জুমবাংলা ডেস্ক : পাবনার সাঁথিয়ার কৃষকরা পানির দামে বিক্রি করছে তাদের উৎপাদিত সবজি বেগুন ও লাউ। পরিচর্যার মূল্য না উঠায় জমিতেই নষ্ট হচ্ছে হেক্টরের পর হেক্টর জমির বেগুন। প্রতিবেশীদের কাছে বিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে এসব সবজি। লাউ খাওয়ানো হচ্ছে গরুর খাদ্য হিসেবে।
জানা যায়, পাবনার সবজি উৎপাদনে অন্যতম উপজেলা সাঁথিয়া। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় বেগুনের ব্যাপক চাষ হয়েছে। চলতি বছরে উপজেলায় ৬৬৭ হেক্টরও জমিতে কৃষকরা বেগুনের আবাদ করেছে। রমজানের আগে ও শুরুতে এক কেজি বেগুন বাজারে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হতো। সেই বেগুন সপ্তাহের ব্যবধানে কৃষকের গলার কাটা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
উপজেলার হাটবাজারে বেগুন বর্তমানে প্রকারভেদে ৫ থেকে ১০ টাকা বিক্রি হলেও তা পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১০০ টাকা মণ। বেগুনের উৎপাদনের ওপর নির্ভর করে উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে অস্থায়ীভাবে গঠে উঠেছে সবজি বিক্রির আড়ত। উপজেলার কাশিনাথপুর ইউনিয়নের টাংড়াগাড়ী বিল ও বিলপাড়েরর এলাকার ওপর নির্ভর করে অস্থায়ী ৩টি আড়ত গড়ে উঠেছে।
উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের খন্দকার আলাই জানান, তিনি বিষ্ণুবাড়িয়া মাঠে ২ বিঘা জমিতে গোল জাতের বেগুনের আবাদ করেন। জমিতে প্রচুর পরিমাণ বেগুন আসলেও দামে হতাশা হয়ে পড়েছেন।
তিনি জানান, গত ১৮ মার্চ জমি থেকে ২৯ বস্তা বেগুন তোলা হয়। পাইকারি ব্যবসায়ীরা জমি থেকে বাকিতে কোনো প্রকার দাম করা ছাড়াই তা নিয়ে যায়। পরে ঢাকায় বিক্রি করে ২৯ বস্তা (৪৩ মন) বেগুনের দাম ৪ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। যা কেজিতে ২.৫০ টাকা করে দাম দেন।
শনিবারও (২৩ মার্চ) ৫৯ বস্তা (৯০ মন) বেগুন টাকা ছাড়াই ঢাকা পাঠিয়েছি। বিক্রি করে টাকা দিবে, বলেন খন্দকার আলাই।
উপজেলার কাশিনাথপুর ছাতক বরাটের মৃত হাতেম শেখের ছেলে ফজলুর রহমান জানান, এ বছর ৯ বিঘা জমিতে বেগুনের আবাদ করেছেন। গত বছর এ সময়ের মধ্যে ৩/৪ লাখ টাকার সবজি বিক্রি করলেও এ বছর দাম কম থাকায় ভয়ে জমি থেকে তা তুলছেন না। জমিতেই তা পচে নষ্ট হচ্ছে।
এদিকে রমজানের আগে যে লাউয়ের মূল্য বাজারে ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকা ছিল, সেই লাউ এখন গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। বর্তমানে বাজারে লাউ হালি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। উপজেলার বাজার গুলোতে ৫ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শনিবার স্থানীয় বনগ্রাম হাটে প্রতি জোড়া লাউ ১০ থেকে ১৫ টাকা বিক্রি করতে দেখা গেছে। লাউয়ের এমন দামে হতাশা হয়ে পড়েছেন কৃষক। লাউয়ের দাম কম থাকায় গাছেই বুড়ো হচ্ছে।
লাউ চাষি আমজাত শেখ জানান, দাম না থাকায় লাউ এখন গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছি। কষ্ট ও খরচ করে বাজারে না নিয়ে গাছেই রেখে দিয়েছি।
কৃষক অনিক মীর জানান, ৩ থেকে ৪ টাকা কেজি বর্তমানে বেগুন বিক্রয় হচ্ছে। এ দামে উৎপাদন খরচ উঠবে না।
কৃষক কাজল জানান, ৫ বিঘা জমিতে আমার এ বছর ৫ লাখ টাকা ক্ষতি হবে। বেগুন ও লাউ এর পাশাপাশি বাজাওে ৮০ টাকা কেজির করলা এখন ৮ থেকে ১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও অনন্যা সবজি পানির দামে পাবনা জেলায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বাজার মনিটরিং করার দায়িত্বে থাকা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কোনো প্রকার দেখা মিলছে না বলে জানান কৃষকরা। কৃষকদের দাবি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় সবজির বাজার অসাধু ব্যবসায়ীরা নিয়ন্ত্রণ করছে।
সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার সঞ্জিত কুমার গৌসামী জানান, পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে বাজারের এমন পরিস্থিতি হতে পারে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বাজার নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিংয়ের আহ্বান জানান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।