সাজেদুর আবেদীন শান্ত : বগুড়ার সোনাতলা পৌরসভার কানুপুর গ্রামে ‘জামাই সোহাগী’ মেলায় গিয়ে দেখা মেলে জামাইরা বড় বড় মাছ কিনে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছেন।
নুর আলম সিদ্দিক নামে এক যুবক জানান, তিনি ঐ এলাকার জামাই। তাই বাজার থেকে ১৩ কেজি ওজনের বড় একটি বিগহেড কার্প মাছ এত হাজার টাকায় কিনে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছেন। শুধু তিনি না আরো অনেকেই বড় বড় মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন শ্বশুরবাড়ি।
এলাকাবাসী জানান, অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম শনিবার এখানে বিরাট মাছের মেলা বসে। কৃষকরা নতুন ধান কেটে ঘরে তুলে জামাইদের দাওয়াত দেন। জামাইরাও মাছ কিনে নিয়ে আসেন শ্বশুরবাড়ি। বেয়াই-বেয়াইনসহ নানা আত্মীয়স্বজনে ভরে যায় এ গ্রামের ঘরগুলো।
পৌরসভার কানুপুর গ্রামের মিস্ত্রিপাড়া গ্রামের এ মেলা মাছের জন্য বিখ্যাত। তবে এ মেলাতে মাছ ছাড়াও বিভিন্ন মিষ্টি, মুড়ি-মুড়কিসহ নানা রকম খাবারের দোকান বসেছে। মেয়েদের জন্য কসমেটিকসহ নানাধরনের প্রসাধনীর দোকানও রয়েছে।
সরেজমিনে মেলা ঘুরে দেখা যায়, মেলায় নাগরদোলা, নৌকাসহ বিভিন্ন রাইডিং খেলনার দোকানও বসেছে। এর সঙ্গে কাঠের বিভিন্ন রকম ফার্নিচার এবং কাপড়ের দোকানেরও দেখা মেলে।
তবে মেলার অর্ধেকটা জুড়ে মাছের দোকান। বড় বড় রুই, কাতল, পাঙাশ, বিগহেড সিলভারসহ নানান কার্প জাতীয় মাছে ভরা। এসব মাছ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে চারশো টাকা থেকে এক হাজার টাকা কেজি পর্যন্ত।
কৃষ্ণ কুমার বর্মণ নামে এক মাছ ব্যবসায়ী জানান, তিনি প্রায় এক লাখ টাকার মাছ এনেছেন। এরই মধ্যে তার সব মাছ বিক্রি হয়ে গেছে। তার দোকানের সবচেয়ে বড় মাছ ১৪ কেজি ওজনের রুই মাছ যার দাম তিনি হাঁকিয়েছেন ১৫ হাজার টাকা।
মাছের ক্রেতা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মেলায় নানান রকমের বড় বড় মাছ উঠেছে। তবে আমার কাছে মাছের দাম একটু বেশিই বলে মনে হচ্ছে।
মেলা কমিটির সদস্য সেকেন্দার আলী বলেন, এ পর্যন্ত মেলাতে প্রায় ৩০ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়েছে। আমরা আশা করছি রাতের ভেতর আরো পাঁচ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হবে। মেলা চলবে আরো তিনদিন। আজ প্রথম দিন। প্রথম দিনেই মেলার বেচাকেনা ভালো হয়েছে।
সোনাতলা পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল হক আকন্দ বাবু বলেন, মেলা উপলক্ষে গ্রামে উৎসবের একটা আমেজ বইছে। গ্রামে নানা মানুষের আগমন ঘটেছে। মেলায় বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ থেকে মাছ ব্যবসায়ীরা এসেছেন। মাছের সরবরাহ এবার খুব ভালো হয়েছে। মেলায় আত্মীয়স্বজনরা এসেছেন, আমাদের খুব ভালো লাগছে। আমরা প্রতিবছর নবান্নের সময়ে জামাই সোহাগী মেলা করার চেষ্টা করবো।
মেলায় আগত দর্শনার্থীরা জানান, মেলা আমাদের একটি ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্য আমাদের টিকিয়ে রাখা উচিত। আমরা অতিথিপরায়ণ জাতি। কর্মব্যস্ত সময়ে মেলার সময় অতিথিরা বাড়িতে আসছে, এতে আতিথিয়েতা রক্ষা হচ্ছে। এটা মেলার একটি ভালো দিক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।