জুমবাংলা ডেস্ক : অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি! মাত্র ৯০ দিনে টেলিস্কোপ তৈরি করেছেন ভোলার ছেলে চাহিদ। নিজের প্রবল আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে এ সফলতা অর্জন করেন তিনি। বিশ্বকে জানার দীর্ঘদিনের আগ্রহ থেকে ফার্মাসিস্টের চাকরির পাশাপাশি শুরু করেন টেলিস্কোপ বানানোর এ কর্মযজ্ঞ।
শুধু তাই নয়, তার এই কর্মযজ্ঞে কারো কোনো সহযোগিতা নেই। নেই কারো পরামর্শ। ইন্টারনেটের সহযোগিতায় বানানো টেলিস্কোপ এখন বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করার চিন্তা করছেন জাহিদ। এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মিডিয়া পাড়ায় ব্যাপক ভাইরাল হয়েছেন তিনি। জাহিদের এ সৃষ্টি দেখতে ভিড় করছেন স্থানীয়রা।
ভোলা শহরের মুসলিম পাড়ার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত ওয়ারেন্ট আর্মি অফিসার মো. নুরুন্নবীর ছেলে নাজমুল আহসান জাহিদ তার বাসার ছোট্ট একটি কক্ষে টেলিস্কোপ তৈরির কাজ করেন। এর জন্য নেই কোনো ল্যাব বা বিশেষজ্ঞ। তার দৃঢ় মনোবল আর একাগ্র প্রচেষ্টায় মাত্র ৩ মাসেই এসেছে এই সফলতা। নিজের ইচ্ছা পূরণের পাশাপাশি এখন বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত শুরু করেছেন এই তরুণ উদ্যোক্তা।
নাজমুল আহসান জাহিদ জানান, সৃষ্টির রহস্য নিয়ে তার আগ্রহ ছিল কৈশোর থেকেই। তাই ফার্মাসিস্ট পদে চাকরি করা জাহিদের সব ব্যস্ততার মধ্যেও মন পড়ে থাকত অধরা সৃষ্টির সৌন্দর্য আর রহস্যের মধ্যে। তাই সৃষ্টির এসব রহস্য অবলোকন করার জন্য একটি টেলিস্কোপ কিনতে গিয়ে হোঁচট খান তিনি। বিদেশ থেকে আসা তার পছন্দের টেলিস্কোপটির দাম এক লাখ টাকা। কেনার প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্বেও টাকার অভাবে সেটি আর কেনা হয়নি তার। কিন্তু ইচ্ছা পূরণের চেষ্টা থামিয়ে রাখেননি। নিজেই টেলিস্কোপ বানানোর জন্য মনস্থির করেন। এ বিষয়ের বিভিন্ন বই আর ইন্টারনেটের কন্টেন দেখে মনোবল নিয়ে তৈরি করতে শুরু করেন।
প্রায় দুই মাস ধরে অনলাইনে কিছু সরঞ্জামাদিও সংগ্রহ করেন। এরই মধ্যে ডিজাইন মেজারমেন্টসহ অন্যান্য কাজগুলো সেরে রাখেন নিজের মতো করে। নিজের ইচ্ছা পূরণের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করার জন্য ৩ মাসে তৈরি করেছেন ৫টি এস্ট্রোনমি গ্রেডর নিউটোনিয়ান টাইপ ডবসোনিয়ান বেজ টেলিস্কোপ। ইতোমধ্যে অনলাইনে এ গুলোর বিক্রির কথা চূড়ান্ত হয়েছে। শিগগিরই গ্রাহকের কাছে ডেলিভারি করবেন বলেও জাহিদ জানান।
তিনি বলেন, আরও ১০০টি টেলিস্কোপের অর্ডার পেয়েছেন কিন্তু নতুন করে ১০টি তৈরির কাজ হাতে নিয়েছেন। প্রতিটি বিক্রি করবেন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা দরে। বাংলাদেশে এসট্রোনমি ও এস্ট্রোফিজিক্সের চর্চাকে আরও উচ্চতায় নিতে জাহিদের এ প্রচেষ্টা।
টেলিস্কোপ তৈরিতে সফলতার পর এখন সে নতুন করে আরও ডবসোনিয়ান বেজ টেলিস্কোপের সঙ্গে ইকোটোরিয়াল প্লাটফর্ম তৈরিতে মনযোগ দিতে চান। যা পরবর্তীতে এস্ট্রোফটোগ্রাফিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জাহিদের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে পূর্ণিমার চাঁদসহ বিভিন্ন গ্রহ, উপগ্রহ ও নক্ষত্রপূঞ্জ দেখতে ভিড় জমান অনেকে। এখন প্রতিদিনই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী জাহিদের বাড়িতে আসেন টেলিস্কোপের মাধ্যমে গ্রহ-উপগ্রহ দেখতে।
জাহিদের বন্ধু সুমন টেলিস্কোপে চাঁদ দেখে উচ্ছ্বসিত হন। সহযোগিতার পাশাপাশি এ কাজটি এগিয়ে নেওয়ার জন্য উৎসাহও যোগান।
লোকমুখে শুনে টেলিস্কোপ দেখতে আসেন ওই এলাকার ব্যবসায়ী সুফিয়ান। তিনি জানান, খালি চোখে এর আগে অনেকবার চাঁদ ও আকাশের তারকা দেখেছি। কিন্তু এই টেলিস্কোপে যেভাবে দেখলাম তার মজাই আলাদা। সুফিয়ান জানান, সরকারি পৃষ্ঠপোশকতা পেলে জাহিদ এ প্রচেষ্টা আরও এগিয়ে নিতে পারবে।
জাহিদের তথ্যমতে, বিদেশ থেকে আমদানি করা এ ধরনের টেলিস্কোপগুলোর দাম ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু তার তৈরি সমান সুযোগ সুবিধার টেলিস্কোপ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।