জুমবাংলা ডেস্ক : ‘আব্দুল্লাহ আমাদের প্রথম সন্তান। প্রথম সন্তান নিয়ে সবারই অনেক আশা-আকাঙ্খা থাকে। আমাদেরও ছিল। বাবার নামের সঙ্গে মিল রেখে তার নাম রেখেছি। কিন্তু জন্মের একদিন পরই আমার বাচ্চাটাকে চুরি করে নিয়ে যায়। তিন দিন পর বাচ্চাকে ফিরে পেয়েছি। এই তিন দিন যে কেমন কেটেছিলো আমরা জানি। মনে হয়েছিলো, দুনিয়া থেকে সব হারিয়ে ফেলেছি।’
এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে চুরির পর উদ্ধার হওয়া সেই নবজাতক আব্দুল্লাহর বাবা হিরন। সন্তানকে ফিরে পাওয়ায় আল্লাহর দরবারে লাখো শুকরিয়া জানান তিনি। সাংবাদিক, পুলিশসহ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
গত ৩১ আগস্ট দুপুরে ঢামেক হাসপাতালের ১০৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে চুরি হয় হিরন-শাহিনা দম্পত্তির ছেলে আব্দুল্লাহ। ওই দিনই শিশু চুরির ঘটনায় শাহবাগ থানায় অপহরণের অভিযোগে মামলা করেন শিশুটির বাবা। এরপরই শিশুটির খোঁজে মাঠে নামে পুলিশ, র্যাবসহ একাধিক সংস্থা। ৩ দিন পর ২ সেপ্টেম্বর রাতে নবজাতক আব্দুল্লাহকে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থেকে উদ্ধার করে শাহবাগ থানা পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় তিন জনকে। এরা হলেন-নুসরাত জাহান, তার শাশুড়ি মোসা. নাহার বেগম ও ননদ নাদিরা ওরফে খুরশিদা। নুসরাতের স্বামী নাজমুল হোসেন তুষার পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
রোববার মা-মেয়ে নাহার বেগম ও নাদিরাকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন এবং ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নুসরাতকে কাস্টডি ওয়ারেন্ট ইস্যুর আবেদন করে পুলিশ। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিমের আদালত মা-মেয়ের এক দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। আর নুসরাতকে সুস্থ সাপেক্ষে আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেন।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় শিশুটির বাবা হিরনের সঙ্গে। বাচ্চা কেমন আছে জানতে চাইলে হিরন বলেন, সবার দোয়ায় ভালো আছে। মায়ের বুকের দুধ খাচ্ছে। আমাদের প্রথম বাচ্চা। বাচ্চাকে হারানোর পর হতাশার মধ্যে ছিলাম। মনে হয়ছিল, এই বুঝি ছেলেটাকে হারিয়ে ফেললাম। বাঁইচা থেকে লাভ কী। আল্লাহর রহমতে ফিরে পেয়েছি। সবাই অনেক সাহায্য করেছে।
মা ও স্ত্রীর কথা উল্লেখ করে বলেন, বাচ্চাকে ফিরে পেয়ে ওর মা তো মহাখুশি। বাচ্চা পেয়ে সব ভুলে গেছে। এখন দেখলে মনে হয় না ও অসুস্থ। আর আম্মা তো তিন দিন ধরে খাওয়া-দাওয়া করেনি। এখন নাতিকে নিয়ে খেলছে, তার সাথে কথা বলছে।
যাদের জন্য এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চান হিরন। তিনি বলেন, এদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হওয়া উচিত। যেন আর এভাবে কোনো হাসপাতাল থেকে কোনো মায়ের বুক খালি করে নিয়ে যাওয়ার সাহস না পায়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার বাবুপুরা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ দেলোয়ার হোসাইন বলেন, নবজাতককে উদ্ধার করে আমরা মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছি। তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পলাতক এক আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
কোনো চক্র জড়িত কি না এমন প্রশ্নে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, এই ঘটনার সাথে ফ্যামিলির লোকজন জড়িত। কোনো সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত এমন তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। আসামি নুসরাতের একটা সন্তানের জন্ম হয়। তারা পাশাপাশি ছিল। ওই নবজাতক প্রথমে মায়ের বুকের দুধ পেতো না। নুসরাতের বুকের দুধ পান করে। আর নুসরাতের সন্তান অসুস্থ, আইসিইউতে আছে। অসুস্থ সন্তানের কি হয় না হয় আর আব্দুল্লাহকে দুধ খাওয়ানোয় তার মধ্যে মায়া কাজ করেছে। মূলত এই ধারণা থেকেই শিশুটিকে চুরি করে নুসরাত। নুসরাত বাচ্চাকে হাসপাতাল থেকে বের করে তার স্বামীর কাছে দেয়। তার স্বামী বোনের কাছে বাচ্চাটাকে দিয়ে আসে। আমরা সেখানে অভিযান চালায়। নাদিরার মা বিষয়টি জানা সত্ত্বেও গোপন করেন। এ কারণে তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে জানা যাবে আসল রহস্য।
তবে অপহরণের অভিযোগ অস্বীকার করে নাদিরা বলেন, আমরা এসব কিছুই জানি না। আমার ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো না। ভাই বাচ্চাটাকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসে। বলে আমাদের জমজ বাচ্চা হয়েছে। একটা অসুস্থ। তাই একে তোর কাছে দিয়ে গেলাম। পরে পুলিশ দেখে তো আমরা হতভম্ব হয়ে গেছি। পুলিশের কাছ থেকে জানলাম কি ঘটনা ঘটেছে। আমরা এই ঘটনার বিষয়ে কিছু জানি না।
এদিকে, হিরণের দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করা হয়, শাহিনা বেগম গত ২৯ আগস্ট ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সিজারে ছেলে জন্ম দেয়। সেখানে তাদের চিকিৎসা চলছিল। ৩১ আগস্ট দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটের দিকে হিরন ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ওয়ার্ডের বাইরে থাকাবস্থায় তার স্ত্রী ও সন্তান পাশাপাশি ঘুমিয়ে ছিল। তার মাও সেখানে ছিল। এসময় অজ্ঞাতনামা একজন মহিলা কৌশলে ছেলেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯ টার কামরাঙ্গীরচর থানাধীন নবীনগরের ৪নং মসজিদ রোডের নাহারের বাসায় অভিযান চালিয়ে তার কোল থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।