জুমবাংলা ডেস্ক : চট্টগ্রামের কুখ্যাত সন্ত্রাসী সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না শারমিনকে আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী স্বামীর মতো নিজেও বেশ আলোচিত এই তামান্না। সাজ্জাদকে গ্রেপ্তারের পরপরই কাঁড়ি কাঁড়ি, বান্ডিল বান্ডিল টাকা ঢেলে স্বামীকে ছাড়িয়ে আনার পাশাপাশি তাকে গ্রেপ্তারের সঙ্গে জড়িত সকলকে দেখে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন তিনি। তামান্নার জামিনের প্রক্রিয়া নিয়েও এবার দেখা দিয়েছে বিতর্ক।
বুধবার (৯ এপ্রিল) বিচারপতি মো. মাহবুব উল আলম এবং বিচারপতি মো. হামিদুর রহমান পরিচালিত একটি বেঞ্চ এই আগাম জামিন দিয়েছেন। এরপরই আলজাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তামান্নার জামিন প্রক্রিয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন।
পোস্টে হাইকোর্টের ওয়েবসাইটের লিংক জুড়ে দিয়ে জুলকারনাইন দেখান, ৫৪৭টি মামলার আগাম জামিনের শুনানিতে বিচারক ১৫০ নম্বর পর্যন্ত শুনানির পর ৩১৩ জনকে ডিঙিয়ে ৪৬৩ নম্বরে থাকা তামান্না শারমিনের সিরিয়ালে চলে যান। ২০ এপ্রিলের আগে কোর্টের শেষ কার্যদিবসে দেড়শ আসামির পর, ৪৬৩ নম্বরে থাকা তামান্নার মামলা ঠিক কোন যৌক্তিকতায় ১ মিনিটে শুনানি শেষ করে আগাম জামিনের সিদ্ধান্ত দিয়ে দেওয়া হলো, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
জুলকারনাইন তার পোস্টে লিখেন, চট্টগ্রামের কুখ্যাত সন্ত্রাসী সাজ্জাদ যিনি কিছু দিন আগে গ্রেফতার হয়েছেন এবং গ্রেফতারপরবর্তীতে তার স্ত্রী তামান্না শারমিন ‘কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দিয়ে আদালত ও জামিন’ কিনে নেওয়ার কথা বলে দেশের আইন ও নিরাপত্তা সংস্থাকে রীতিমতো অপমানের চূড়ান্ত করেছেন। সেই তামান্নাকে আজ (বুধবার) আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
তিনি আরও লিখেন, আশ্চর্যের বিষয় হলো- আজ বিজয় ৭১ ভবনের ২৫ নম্বর কোর্টে (৯ম তলায়, বিচারপতি মো. মাহবুব উল আলম এবং বিচারপতি মো. হামিদুর রহমান পরিচালিত ৫৪৭টি মামলার আগাম জামিনের শুনানি থাকলেও দুপুর ১টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত সিরিয়াল নম্বর ১৫০ পর্যন্ত শুনানি চলে, এবং তারপরই বিচারক, সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না শারমীনের মামলায় চলে যান এবং ১ মিনিটের মধ্যেই জামিন মঞ্জুর করে দেন। এরপর তিনি দ্রুততার সঙ্গে আরও কয়েকটি মামলার শুনানি শেষ করেন।
জুলকারনাইন আরও লিখেন, সাধারণত আদালত গুরুত্ব বিবেচনায় অর্থাৎ সচরাচর কারও জটিল রোগ বা আপনজন মারা গেলে তখন মূল সিরিয়াল ভেঙে যে কোনো একটি সিরিয়ালের মামলা ধরতে পারে। কিন্তু ১৫০’র পর, ৪৬৩ নম্বরে থাকা তামান্নার মামলা ঠিক কোন যৌক্তিকতায় ১ মিনিটে শুনানি শেষ করে আগাম জামিনের সিদ্ধান্ত দিয়ে দেওয়া হলো?
প্রসঙ্গত, ট্টগ্রামে পুলিশের খাতায় শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদকে গত ১৫ মার্চ ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপরই প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তার স্ত্রী তামান্না শারমিনের বক্তব্যের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে তামান্নাকে বলতে শোনা যায়, আমরা কাঁড়ি কাঁড়ি, বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছেড়ে আমার জামাইকে নিয়ে আসব। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।
ভিডিওতে ১৭ মামলার আসামি সাজ্জাদ হোসেনকে ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে জামিনে ছাড়িয়ে আনবেন বলে জানান স্ত্রী তামান্না শারমিন। তিনি বলেন, আমার জামাই গ্রেপ্তার হয়েছে, এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। মামলা যখন আছে, গ্রেপ্তার হবেই। আপনারা যারা ভাবতেছেন, আর কোনোদিন বের হবে না, তাদের জন্য এক বালতি সমবেদনা।’
প্রতিপক্ষকে হুমকি দিয়ে তামান্না বলেন, এত দিন আমরা পলাতক ছিলাম, এখন তোমাদের পলাতক থাকার পালা শুরু। খেলা শুরু হবে এখন।
এর আগে, গত ৩০ জানুয়ারি সাজ্জাদকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ। ঠিক তার আগের দিন নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি আরিফুর রহমানকে ফেসবুক লাইভে এসে হুমকি দেন সাজ্জাদ হোসেন।
পুলিশ জানায়, ফেসবুকে লাইভে চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসিকে বিবস্ত্র করে পেটানোর হুমকি দেন সাজ্জাদ। লাইভে সাজ্জাদ আরও বলেন, ‘ওসি আরিফ দেশের যে প্রান্তেই থাকেন না কেন, তাকে নগরের অক্সিজেনে ধরে এনে পেটানো হবে। প্রয়োজনে মরে যাব, কিন্তু হার মানব না।’ এ ছাড়া পুলিশ কমিশনারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ওসি আরিফ চাঁদাবাজিসহ আমার সন্তান হত্যায় জড়িত, তাকে যাতে বদলি করা হয়।’ পরে এ ঘটনায় ওসি আরিফুর রহমান থানায় জিডি করেন। পরে তার অবস্থান সংক্রান্ত তথ্য পুলিশকে দিতে পারলে তথ্যদাতাকে উপযুক্ত অর্থ পুরস্কার ঘোষণা করেন নগর পুলিশের কমিশনার।
গত বছরের ১৭ জুলাই অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে একবার গ্রেপ্তার করে চান্দগাঁও থানা-পুলিশ। কিন্তু, পরের মাসেই জামিনে বের হন তিনি। এরপর ৪ ডিসেম্বর নগরের অক্সিজেন এলাকায় পুলিশ ধরতে গেলে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যান তিনি। এতে পুলিশসহ পাঁচজন আহত হন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।