জুমবাংলা ডেস্ক : চার বছর পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) মর্গ থেকে মার্কিন নাগরিক রবার্ট মাইরন বার্কারের লাশ হস্তান্তর করেছে ঢামেক মর্গ কতৃপক্ষ। আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে পুলিশের সহযোগিতায় মার্কিন দূতাবাসের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। মর্গ মুক্ত হওয়ার পর দুপুরে বার্কারের লাশ গাজীপুরের একটি চার্চে ধর্মীয় রীতিতে সত্কার করা হয়।
এ সময় দক্ষিণখান থানা পুলিশ, বার্কারের দ্বিতীয় স্ত্রী মাজেদা খাতুন ও আমেরিকান দূতাবাসের দুইজন প্রতিনিধিসহ খ্রিস্টান ধর্মাম্বলীর লোকজন উপস্থিত ছিলেন। বার্কার মার্কিনি হওয়ায় তাঁর বাংলাদেশী স্ত্রী নানা জটিলতায় এতদিন লাশ সৎকারের অনুমতি পাননি বলে জানা গেছে।
দক্ষিণখান থানার ওসি (তদন্ত) আজিজুল হক মিয়া বলেন, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে আমি জানতে পারি ২০১৮ সাল থেকে মর্গে লাশুটি পড়ে আছে। এরপর জিডি ধরে তদন্ত শুরু করি। প্রথমে জিডি ধরে আমেরিকান দূতাবাসে নাগরিক সার্ভিস সেবা সেন্টারে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানাই। তারাও বিষয়টি অবগত আছেন বলে জানান। এক পর্যায়ে দূতাবাস থেকে লাশ হস্তান্তরের বিষয়ে বার্কারের আমেরিকায় পরিবারে চিঠি পাঠানো হয়। বার্কারে প্রথম স্ত্রী এখন বেঁচে নেই। ছেলে দূতাবাসকে জানান লাশের বিষয়ে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। তাই লাশ নিবেন না।
ওসি আরো বলেন, প্রথম স্ত্রীর সন্তান লাশ নিতে অপরাগ থাকলে খুঁজতে থাকি বার্কারের দ্বিতীয় স্ত্রীকে মাজেদা খাতুনকে (৫০)। তিনি প্রথম যে কমিউনিটি হাসপাতালে চাকরি করতেন, সেখানে গিয়ে জানতে পারি তিনি অন্য হাসপাতালে চাকরি করেন। পরে সেখানে গিয়েও মাজেদাকে পাওয়া যায়নি। কারণ তার মোবাইল নাম্বার কারো কাছে পাচ্ছিলাম না। তাই তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে সময় লেগেছে। অবশেষে একটি মোবাইল নাম্বার পেয়ে দক্ষিণখান থানায় মাজেদা খাতুনকে আসতে বলি। থানা এসে তিনি জানান তার আর্থিক অবস্থা ভালো না। লাশ আনবে কীভাবে? এত দিনের মর্গ বিলসহ অন্যান্য খরচ জোগানোর মত তাঁর সামর্থ্য নাই। সে কথা শুনে আমেরিকান দূতাবাসের মাধ্যমে সম্পূর্ণ ব্যয় বহন করাসহ অনুমতি সাপেক্ষে লাশ হস্তান্তর করা হয়।
জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বার্কার ২০০৫ সালে একটি বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি হয়ে বাংলাদেশে আসেন। এক বছর পর উত্তরার একটি কমিউনিটি হাসপাতালে মাজেদা বেগম নামের একজন নারীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। পরে ২০১৪ সালে বাড্ডার একটি গির্জায় মাজেদাকে বিয়ে করেন তিনি। এটি বার্কার ও মাজেদা উভয়ের দ্বিতীয় বিয়ে ছিল। এরপর হৃদরাগে আক্রান্ত হয়ে ২০১৮ সালের ২৫ মে দক্ষিণখানের একটি হাসপাতালে মারা যান রবার্ট বার্কার (৭৮)। বিদেশি নাগরিক হওয়ায় তাঁর তার লাশ এই দেশে সত্কার করা যাচ্ছিল না। এজন্য দূতাবাসের ছাড়পত্র প্রয়োজন, যেটা পাওয়া যাচ্ছিল না। মৃত্যুর ঘটনায় দক্ষিণখান থানায় একটি জিডি করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢামেক হাসপাতালে আনা হয়। শেষে মরদেহ হিমঘরে রাখা হয়। পরে মাজেদা খাতুন লাশ যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠাতে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস সঙ্গে বারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। বার্কারের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেও ব্যর্থ হয়েছেন।
লাশ হস্তান্তরে বিষয়ে ঢামেক মর্গ সহকারী সেকান্দর বলেন, অনেকদিন হলো বার্কাকের লাশটি মর্গে পড়ে ছিল। পুলিশের চেষ্টায় অবশেষে মর্গ মুক্ত হলো লাশটি। বার্কারের লাশের মতো আরো দুটি লাশ নানা জটিলতায় কয়েক বছর ধরে মর্গে পড়ে আছেন বলে জানান সেকান্দর।
বার্কারের স্ত্রী মাজেদা খাতুন বলেন, এতদিন পরে বার্কারের মরদেহ দাফন করতে পেরে মনে হচ্ছে অনেক শান্তি ও স্বস্তি পাচ্ছি। পুলিশ এবং আমেরিকান দূতাবাসকে অসংখ্যা ধন্যবাদ। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এদিকে বার্কারের যুক্তরাষ্ট্রে তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন মাজেদা।
বর্তমানে মাজেদা কিভাবে সময় অতিবাহিত করছেন জানতে চাইলে বললেন, এখনও একটি হাসপাতালে কর্মী হিসেবে কাজ করেন। তবে আর্থিকভাবে সচ্চল না। কোনোভাবে দিন কাটাচ্ছেন। আমেরিকা দূতাবাস থেকে তাঁকে কিছু আর্থিক সহায়তা করবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলে জানান মাজেদা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।