জুমবাংলা ডেস্ক : জাকসু সচলসহ ক্যাম্পাসে সকল দলের অংশগ্রহণে সুস্থধারার রাজনীতির দাবি জানিয়ে সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ছাত্রশিবির। এতে প্রায় ৩৫ বছর পর জাবিতে ফের প্রকাশ্যে এল সংগঠনটি৷ সর্বশেষ ১৯৮৯ সালে ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে রাজনীতি করেছে ছাত্রশিবির৷ তবে প্রকাশ্যে আসার পর ছাত্রশিবিরকে ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ সংগঠন উল্লেখ করে বিক্ষোভ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা৷
জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি হয়েছেন হারুনুর রশিদ রাফি। তিনি ২০১৬-১৭ সেশনের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী। সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন মুহিবুর রহমান মুহিব। তিনি ২০১৭-১৮ সেশনের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। অপরদিকে প্রচার সম্পাদক হয়েছেন আব্দুল্লাহ আল মামুন সাকি। তিনি ২০১৭-১৮ সেশনের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো শাখা ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন সাকি স্বাক্ষরিত এক যৌথ বিবৃতিতে জাকসু সচলসহ সুস্থধারার রাজনীতির দাবি জানায় সংগঠনটি৷
বিবৃতিতে বলা হয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সকল দলের অংশগ্রহণে সুস্থ ধারার রাজনৈতিক চর্চার পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। মঙ্গলবার এক যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি হারুনুর রশিদ রাফি ও সেক্রেটারি মহিবুর রহমান মুহিব এই দাবি জানান।
যৌথ বিবৃতিতে সভাপতি-সেক্রেটারি বলেন, ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে সুস্থ ধারার রাজনীতিকে এগিয়ে নিতে ছাত্রশিবির সর্বদা প্রস্তুত। আবাসিক হলগুলোতে কোন ধরনের দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজি, মাদকের বিস্তার রোধে ছাত্রশিবির অঙ্গীকারবদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ আনয়ন, গবেষণামুখী শিক্ষাব্যবস্থার বাস্তবায়ন, সুস্থ ধারার সংস্কৃতির বিকাশ ও নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে ছাত্রশিবির কাজ করে যাবে। ছাত্রশিবির চায় ছাত্র সংসদ কেন্দ্রিক সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরে আসুক।
১৯৮৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে শিবিরকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি প্রোপাগান্ডা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন নেতৃবৃন্দ। তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ছাত্রশিবিরকে আদর্শিক ভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে নিষিদ্ধের একটি বয়ান তৈরি করে এসেছে। আদতে এই বয়ানের কোনো সত্যতা নেই। ১৯৮৯ সালের ১৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ১৪২তম সভায় শিবির নিষিদ্ধের প্রস্তাবনা আসলেও এরকম কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। বরং সভার সিদ্ধান্ত ছিল ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাবহির্ভূত বিধায় এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব নয়। কোনো মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারে না। ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধকরণ ও ট্যাগিং রাজনীতি মূলত ফ্যাসিবাদ কায়েমের সহায়ক শক্তি হিসেবেই কাজ করেছে।
এদিকে, প্রকাশ্যে আসার পর ছাত্রশিবিরকে ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ সংগঠন উল্লেখ করে বিক্ষোভ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা৷
মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। পরে মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে করে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এসে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়৷
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী তামিম স্রোতের সঞ্চালনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৭ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী অমর্ত্য রায় বলেন, ১৯৭১ এবং ২০২৪, এই দুই সালকে যারা অস্বীকার করবে তাদেরকে কখনোই জনগণ ক্ষমা করবে না। আজকে দেখলাম শিবির যে প্রেস রিলিজ দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে সেখানে মিথ্যাচার করেছে। কবির, দিপু হত্যা, হুটহাট সশস্ত্র আক্রমণ এগুলো নিয়ে শিবির কখনো ক্ষমাপ্রার্থী হয় না। ছাত্র শিবিরকে কোনদিন দেখিনি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আন্দোলন করতে, কোনদিন কি ওরা শ্রমিক হত্যা নিয়ে আন্দোলন করেছে? তারা সবসময় শাহবাগ আর শাপলা ভাগাভাগি করতে ব্যস্ত। এরকম বিভাজনের রাজনীতি করে আওয়ামী লীগ। যে রাজনৈতিক দলের হাতে রক্তের দাগ রয়েছে সেই সংগঠনকে রাজনীতি করতে হলে বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসতে হবে। সেটা সামাজিক বিচারও হতে পারে, আইনি বিচার হতে পারে। এজন্য তাদেরকে ১৪ হাজার শিক্ষার্থীর কাছে ক্ষমা চেয়ে তাদেরকে ক্যাম্পাসে আসতে হবে।
রোমান্সের দৃশ্যে ভরপুর এই ওয়েব সিরিজ, ভুলেও বাচ্চাদের সামনে দেখবেন না
নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাইজা মেহজাবিন বলেন, আশির দশকেও ছাত্রশিবির একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিকৃষ্টতম কার্যক্রম চালিয়েছে। এখন আবারও তারা পূর্নবাসিত হওয়ার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। আমরা বারবার সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে প্রতিহত করে এসেছি। যার ফলশ্রুতিতে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ছাত্রশিবিরকেও এদেশের ছাত্র-জনতা মেনে নেবে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।