বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : বিশ্বের প্রথম ট্রাই-ফোল্ডিং স্মার্টফোন এখন বাজারে। চীনের ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের তৈরি ট্রাই-ফোল্ডিং ‘মেট এক্সটি আল্টিমেট ডিজাইন’ স্মার্টফোনটি গতকাল (১০ সেপ্টেম্বর) উন্মোচিত হয়েছে। অত্যাধুনিক ডিজাইন ও স্পেসিফিকেশনের পাশাপাশি অসামান্য সব ফিচার ফোনটি ব্যবহারের প্রতিটি ধাপেই অবাক করা অভিজ্ঞতার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।
হুয়াওয়ের এই বহুল প্রতীক্ষিত ট্রিপল-ফোল্ড স্মার্টফোনটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে উন্নত ম্যাটেরিয়াল ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। এবারে চলুন মেট এক্সটি-এর উল্লেখযোগ্য ফিচারগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা যাক:
এক নজরে হুয়াওয়ের মেট এক্সটি আল্টিমেট ডিজাইন
কভার স্ক্রিন:৬.৪ ইঞ্চি
ডুয়াল স্ক্রিন: ৭.৯ ইঞ্চি
ট্রিপল স্ক্রিন: ১০.২ ইঞ্চি
ডিজাইন: ট্রিপল ফোল্ডিং বা ট্রাই-ফোল্ড
কালার: রুইহং (রেড গোল্ড) ও গাঢ় কালো (ডার্ক ব্ল্যাক)
হিঞ্জ: তিয়ানগং হিঞ্জ প্রযুক্তি
রিয়ার ক্যামেরা:
৫০ মেগাপিক্সেল আলট্রাওয়াইড-অ্যাঙ্গেল ক্যামেরা,
১২-মেগাপিক্সেল আলট্রাওয়াইড-অ্যাঙ্গেল ক্যামেরা
১২-মেগাপিক্সেল পেরিস্কোপ টেলিফটো ক্যামেরা
ফ্রন্ট ক্যামেরা: ৮ মেগাপিক্সেলস
ব্যাটারি: ৫,৬০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার আওয়ার
র্যাম বা মেমোরি: ১৬ জিবি
স্টোরেজ অপশন: ২৫৬জিবি, ৫১২জিবি, ১টিবি
অন্যান্য ফিচারসমূহ: উন্নত এআই ফিচার, স্টাইলাস, কীবোর্ড
ডিজাইন
ট্রিপল-ফোল্ডেবল স্মার্টফোনটিতে স্টার ডায়মন্ড আউটলুক নিয়ে এসেছে হুয়াওয়ে। ফোনটির চারপাশে প্রান্তগুলোতে রয়েছে ভেইন টেক্সচার- যেটা তৈরি করতে ৭৮ বার প্রসেস করতে হয়েছে। এর বডি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে ৮০টি সূক্ষ্ম স্টিলের স্তুপ- যাতে করে সার্বিকভাবে ফোনটির কাঠামো শক্তিশালী হয়। এছাড়া ফোনটির বডিতে খাঁটি ও মসৃণ চামড়া ব্যবহার করা হয়েছে যাতে ব্যবহারকারীরা নিখুঁত টাচের অভিজ্ঞতা পান। দুটি ভিন্ন ও আকর্ষণীয় রঙে পাওয়া যাবে মেট এক্সটি ফোনটি- রুইহং (রেড গোল্ড) ও গাঢ় কালো (ডার্ক ব্ল্যাক)।
ডিসপ্লে
মেট এক্সটি স্মার্টফোনটিতে ভিন্ন আকার ও মানের ৩টি স্ক্রিন ব্যবহার করা হয়েছে। সিঙ্গেল, ডাবল ও থ্রি-স্ক্রিনের আকার যথাক্রমে ৬.৪ ইঞ্চি, ৭.৯ ইঞ্চি ও ১০.২ ইঞ্চি। পুরোপুরি ফোল্ড বা ভাঁজ করা অবস্থায় ফোনটিকে সাধারণ স্মার্টফোনের মতোই মনে হবে যেখানে ৬.৪ ইঞ্চির সিঙ্গেল স্ক্রিনটিই হবে ফোনটির কভার স্ক্রিন। এক্ষেত্রে ফোনটিকে সহজেই একহাতে ব্যবহার করা যাবে।
