জুমবাংলা ডেস্ক : ২৯০ টাকা কেজি গরুর মাংস, ৮০ টাকা কেজি পোলাও চাল, ১২০ টাকা লিটার সয়াবিন তেল আর ৪৫ টাকায় চিনি! আর এসব পণ্য কিনলে উপহারে মিলছে সেমাই, কিসমিস, বাদাম, গুঁড়োদুধ, মাংসের মসলা!
এমনই বাজার খুলেছিল যশোরের আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থা। ‘মধ্যবিত্তের ঈদ বাজার’ নাম দিয়ে এভাবেই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের পাশে দাঁড়িয়েছে আইডিয়া সমাজ কল্যাণ সংস্থা। এখানে বাজারের মোট ১ হাজার ২৭০ টাকার পণ্য একজন ক্রেতা কিনেছেন মাত্র ৫৩৫ টাকায়।
রমজানের একমাস সফলভাবে ‘লস প্রজেক্ট’ শেষ করার পর ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিতে স্থাপন করা হলো এ ঈদবাজার।
মঙ্গলবার যশোর শহরের খড়কি এলাকায় আইডিয়া সমাজ কল্যাণ সংস্থা চত্বরে বসেছিল ব্যতিক্রমী এই ‘মধ্যবিত্তের ঈদ বাজার’।
রমজানে অর্ধেকেরও কম মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনা পরিবারগুলোসহ মোট ৫৫৭টি পরিবার এ ঈদের বাজার করেছে।
আইডিয়ায় ঈদবাজার করতে আসা খড়কি রেললাইন এলাকার বৃদ্ধা আমেনা বেগম বলেন, স্বামী নেই। ছেলেরা ঠিকমতো দেখে না। কবে গরুর গোস্ত খাইছি মনে নেই। ঈদের দিন গরুর গোস্ত খাতি পারব। অল্প টাকায় দেচ্চে বইলে কিনতি পারিচি।
খড়কি কবরস্থান এলাকার ভাড়াটিয়া রিকশাচালক আনোয়ারের স্ত্রী নাসিমা বেগম বললেন, রমজান মাসে কম দামে চাল, তেল, চিড়ে, ছোলা কিনিছি। এখন অর্ধেকের কম দামে গরুর গোস্ত, পোলাও চাল পাচ্ছি। আমি আল্লার কাছে দোয়া করি, এরা যেন আর বেশি বেশি মানষির জন্যি করতি পারে।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পলাশ হোসেন এই বাজার থেকে পণ্য ক্রয় করে বলেন, ঈদের দিন হয়তো ব্রয়লার কিনতাম ছেলেমেয়ের জন্য। পোলাও কিংবা গরুর মাংসের কথা ভাবনায়ও আসত না। সেখানে এই সংস্থার জন্যে আমরা সাধ্যের মধ্যে ক্রয়ক্ষমতা পেয়েছি। এবার ঈদে আমার ছেলেমেয়েও পোলাও-মাংসের স্বাদ নিতে পারবে।
আয়োজকরা জানান, যশোরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আইডিয়া সমাজ কল্যাণ সংস্থার ‘আইডিয়া-সানাবিল লস প্রোজেক্টের অধীনে ‘মধ্যবিত্তের ঈদ বাজার’ এ মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত ৫৫৭টি পরিবার বাজার করতে পেরেছে। রমজান মাসব্যাপী প্রতিষ্ঠানটি ‘আইডিয়া-সানাবিল লস প্রোজেক্ট’ এর আওতায় ৫৫৭টি মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় ৯টি পণ্য বাজারদরের অর্ধেক মূল্যে বিক্রি করেছে; ৪র্থ সপ্তাহে এসে ‘মধ্যবিত্তের ঈদ বাজার’ এর মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হচ্ছে এই প্রকল্প।
‘মানবকল্যাণে আমরা ঠকতে চাই’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে শিক্ষার্থীদের বসানো এই ভিন্নধর্মী এই বাজার দেখতে মঙ্গলবার দুপুরে সেখানে যান যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান, স্থানীয় সরকার বিভাগ যশোরের উপ-পরিচালক রফিকুল হাসানসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান শিক্ষার্থীদের এই মহতী উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, মাসব্যাপী আইডিয়ার এই ভিন্নধর্মী বাজার রীতিমতো সাড়া ফেলেছে সারা দেশে। যশোরের একঝাঁক স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থী এভাবে যোগ হয়ে এই ভালো কাজ করছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয় ও অনুকরণীয়।
আইডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান উপদেষ্টা সহকারী অধ্যাপক মো. হামিদুল হক শাহীন বলেন, মধ্যবিত্তের ঈদ বাজার কোনো দান নয়, ত্রাণ নয়- বরং মধ্যবিত্তের সাধ্যের মধ্যে ক্রয়ক্ষমতা ফিরিয়ে আনার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। একঝাঁক শিক্ষার্থী যোগ হয়ে মাসব্যাপী মানবকল্যাণে ঠকতে চাওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিল রমজান মাসব্যাপী। সেখানে যুক্ত হয়েছিলেন নানান বিত্তবান ও চিত্তবান মহৎ মানুষেরা। সাধ্য থাকলেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর লাভের লোভের নির্মম শিকার হয়ে বহু মধ্যবিত্ত পরিবারের সাধ্যের বাইরে ঈদ বাজারের পণ্য সামগ্রী। আমরা যোগ হয়ে চেষ্টা করেছি কিছুসংখ্যক মধ্যবিত্ত পরিবারের ঈদ আনন্দের শামিল হওয়ার এবং সারা দেশের জন্য একটি মডেল উপস্থাপনের- এভাবে সবাই মিলে ভালো থাকা যায়।
বাজার পরিচালনায় উপস্থিত ছিলেন আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস, আইডিয়া যুব উন্নয়ন কেন্দ্রের সভাপতি তানজিয়া জাহান, আইডিয়া স্পোকেনের কো-অর্ডিনেটর নাবিলা সুলতানা, ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম উইনির সিইও মল্লিকা আফরোজসহ আইডিয়ার স্বেচ্ছাসেবকরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।