জুমবাংলা ডেস্ক : মোবাইল ফোনের হোয়াটসঅ্যাপে একটি লিংক পাঠানো হয়। সেই লিংকে ক্লিক করলেই একটি বিজ্ঞাপন দেখা যায়। সেই বিজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘বরগাটা’ নামের একটি অ্যাপ নামিয়ে সেখানে ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে দৈনিক ৮০০ থেকে ৫ হাজার টাকা আয় করুন। এভাবে বিজ্ঞাপনটি দেখে অনেকেই অ্যাপটি ডাউনলোড করেন। এরপর সেখানে বিনিয়োগ করেন। এভাবে তিন মাস মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার পর উধাও হয়ে যায় অ্যাপভিত্তিক ঐ প্রতিষ্ঠান।
এ ঘটনায় আবু তালহা বাদী হয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে রাজধানীর চকবাজার থানায় মামলা করেন। সেই মামলার তদন্তে নেমে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এক চীনা নাগরিকসহ ১২ জনকে শনাক্ত করে। তাদের মধ্যে ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তবে পালিয়ে যান চক্রের হোতা চীনা নাগরিক কেভিন চেন (৪০)।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, তদন্তের শুরুতেই মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদানকারী একটি প্রতিষ্ঠানের (এমএসএফ) একটি ‘মার্চেন্ট’ অ্যাকাউন্টের তথ্য পাওয়া যায়। সেই অ্যাকাউন্টের লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মাত্র ১৪ দিনে অ্যাকাউন্টে ২৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। অস্বাভাবিক এই লেনদেনের সূত্র ধরে সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তারা জানতে পারেন, এ বি সিদ্দিকী নামের এক ব্যক্তির নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে অ্যাকাউন্টটি খোলা হয়েছে। তবে অ্যাকাউন্ট খোলার এক মাস আগেই মারা গেছেন মুন্সীগঞ্জের বাসিন্দা এ বি সিদ্দিকী।
গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর এই ছয় মাসে ‘টিএনএস’ ও ‘বরগাটা’ নামে দুটি অ্যাপ বানিয়ে মোট ৯৯১ ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন কেভিন ও তার সহযোগীরা। সফটওয়্যার ব্যবসার নামে কেভিন বিভিন্ন অ্যাপভিত্তিক প্রতিষ্ঠান খুলে প্রতারণা করে আসছিলেন। সিআইডি সূত্র জানায়, মৃত ব্যক্তির নামে ‘মার্চেন্ট’ অ্যাকাউন্ট খুলে সেটি ব্যবহার করছিলেন চীনা নাগরিক কেভিন। তিনি প্রায় তিন বছর ধরে নতুন নতুন অ্যাপ বানিয়ে ঋণ ও বিনিয়োগের ফাঁদে ফেলে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করতেন কয়েক বাংলাদেশি নাগরিক।
সিআইডি জানায়, তিন বছর আগে বাংলাদেশে আসেন কেভিন চেন। তিনি ‘পিসেস টেকনোলজি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে বিভিন্ন অ্যাপ তৈরি করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা শুরু করেন। নতুন নতুন অ্যাপ খুলে ছয় থেকে এক বছর চালাতেন। বড় অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করার পর সংশ্লিষ্ট অ্যাপটি বন্ধ করতেন। আবার নতুন অ্যাপ চালু করতেন। এভাবে বাংলাদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছেন কেভিন। তার বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় আরেকটি মামলা রয়েছে।
সিআইডি সূত্র জানায়, এ বি সিদ্দিকী একটি চীনা কোম্পানিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে চাকরি করতেন। মারা যাওয়ার আগে তিনি কেভিন চেনের অ্যাপভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘টিএনএস’ ও ‘বরগাটা’য় কিছুদিন এমডির দায়িত্ব পালন করেন। সেই সুবাদে এ বি সিদ্দিকীর জাতীয় পরিচয়পত্রসহ তার ব্যক্তিগত বিভিন্ন তথ্য ও কাগজপত্র কেভিনের কাছে ছিল। এ বি সিদ্দিকী মারা যাওয়ার এক মাস পর তার নামে এমএসএফের ‘মার্চেন্ট’ অ্যাকাউন্ট খোলেন কেভিন। অবৈধ সুবিধা নিয়ে এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেন এমএসএফ প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা। কেভিনের সহযোগী হিসেবে ঐ এমএসএফ কোম্পানির সেই কর্মকর্তা এস এম আবু সায়েমকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।