ফোনটির একটি ফোল্ড খোলা হলে এটি পরিণত হয় ডুয়াল-স্ক্রিন মোডে। ৭.৯ ইঞ্চির স্কয়ার স্ক্রিনটি ব্রাউজিং ও পড়াশোনার জন্য দারুনভাবে সহায়ক। ফোনটির দ্বিতীয় ফোল্ড খোলা হলে এটি ট্রিপল স্ক্রিনের ১০.২ ইঞ্চির একটি ট্যাবলেট পিসি’তে পরিণত হয়। উল্লেখ্য, হুয়াওয়ের এই ফোনটি দু’বার ফোল্ড করা যায়।
মেট এক্সটি’র ডিসপ্লের প্রতিটি স্ক্রিনই উচ্চ মানের ওলেড এলটিপিও স্ক্রিন যাতে ১.০৭ বিলিয়ন কালার সাপোর্ট রয়েছে। আছে পিথ্রি ওয়াইড কালার গ্যামাট ও ১৪৪০ হার্জ হাই-ফ্রিকোয়েন্সি সক্ষমতার পালস উইডথ মডুলেশন ডিমিং। পাশাপাশি সর্বোচ ২৪০ হার্জ টাচ রেসপন্সও পাবেন ব্যবহারকারীরা।
ট্রাই-ফোল্ডিং ফোনটির ডিসপ্লেতে ৩কে আলট্রা-হাই-ডেফিনিশন রেজোলিউশন উপভোগ করতে পারবেন ব্যবহারকারীরা। পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের উচ্চ মানের ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতার জন্য অত্যাধুনিক এআই কম্পিউটিং ইমেজ কোয়ালিটিও ব্যবহার করা হয়েছে এর ডিসপ্লেতে। উল্লেখ্য এগুলো হচ্ছে মাল্টি-ডিরেকশনাল ডিসপ্লে প্যানেল।
নমনীয় উপকরণ ব্যবহার করার মাধ্যমে স্ক্রিনটির বেন্ডিং (নমনীয়তা) সক্ষমতা ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ডিভাইসটির ভেতরের ডিসপ্লে যখন কম্প্রেশন বা সংকোচন প্রতিরোধ করে, তখন বাইরের ডিসপ্লে টেনশন ধরে রাখে। অভ্যন্তরীণ স্ক্রিন সবচেয়ে বড় ইউটিজি বা আলট্রা থিন গ্লাস ব্যবহার করে। অন্যদিকে বাইরের ডিসপ্লেতে দ্বৈত-প্রতিরোধের জন্য নন-নিউটনিয়ান ফ্লুইড (তরল) থাকে।
হিঞ্জ (কব্জা)
একটি ট্রাই-ফোল্ড ফোনের জন্য যে উঁচু মানের হিঞ্জ ব্যবহার করা প্রয়োজন মেট এক্সটি’তে তেমনটাই করা হয়েছে। ফোনটিতে হুয়াওয়ে ব্যবহার করেছে তিয়ানগং হিঞ্জ প্রযুক্তি। স্থানীয় ভাষায় তিয়ানগং শব্দটির অর্থ হচ্ছে ‘স্বর্গের পবিত্র’। ডুয়াল হিঞ্জ সাপোর্ট থাকায় এই প্রযুক্তি ভেতরের ও বাইরের দিকে ফোল্ড করার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।
হিঞ্জটি একটি রড স্ট্রাকচারের উপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়ায় মুভ করার জন্য এটির খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না, ফলে সার্বিকভাবে স্থিতিশীলতা প্রদান করে। ডিভাইসটিকে ভিতরের দিকে ও বাইরের দিকে ফোল্ড করার জন্য এতে আরও আছে স্লাইড রোল স্ট্রাকচার।
ক্যামেরা
