জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের উত্তরাঞ্চলের চার জেলা দিনাজপুর, রাজশাহী, নাটোর ও পাবনায় এই মৌসুমে এক হাজার ১০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে। চার জেলার কৃষি দপ্তর থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এরই মধ্যে গাছ থেকে নামানো শুরু হয়েছে মাদ্রাজি ও মোজাফফরি লিচু। বেচাকেনাও জমে উঠেছে।
করোনার কারণে দুই বছর লাভের মুখ দেখেননি কৃষকরা। তাঁরা এখন ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। লিচুর রাজ্যখ্যাত দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, মাদ্রাজি, বোম্বাই ও মোজাফফরি আগাম জাতের লিচু। আহরণের সময়কাল ২০ মের পর থেকে। বেদানা জাতের লিচু আহরণের সময় জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ। আর নাবি জাতের লিচু হচ্ছে চায়না-৩ ও কাঁঠালি। এসব লিচু আহরণের সময় জুনের শেষ সপ্তাহ। এরই মধ্যে গাছে গাছে টসটসে লিচু লাল রং ধারণ করতে শুরু করেছে। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে গাছ থেকে লিচু পাড়া শুরু হয়। পাড়া হচ্ছে মাদ্রাজি ও মোজাফফরি লিচু। দিনাজপুর গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে বসেছে লিচুর অস্থায়ী বাজার।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. খালেদুর রহমান জানান, গত বছর দিনাজপুর জেলায় পাঁচ হাজার ৪৮১ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ করা হয়। ফলন হয়েছিল ২৮ হাজার মেট্রিক টন। এবার পাঁচ হাজার ৬১০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর লিচু বিক্রি হয়েছে ৫৭৫ কোটি টাকার। এবার তা বেড়ে ৬১৬ কোটি টাকা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
দিনাজপুর সদরের মাশিমপুর ও বিরল উপজেলার মাধবমাটি গ্রাম ঘুরে জানা গেছে, এই দুই গ্রামে উৎপাদিত মাদ্রাজি, বেদানা, বোম্বাই, চায়না-৩, কাঁঠালিসহ সব লিচু রসগোল্লা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এরই মধ্যে মাদ্রাজি ও মোজাফফরি লিচু বাজারে উঠতে শুরু করেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে লিচু পুরোপুরি লাল রং ধারণ করলেই বেদেনা, বোম্বাই লিচু পুরোদমে ভাঙা শুরু হবে। চায়না-৩ ও কাঁঠালি লিচু আসবে সবার পরে।
মাশিমপুর গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কয়েক বছর ধরে লিচুর আবাদ করছি। কিন্তু গত দুই বছর করোনার কারণে লিচুতে কিছুটা লোকসান হয়েছিল। কিন্তু এ বছর ফলন দেখে খুব ভালো লাগছে। এ বছর দামও ভালো পাব বলে আমি আশা করছি। ’
লিচু ব্যবসায়ী লিটন জানান, দিনাজপুর থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে এক হাজার যানবাহন যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এ ছাড়া কুরিয়ার এবং ট্রেনেও লিচু যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন বাজারে। স্থানীয়ভাবে বেচাকেনা তো আছেই। সব মিলিয়ে প্রতিদিন লিচুর বাজারে কমপক্ষে ১০ কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। বোম্বাই, বেদানা ও চায়না-৩ লিচু বাজারে এলে এই লেনদেন ১৫ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক মো. ইয়াসিন আলী জানান, এবার জেলায় ৯২৪ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র সাত হাজার ৮৯৭ মেট্রিক টন। আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ১১৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে গুরুদাসপুরে ৪১০ হেক্টর জমিতে তিন হাজার ৬৯০ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, যার বাজার মূল্য ৫৫ কোটি টাকা।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, রাজশাহীতে ৫১৯ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা তিন হাজার ১৪৪ মেট্রিক টন। এসব লিচুর বাজার দর ধরা হয়েছে ৪৪ কোটি টাকা।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, জেলায় এবার চার হাজার ৭৩১ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে।
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় বাণিজ্যিক আকারে বাগান দুই হাজার ৮০০ হেক্টর এবং বিচ্ছিন্নভাবে বসতবাড়িতে ৫৫০ হেক্টরে লিচুর আবাদ হয়েছে। লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৪ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, ঈশ্বরদীতে এবার লিচু বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৪ কোটি টাকা। তবে দাম কমা-বাড়া করলে লক্ষ্যমাত্রাও কম অথবা বেশি হতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।