লাইফস্টাইল ডেস্ক : যেহেতু শীতকালে আমাদের শরীর শুকিয়ে যায়, তাই মাথার ত্বক তার সঞ্চিত তেল সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার করে, যার ফলে চুল শুষ্ক, ভঙ্গুর এবং খসখসে হয়ে যায়।
নভেম্বরের ভোর মানেই হালকা ঠান্ডা বাতাস আর দিনের বেলা আরামদায়ক উষ্ণতা, যা শীত আসছে বলে ইঙ্গিত দেয়। বাতাসে হঠাৎ একটি ঠান্ডা ঝাপটা সত্যিই আরামদায়ক, এই ঠান্ডা বাতাসের ঝাপটা শীতের অনুভূতিকে আরো গাঢ় করে। তবে এই পরিবর্তনটি আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। এই সময়ে মানুষ কাশি, সর্দি, গলাব্যথা ইত্যাদি সাধারন শারীরিক সমস্যা প্রতিরোধে অতিরিক্ত সতর্ক থাকে। কিন্তু আমরা হর হামেশাই যা উপেক্ষা করি তা হল আমাদের ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্য, যা এই ঋতুতে স্বাভাবিকের চেয়ে শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। শীত যতই ঘনিয়ে আসে, আমাদের চুল শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যায়, তার উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফেলে। কিন্তু মন খারাপ করবেন না! এই ঋতুতে স্বাস্থ্যকর, চকচকে এবং মসৃণ চুল পেতে আপনার জন্য আমাদের কাছে কিছু আশ্চর্যজনক টিপস রয়েছে। আপনাকে যা করতে হবে তা হল আপনার ডায়েটে কিছু মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে।
শীতকালে চুলের যত্ন
শীতকালে চুল কেন শুষ্ক হয়ে যায়?
বিশেষজ্ঞদের মতে শীতের শুষ্ক আবহাওয়া সরাসরি আমাদের চুলকে প্রভাবিত করে। আমাদের চুলের কোন প্রাকৃতিক তৈলাক্তকরণ পদ্ধতি নেই তাই পুষ্টি বজায় রাখার জন্য এর গোড়ায় উৎপাদিত তেলের উপর অনেক বেশি নির্ভর করে। যেহেতু শীতকালে আমাদের শরীর শুকিয়ে যায়, তাই মাথার ত্বক তার সঞ্চিত তেলকে সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার করে, যার ফলে চুল শুষ্ক, ভঙ্গুর এবং খসখসে হয়ে যায়। এই কারনে মাথার ত্বকে খুশকিও তৈরি হয়ে থাকে।
শুষ্ক এবং ভঙ্গুর চুল প্রতিরোধ করার জন্য ৪টি ডায়েট টিপস
যখন আমরা চুলের যত্ন নিয়ে কথা বলি তখন আপনার মাথায় প্রথম জিনিসটি কী আসে? আমরা বাজি ধরতে পারি যে আমাদের বেশিরভাগেরই তাত্ক্ষণিকভাবে প্রয়োগের জন্য ব্যয়বহুল চুলের যত্নের বিভিন্নরকম পণ্যের কথা মাথায় আসে। ভয়ের কিছু নেই, আমরা আপনার রুটিন থেকে তেল, শ্যাম্পু এবং সিরাম বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি না, আমরা কেবল আপনার চুলকে আর্দ্র এবং স্বাস্থ্যকর রাখতে আপনার ডায়েটে কিছু মৌলিক পরিবর্তন করার পরামর্শ দিতে যাচ্ছি। চলুন তাহলে শুরু করিঃ
১। পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করুন
শীতকাল এলেই আমরা পর্যাপ্ত পানি পান করার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপেক্ষা করা শুরু করি। তবে নিঃসন্দেহে এটা খুব বড় ভুল কাজ। হাইড্রেটেড থাকার জন্য এবং কোষ ও টিস্যুতে অক্সিজেন সরবরাহকে উন্নত করার জন্য শরীরে প্রয়োজনীয় পানির ভারসাম্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ন, যা চুলের স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধির জন্যেও অনেক গুরুত্বপূর্ন।