মেট এক্সটি আলটিমেট ডিজাইন স্মার্টফোনটির অক্টাজোনাল (অষ্টভুজাকার) ক্যামেরা মডিউলে একটি ট্রিপল-লেন্স রয়েছে। ৫০ মেগাপিক্সেলের মূল ক্যামেরার পাশাপাশি এতে আছে ১২ মেগাপিক্সেলের একটি আলট্রা-ওয়াইড লেন্স এবং ১২ মেগাপিক্সেলেরই একটি প্রিসিশন ক্যামেরা সেন্সর। ফোনটির ব্যাক বা রিয়ার ক্যামেরা ৫.৫এক্স অপটিক্যাল জুম এবং ৫০এক্স ডিজিটাল জুম সাপোর্ট করে থাকে। পাশাপাশি ফোনটির সামনের দিকে থাকছে ৮ মেগাপিক্সেলের একটি সেলফি সেন্সর যেটা দিয়ে বিভিন্ন মোডে ছবি তোলা ও ভিডিও ধারণ করা যাবে।
এক্সমেইজ ইমেজিং ফিচার
হুয়াওয়ের এই স্মার্টফোনটিতে আছে এক্সমেইজ ইমেজিং। লাইট, শ্যাডো ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ টুলগুলোর নিখুঁত সিলেকশনের মাধ্যমে এক্সমেইজ ইমেজিং ফিচারটি নিশ্চিত করে ব্যবহারকারীর পোস্ট-ক্যাপচারিং মুহূর্তগুলোও ক্যামারায় ধরা পড়বে দারুনভাবে।
অপারেটিং সিস্টেম, র্যাম ও প্রসেসর
মেট এক্সটি-তে রয়েছে হার্মোনিওস ৪.২ অপারেটিং সিস্টেম, যেটি হুয়াওয়েরই তৈরি। পাশাপাশি ১৬জিবি র্যাম যেকোনো হাই-এন্ড ফোনের জন্য যথেষ্ট। অবশ্য স্টোরেজের জন্য অপশন রয়েছে তিনটি: ২৫৬জিবি, ৫১২ জিবি এবং ১টিবি- যার ভিত্তিতে ফোনটির দামেও কম বেশি হবে।
তবে হুয়াওয়ে যে বিষয়টি এখনও প্রকাশ করেনি সেটা হলো এর প্রসেসর বা চিপসেট। যারা স্মার্টফোনের বাজারে হুয়াওয়ে সম্পর্কে ধারণা রাখেন তাঁদের অনেকেই বলছেন, মেট এক্সটি ফোনটিতে কিরিন ৯০১০ ৫জি চিপসেট ব্যবহার করা হয়েছে। এটি হুয়াওয়ের মালিকানাধীন চীনা প্রতিষ্ঠান হাইসিলিকন-এর তৈরি। উল্লেখ, আজ থেকে কয়েক বছর আগেও হুয়াওয়ে আমেরিকান চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কোয়াকম-এর স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর ব্যবহার করতো তাঁদের স্মার্টফোনগুলোতে। তবে বর্তমানে হাইসিলিকনের তৈরি প্রসেসরগুলোই তাঁরা ব্যবহার করে থাকে।
মেইট এক্সটি আল্টিমেট ডিজাইন ফোনটির অন্যান্য ফিচার
কানেকটিভিটি অপশন হিসেবে মেট এক্সটিতে রয়েছে ৫জি, ৪জি এলটিই, ওয়াই-ফাই ৬, ব্লুটুথ ৫.২, জিপিএস, এনএফসি (নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন) এবং একটি ইউএসবি ৩.১ টাইপ-সি পোর্ট। ব্যাটারি ব্যাক-আপের জন্য আছে ৫৬০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার আওয়ার সক্ষমতার একটি ব্যাটারি- যেটি ৬৬ওয়াট ওয়্যারড্ চার্জিং এবং ৫০ওয়াট ওয়্যারলেস চার্জিং সাপোর্ট করবে।
এছাড়া ফোনটি স্যাটেলাইন কমিউনিকেশনও সাপোর্ট করে থাকে, ফলে লো-নেটওয়ার্ক এরিয়াতেও যোগাযোগ ধরে রাখতে সক্ষম এই ফোনটি। পাশাপাশি বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশনের জন্য ফোনটির সাইডে দেয়া আছে একটি ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার। সাধারণ স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে ২৯৮ গ্রাম ওজন একটু বেশি মনে হতে পারে, তবে মেট এক্সটির মতো ট্রিপল-ফোল্ড স্ট্যান্ডার্ড ডিসপ্লের একটি স্মার্টফোনের জন্য এটা মানানসই।
