লাইফস্টাইল ডেস্ক : টাকা জমানো কিংবা খরচ করার জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নিরাপদ ও স্মার্ট পদ্ধতি। টাকা আয় ও ব্যয় করেন এমন অধিকাংশ মানুষেরই একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তবে আপনার আসলে ঠিক কতগুলো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকা উচিত?
পার্সোনাল ফাইন্যান্স এক্সপার্ট ও ‘দ্য বাজেটনিস্তা’ বইয়ের লেখিকা অ্যালিসে’র মতে, উত্তরটি খুবই সহজ! ‘ওয়ান ইউনাইটেড ওয়ান ট্রানজেকশান’ নামক এক কনফারেন্সে তিনি বলেন, ৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রাখাটা ভালো- চেকিং অ্যাকাউন্ট, চেকিং অ্যাকাউন্ট, সেভিংস অ্যাকাউন্ট, সেভিংস অ্যাকাউন্ট।
বিল পরিশোধের জন্য চেকিং অ্যাকাউন্ট
অ্যালিসে বলেন, প্রথমত একটি অ্যাকাউন্টকে চেকিং অ্যাকাউন্ট হিসেবে রাখুন বিল পরিশোধের জন্য। এই অ্যাকাউন্টের টাকা আপনি বাড়ি ভাড়া, ইউটিলিটি, ইন্সুরেন্স, ব্যাংক লোনসহ যাবতীয় বিল পরিশোধের জন্য খরচ করবেন।
অ্যালিসে এই অ্যাকাউন্টের কোনো ডেবিট কার্ড না নেওয়ার পরামর্শ দেন। এভাবে আপনি এই অ্যাকাউন্টের টাকা অন্য কোনো কাজে ব্যয় করতে পারবেন না। অন্য কাজের জন্য আপনি অন্য চেকিং অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করবেন।
অন্যান্য ব্যয়ের জন্য চেকিং অ্যাকাউন্ট
বিল ব্যতীত অন্যান্য যাবতীয় ব্যয়ের জন্য আপনি এই অ্যাকাউন্টটি ব্যবহার করবেন। এর মাধ্যমে আপনি বিনোদন, রেস্টুরেন্টে খাওয়া, গিফট প্রদান অথবা পরিবার বা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে যেকোনো উদযাপনের জন্য ব্যয় করতে পারেন।
এই অ্যাকাউন্টের জন্য আপনি একটি ডেবিট কার্ড ব্যবহার করবেন। কারণ, এই অ্যাকাউন্টের টাকা আপনি যেকোনো সময় ব্যয় করার জন্যই রেখেছেন।
জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য সেভিংস অ্যাকাউন্ট
এই অ্যাকাউন্ট হবে আপনার ইমার্জেন্সি ফান্ড। অর্থাৎ কখনো অপ্রত্যাশিত কোনো খরচ সামনে এসে পড়লে ব্যয় করার জন্য সঞ্চিত অর্থ। আপনার চাকরি চলে যেতে পারে বা গাড়ি নষ্ট হয়ে যেতে পারে অথবা অসুস্থতার কারণে হাসপাতালের বিল দিতে হতে পারে। এই সঞ্চিত টাকাগুলো আপনি শুধুমাত্র জরুরি কোনো প্রয়োজন ছাড়া খরচ করবেন না। তাই এই টাকাগুলোকে সাধারণ খরচের টাকা থেকে আলাদা করে একটি নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তিন থেকে ছয় মাসের খরচের সমপরিমাণ অর্থ এই অ্যাকাউন্টে রাখা উচিত।
অন্যান্য লক্ষ্য পূরণের সেভিংস অ্যাকাউন্ট
আপনার জীবনের বড় কোনো লক্ষ্য থাকতে পারে, যার জন্য হয়তো অনেক টাকা গচ্ছিত রাখা প্রয়োজন। গাড়ি কেনা, বাড়ি কেনা অথবা বিদেশ ঘুরতে যাওয়ার জন্য একসঙ্গে অনেক টাকা সঞ্চয়ের জন্য আপনি আলাদা একটি অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে পারেন। কোনো ব্যাংক যদি আপনার ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য পূরণের সঞ্চয়ের সুবিধা থাকে, তাহলে সেখানে এ ধরনের একটি অ্যাকাউন্ট খুলে আলাদা আলাদা লক্ষ্যের জন্য অর্থ সঞ্চয় করা উচিত।
৪টি অ্যাকাউন্ট যেভাবে ম্যানেজ করবেন
অ্যালিসে বলেন, ‘পাওয়ার আগে ভাগ করে ফেলো’। যদি আপনার বেতনের টাকা সরাসরি আপনার অ্যাকাউন্টে জমা করার সুযোগ থাকে তাহলে আপনি উর্ধ্বতনকে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী চারটি অ্যাকাউন্টে টাকা ভাগ করে জমা করার জন্য বলতে পারেন। যেমন- আপনি ৩৫ শতাংশ বা প্রয়োজনীয় অংশ বেতন বিল চেকিং অ্যাকাউন্টে নিতে পারেন, ২০ শতাংশ খরচের অ্যাকাউন্টে, ২০ শতাংশ ইমার্জেন্সি ফান্ড অ্যাকাউন্টে এবং ১৫ শতাংশ সেভিংস অ্যাকাউন্টে নিতে পারেন। আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী কমবেশি করে ভাগাভাগি করে নিতে পারেন।
টাকা অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার আগে ভাগ করে নেওয়ার ফলে আপনি যথেচ্ছ খরচ করে অন্য অংশের টাকায় হাত দেয়া থেকে রেহাই পাবেন। এছাড়া সঞ্চয়ের টাকা খরচ করতে না হওয়ায় আপনি আপনার শখগুলো পূরণে আরো বেশি মনোযোগী হতে পারবেন।
টাকা পাওয়ার আগে ভাগাভাগি করার জন্য আপনাকে কিছু হিসাব মাথায় রাখতে হবে। প্রতি মাসে আপনাকে কত টাকা বিল পরিশোধ করতে হয়, কত টাকা ইমার্জেন্সি ফান্ডে রাখতে চান, কতটাকা দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয় করতে চান তার একটি আনুমানিক হিসাব করুন।
অফিস যদি বেতনের টাকা এভাবে ভাগ করে জমা করার সুবিধা না দেয় সেক্ষেত্রে অ্যালিসে একটি খুব সাধারণ সমাধান জানিয়েছেন। আর সেটা হলো, বেতনের টাকা একটি অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার পর, আপনি আপনার হিসাবমতো প্রত্যেকটি অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করে নিন। অ্যালিসে মনে করেন, এই ‘চার অ্যাকাউন্ট পদ্ধতি’ হলো বাজেটের জন্য সবচেয়ে সহজ ও ফলপ্রসূ পদ্ধতি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।