জুমবাংলা ডেস্ক : ১১তম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে টানা কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন সারা দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। সরকার দেবে ১২তম গ্রেড, তবে শিক্ষকরা চান ১১তম। এ দাবি পূরণ না হওয়ায় শিক্ষকরা কর্মবিরতির কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর আগে দাবি মানার জন্য রোববার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন তারা।
সহকারী শিক্ষকরা ১০ম গ্রেডে বেতন চেয়ে আন্দোলন করছেন। তাদের বক্তব্য, অন্তত শুরুতে ১১তম গ্রেডে বেতন দিতে হবে। এ ছাড়া চাকরিতে ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার জটিলতা নিরসন এবং প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতি দিতে হবে।
এ তিন দাবিতে আজ থেকে এক ঘণ্টা কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন প্রাথমিকের শিক্ষকরা। এই কর্মসূচি চলবে আগামী ১৫ মে পর্যন্ত। এরপর ১৬ থেকে ২০ মে পর্যন্ত দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি করবেন। ২১ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি, ২৬ মে থেকে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা।
এর আগে গত ১৩ মার্চ উচ্চ আদালত এক রায়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩০ হাজার প্রধান শিক্ষককে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তার মর্যাদা দেন। সেইসঙ্গে তাদের বেতন ১০ম গ্রেডে নির্ধারণের নির্দেশ দেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, আদালতের নির্দেশে প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড এক ধাপ উন্নীত হয়েছে। এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড এক ধাপ উন্নীত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে সরকার গঠিত কমিটির প্রতিবেদনেও সুপারিশ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে গঠিত পরামর্শক কমিটি’র নেতৃত্বে ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ। এই কমিটি প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে শতাধিক সুপারিশ করে গত ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল। কমিটি ‘সহকারী শিক্ষক’ পদ বিলুপ্ত করে শুরুর পদ ‘শিক্ষক’ করার সুপারিশ করেছে। এ ক্ষেত্রে ‘শিক্ষক’ হিসেবে শুরুতে বেতন গ্রেড হবে ১২তম।
এরপর দুই বছর পর চাকরি স্থায়ী ও আরও দুই বছর পর তারা ‘সিনিয়র শিক্ষক’ হবেন। তখন তাদের বেতন গ্রেড হবে ১১তম। পরামর্শক কমিটি প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড দশম করার সুপারিশ করেছে। এরই মধ্যে উচ্চ আদালতের রায়ে প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড দশম করতে বলা হয়েছে। এখন পরামর্শক কমিটির সুপারিশ ও আদালতের রায় বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষকদের কর্মবিরতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মোহম্মদ মাসুদ রানা গতকাল কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন বলেন, আমাদের দাবি চার বছর পর নয়; শুরু থেকে ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ এবং শতভাগ পদোন্নতি। এ ছাড়া পদোন্নতিবঞ্চিত শিক্ষকদের সরকারি বিধি অনুযায়ী ১০ বছর পূর্তিতে প্রথম উচ্চতর গ্রেড এবং ১৬ বছর পূর্তিতে দ্বিতীয় উচ্চতর গ্রেড শর্তহীনভাবে দিতে হবে।
অন্যদিকে, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের সভাপতি শাহিনুর আল-আমীন বলেন, এই মুহূর্তে সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে (শুরুর পদ) বেতন দিতে হবে। পরে স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করতে হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, পরামর্শক কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেড বাস্তবায়ন করতে গেলে আলাদা বেতন কাঠামো প্রয়োজন। এ মুহূর্তে সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেড দেয়া সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, বর্তমান বেতন কাঠামোতে সহকারী শিক্ষকদের যখন নিয়োগ হবে, তখন তারা ১২তম গ্রেডে নিয়োগ পাবেন। চার বছর পর সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে ১১তম গ্রেডে পদোন্নতি পাবেন। প্রধান শিক্ষকরা পাবেন দশম গ্রেড।
উপদেষ্টা জানান, মন্ত্রণালয় পরামর্শক কমিটির সুপারিশ সমর্থন করে এবং তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।
উল্লেখ্য, সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন সর্বশেষ ২০২০ সালে বাড়ানো হয়েছিল। তখন প্রশিক্ষণ পাওয়া ও প্রশিক্ষণবিহীন– দুই ধরনের প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১১তম করা হয়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড করা হয় ১৩তম।
গত সরকারের আমলে ২০১৪ সালে প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা ঘোষণা করা হয়েছিল। তা দীর্ঘদিনেও বাস্তবায়ন হয়নি। প্রধান শিক্ষকরা ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নে আদালতের শরণাপন্ন হন। সর্বোচ্চ আদালত প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড পদমর্যাদাসহ ১০ম গ্রেডের রায় ঘোষণা করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।