মেট এক্সটি স্মার্টফোনটির এআই ফিচারসমূহ
হুয়াওয়েরর ট্রিপল ফোল্ড বা ট্রাই ফোল্ডেবল ফোনটিতে রয়েছে পাংগু লার্জ এআই মডেল-ভিত্তিক ডিজিটাল অ্যাসিসট্যান্ট সেলিয়া-এর উন্নত সংস্করণ। সেলিয়া অ্যাসিসট্যান্টের কল্যাণে ব্যবহারকারীরা বেশ কিছু এআই ফিচার উপভোগ করতে সক্ষম হবেন।
এআই সিনিয়র এডিটর: নতুন এই ভয়েজ এডিটিং ফিচারগুলো ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ বুঝে ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুযায়ী দারুন সব কনটেন্ট তৈরি করতে সক্ষম।
এআই ইনফো কনসালটেন্ট: স্প্লিট-স্ক্রিন মোড ব্যবহার করে এটি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। পাশাপাশি দীর্ঘ আর্টিকেল থেকে সামারিও তৈরি করতে সক্ষম এই ফিচারটি।
এআই ট্রান্সলেশন এক্সপার্ট: সেলিয়া খুব সহজে, স্বল্প সময়ে যেকোনো লেখাকে অনুবাদ করে দিতে সক্ষম। অনুবাদ করার পর একপাশে মূল টেক্সটটিও দিয়ে দেয় সেলিয়া নির্ভুলতা নিশ্চিত করার জন্য।
এআই ফটো এডিটর: এই ফটো এডিটরটি’তে রয়েছে এআই ইমেজ এক্সপানশন ফিচার। এর কল্যাণে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইমেজ বড় করা যাবে। পাশাপাশি এআই রিমুভাল ফিচারের মাধ্যমে ছবির কোনো ইলিমেন্ট মুছে ফেলা যাবে। এছাড়া এআই ক্লাউড ফিচারটি দিয়ে ছবির মানও বৃদ্ধি করা যাবে।
মেট এক্সটি আল্টিমেট ডিজাইন স্মার্টফোনটির দাম
ট্রাই-ফোল্ড এই ফোনটিতে র্যাম বা মেমোরি হিসেবে ১৬ জিবি থাকলেও স্টোরেজের আকার অনুযায়ী ফোনটির দামে ভিন্নতা রয়েছে। হুয়াওয়ে ৩টি ভিন্ন দামে অফার করছে এই স্মার্টফোনটি:
২৫৬ জিবি স্টোরেজ- ১৯,৯৯৯ ইউয়ান- ২৮০০ মার্কিন ডলার- ৩,৩৬,০০০ টাকা
৫১২ জিবি স্টোরেজ- ২১,৯৯৯ ইউয়ান- ৩০৮৮ মার্কিন ডলার- ৩,৭০,০০০ টাকা
১টিবি স্টোরেজ- ২৩,৯৯৯ ইউয়ান- ৩৩৬৮ মার্কিন ডলার- ৪,০৪,০০০ টাকা
খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে কেন দেরি? জানালেন ব্যক্তিগত চিকিৎসক
** মেট এক্সটি’র অফিশিয়াল প্রাইস হুয়াওয়ে চাইজিন মুদ্রা ইউয়ান-এ প্রকাশ করেছে। উপরন্তু ফোনটি যেহেতু কেবলমাত্র চীনের বাজারেই পাওয়া যাবে তাই অ্যামাজনের মতো মার্কেটপ্লেসগুলোতেও ডলারে এর বিক্রয় মূল্য পাওয়া যায়নি। তাই মার্কিন ডলার ও বাংলাদেশী টাকায় এর দাম নির্ধারনে গুগলের কারেন্সি কনভার্টার ব্যবহার করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।