জুমবাংলা ডেস্ক : এবারের ঈদযাত্রায় মোট ১৯৫৬টি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৬১২ জন। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩২৪ জন।
এছাড়া যাত্রাপথে বিভিন্ন ধরনের ভোগান্তিতে পড়েছেন ৯৬ লাখ মানুষ। ‘সেভ দ্য রোড’ নামে একটি সংগঠনের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
যার সবশেষ উদাহরণ ময়মনসিংহের দুর্ঘটনাটি। রাস্তা পারাপারের সময় ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে গর্ভের সন্তান বেরিয়ে আসে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর। ঘটনাস্থলেই সেই নারী ও তার স্বামী মারা যান। তাদের ছয় বছর বয়সী আরেক সন্তানও হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যায়। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা ময়মনসিংহের ত্রিশালের।
শনিবার (১৬ জুলাই) দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল কোট বিল্ডিং সংলগ্ন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত হন ত্রিশাল উপজেলার রাইমনি গ্রামের ফকির বাড়ির মোস্তাফিজুর রহমান বাবলুর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৪০), তার স্ত্রী রত্না (৩০) ও মেয়ে সানজিদা (৬)। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী তাজ ও মাহী এন্টারপ্রাইজের একটি মালবাহী ট্রাক (ঢাকা মেট্রো ট ২০৩৫৮০) রাস্তা পারাপারের সময় তাদের চাপা দেয়। চালক ও হেলপার পলাতক।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবারের ঈদে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ ঈদযাত্রা করেন। যার মধ্যে ৯৬ লাখ মানুষ সড়ক, রেল ও নৌপথে চরম ভোগান্তি সহ্য করে ২ থেকে ৪ গুণ পর্যন্ত বেশি ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করেছে। বাকি ২৯ লাখ মানুষ নিজস্ব বাহন বা অন্য কোনো আরামদায়ক বাহনে যাতায়াত করলেও রেলের ছাদে চড়ে বাড়িতে গিয়েছে প্রায় অর্ধ লাখ মানুষ। যাদের আবার সহ্য করতে হয়েছে রেল কর্তৃপক্ষের লাঠির আঘাত, থাকতে হয়েছে বগিতে বন্দি দিনের অধিকাংশ সময়।
এখানেই শেষ নয়, ছিল মোটরসাইকেলের ‘মুভমেন্ট পাশ’ নামের উদ্ভট সিদ্ধান্তও। মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ির পথে যেতে না পারায় অনেকেই অ্যাম্বুলেন্স-মাইক্রোবাস-ভাড়ায় চালিত প্রাইভেট কার এমনকি কোরবানির পশুবহনকারী পিকআপ-ভ্যান-ট্রাকে করেও পাড়ি দিয়েছেন যাত্রাপথের সবটুকু দূরত্ব। এসব বাহনে নির্মমভাবে কোরবানির পশুর মতো গাদাগাদি করেও বাড়িতে যেতে হয়েছে প্রায় কয়েক লাখ মানুষকে।
জানা গেছে, দ্রুত গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর পাশাপাশি নিয়ম না মানা এবং হেলমেট ব্যবহারে অনীহার কারণে ৪১৮টি দুর্ঘটনায় আহত ৩৬৮ এবং নিহত হয়েছে ৫৫ জন; যার অধিকাংশই বাইক লেন না থাকার কারণে প্রাইভেট কার, ট্রাক, বাস-মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন বাহনের পেছন থেকে ধাক্কা দেওয়ার কারণে ঘটেছে।
কোনো রকম বিরতি না নিয়ে টানা ট্রাক চালানোর কারণে অসাবধানতা ও ঘুমন্ত চোখে-ক্লান্তি থাকায় প্রসূতি মায়ের মতো ৮৮ জন নিহত হয়েছেন ৫০২টি দুর্ঘটনায়; আহত হয়েছেন ১৭৪ জন। চরমভাবে অচল রাস্তা-ঘাট আর সড়কপথ নৈরাজ্যের কারণে ৫১১ টি বাস দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৬৩৬ জন এবং নিহত হয়েছেন ১০২ জন।
পাড়া-মহল্লা-মহাসড়কে অসাবধানতার সাথে চলাচলের কারণে লড়ি-পিকআপ-নসিমন-করিমন-ব্যাটারি চালিত রিকশা-বাইসাইকেল ও সিএনজি দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫২৫টি আহত হয়েছেন ৪৩৪ জন এবং ৭৯ জন নিহত হয়েছেন।
এছাড়াও ৫ থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত নৌপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ৯৬টি। আহত হয়েছেন ১২৭ জন, নিহত হয়েছেন ১৭ জন। প্রায় অর্ধ লক্ষ মানুষ রেলপথে চরম ভোগান্তি সহ্য করে চলাচলে যেমন ভোগান্তি সহ্য করেছে, ছাদ থেকে পড়ে, অসচেতনতা বশত রেল ক্রসিং-এ দুর্ঘটনা ঘটেছে ১২২টি। আহত হয়েছেন ২১২ জন, নিহত হয়েছেন ১১ জন।
জানা গেছে, আকাশপথে দুর্ঘটনা ঘটলেও যাত্রী না থাকায় কোনো নিহত নেই, তবে ১টি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের দুটি বিমান, আহত হয়েছেন ৩ জন। এছাড়াও বিমানবন্দরের অব্যবস্থাপনার কারণে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে ২৭ জনকে।
সেভ দ্য রোড-এর মহাসচিব শান্তা ফারজানা বলেন, প্রতিবেদনে ২৪টি জাতীয় দৈনিক, ১৭টি অনলাইন নিউজপোর্টাল এবং ২১টি টিভি-চ্যানেলের পাশাপাশি সেভ দ্য রোড-এর চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনাম, সেভ দ্য রোড-এর প্রতিষ্ঠাতা মোমিন মেহেদীসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সক্রিয় স্বেচ্ছাসেবকদের প্রাপ্ত তথ্যে এটি তৈরি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ৩৭ লাখ ৫৩ হাজার নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের মালিক; যারা ভ্যাট-ট্যাক্সসহ বিভিন্নভাবে বাংলাদেশ সরকারের রাজস্বকে সমৃদ্ধ করছে। উপরন্তু, বাইক বন্ধ করেও কিন্তু দুর্ঘটনা সেভাবে রোধ করা যায়নি। আমরা এসব মানুষের কথা চিন্তা করে যৌক্তিক বিবেচনায় বাইকের ওপর বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করার জন্য সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।