তা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার উপর নির্ভর করে। বাংলাদেশে আবার যদি বিএনপি-জামাত সমর্থিত সরকার গঠিত হয়, তাহলে এ অঞ্চলে আগের মতো মৌলবাদের বিস্তার লাভ করবে। যা প্রতিবেশী দেশ ভারতের জন্যও হুমকিস্বরূপ। ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত এ বিএনপি-জামায়াত সরকারের ছত্রছায়াতেই এ অঞ্চলে ইসলামি জিহাদি আর সন্ত্রাসী গোষ্ঠির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হয়েছিল, যা ছড়িয়ে পড়েছিল দক্ষিণ পূর্ব ভারতের ৭ টি রাজ্যে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।