২। মৌসুমি খাবার গ্রহন করুন
ষড় ঋতুর এই বাংলাদেশে বিভিন্ন মৌসুমে বিভিন্ন রকমের ফল ও সবজি বাজারে পাওয়া যায়। এই প্রতিটি মৌসুমি ফল ও সবজির বিশেষ বিশেষ পুষ্টিগুন রয়েছে। আপনি যদি গুগলে সার্চ করেন তাহলে খুব সহজেই শীত মৌসুমের বিশেষ খাবারের তালিকা পেয়ে যাবেন এবং সেগুলোকে কেন আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে অন্তর্ভূক্ত করবেন তাও জানতে পারবেন। এই মৌসুমি খাবারগুলো প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং আমাদের পুষ্টি জোগায়। তবে আপনি জানেন কি, এই খাবারগুলো আমাদের চুলের জন্যেও অনেক উপকারী। ভারতের বিখ্যাত নারায়ন হেলথ এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের একটি ব্লগ অনুসারে আপনার চুলকে সুস্থ রাখার অন্যতম সেরা ও সহজ উপায় হল মৌসুমি ফল এবং শাকসবজিতে ভরপুর একটি সঠিক ডায়েট অনুসরণ করা। এই খাবারগুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং খনিজে সমৃদ্ধ এবং চুলের সকল সমস্যা দূর করে ঝলমলে ও উজ্জ্বল করে তোলে।
৩। অ্যালকোহল পান হতে বিরত থাকুন
যদিও আমাদের দেশে অ্যালকোহলে আসক্তি তেমন একটা চোখে পড়ার মত নয় তবে শ্রেনীভেদে যে একেবারেই অ্যালকোহল পান চোখে পড়ে না তা কিন্তু নয়। আর শীতকালে যেহেতু বিভিন্ন রকম উৎসব, বিয়ে, পার্টি ইত্যাদি বেশী হয় তাই অ্যালকোহল পানের পরিমানও বাড়তে পারে। ভারতীয় পুষ্টিবিদ রুপালী দত্ত বলেন যে, নিয়মিত বা অতিরিক্ত অ্যালকোহল পানের ফলে শরীরে তরল ক্ষয় হয় এবং ভেতর থেকে শরীর ডিহাইড্রেড হয়। এটি টক্সিনের উৎপাদন বাড়ায় যা আমাদের চুল সহ সামগ্রিক স্বাস্থ্যকেই প্রভাবিত করে।
৪। ভাজা খাবার খাওয়া কমিয়ে দিন
নারায়ন হেলথের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের ব্লগে আরও বলা হয়েছে যে, স্বাস্থ্যকর খাবারের পাশাপাশি ভাজা এবং উচ্চ-ক্যালরিযুক্ত খাবারের ব্যবহার সীমিত করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আরামদায়ক শীতের ঋতু প্রায়ই আমাদের মুচমুচে, তেলে ভাজা খাবার খেতে প্রলুব্ধ করে। আমরা প্রায়ই ভাজা, চর্বিযুক্ত, এবং চিনিতে ভরপুর খাবারগুলো বেছে নিই যা এই ঋতুতে জনপ্রিয়। এই শীতকালীন উপাদেয় খাবারগুলো উপভোগ করা ঠিক আছে; শুধু মনে রাখবেন যে সংযম অতি জরুরী। অতিরিক্ত কিছু খাওয়া মানবদেহে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বাড়াতে পারে, ত্বক ও চুলের কোষে রক্ত ও অক্সিজেনের নিয়মিত সঞ্চালনকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই শীতে মুচমুচে তেলে ভাজা খাবার ও অতিরক্ত মিষ্টি পিঠাপুলি হিসাব করে খেতে হবে।
পরিশেষে, আপনার শীতকালীন খাদ্যতালিকায় এই সাধারণ পরিবর্তনগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করুন এবং পুরো ঋতু জুড়ে চুলকে মসৃণ ও স্বাস্থ্য উজ্জ্বল রাখুন। তবে মনে রাখবেন এই ডায়েট আপনার চুলকে ভেতর থেকে পুষ্টি জোগাবে। আর চুলকে ভাল রাখতে বাইরের যত্নও জরুরি তাই নিয়মিত চুলের যত্নও চালিয়ে যেতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।